শেষের পাতা

মৌলভীবাজারে নেই পিসিআর ল্যাব, রিপোর্ট আসতে ধীরগতি

ইমাদ উদ দীন, মৌলভীবাজার থেকে

১৪ জুলাই ২০২০, মঙ্গলবার, ৯:১১ পূর্বাহ্ন

মৌলভীবাজারে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) এ আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। গতকাল  নতুন করে আরও ২৩ জনের নমুনা রিপোর্টে করোনায় পজিটিভ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৬৮০ জনে। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকা ও সিলেট পিসিআর ল্যাবে সন্দেহভাজনদের সংগ্রহকৃত পাঠানো শরীরের নমুনা পরীক্ষা অপেক্ষমাণ রয়েছে আরও প্রায় ৩ শতাধিক রিপোর্ট। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ রিপোর্টের ধীরগতির কারণে আক্রান্তরা করোনার সংক্রমণ ছড়াচ্ছেন। এছাড়া রিপোর্ট আসতে ধীরগতি হওয়ায় জেলা থেকে প্রতিদিনই নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে কম।  জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী জানা যায়, ল্যাবে টেস্টের জন্য প্রেরণকৃত রিপোর্ট আসতে ৫-৭ দিন সময় ক্ষেপণ হচ্ছে। প্রতিদিনই গড়ে জেলার ৭টি উপজেলা থেকে  ৫০-৬০ জনের নমুনা সংগৃহীত হচ্ছে। অথচ প্রতিদিনই নতুন ও পুরাতনদের নমুনা সংগৃহীত হয়ে শুধুই অপেক্ষমাণ থাকা রিপোর্টের পরিসংখ্যান বাড়ছে। এ পর্যন্ত জেলা থেকে ৫ হাজার ২শ’ ৯৫ শ জনের নমুনা সংগ্রহ করে সিলেট ও ঢাকার পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫০৮১ জনের রিপোর্ট আসলেও বাকিগুলো অপেক্ষমাণ। এপর্যন্ত জেলায় ৬৮০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ৪০৬৩ জনের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। ৪০ জন পজিটিভ (ফলোআপ)।  সুস্থ হয়েছেন ৩৭৭ জন। করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন ১১ জন। করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে ৩৭ জনের। হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন ৩০২৭ জন। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ১০ জন। আর কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৩৩৩৯ জন।  ঠিকানা ও অবস্থান চিহ্নিত বিদেশ থেকে প্রত্যাগত ব্যক্তি (১লা মার্চ ২০২০ থেকে) ২৮৬৮ জন।
ধীরগতিতে রিপোর্ট আসা নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় এজেলার বাসিন্দাদের ক্ষোভ বাড়ছেই। আর এ কারণেই জেলায় কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জোরালো দাবি উঠেছে। ইতিমধ্যে এই দাবি বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় জাতীয় সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে।  জেলার বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এই স্মারলিপি দিয়েছে। দ্রুত দাবি বাস্তবায়ন না হলে তারা জোরালো আন্দোলন নিয়ে মাঠে নামবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা. তৌহীদ আহমদ জানান, পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এখন সারা দেশ ও বিশ্বজুড়ে এই মেশিনারিজগুলোর ব্যাপক চাহিদা থাকায় সহজেই তা পাওয়া যাচ্ছে না। তারপরও আগামী দু’-এক মাসের ভেতরে ল্যাব স্থাপন হবে বলে আমরা আশাবাদী। আমাদের তরফে সেই প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে।

মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো: ফজলুর রহমান জানান, করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে ৫ থেকে ৭ দিন লেগে যায়। অনেক রিপোর্ট এখনও অপেক্ষমাণ। বিলম্বে রিপোর্ট আসায় করোনার সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে। তাছাড়া আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য অক্সিজেনও সংকট রয়েছে। তিনি মৌলভীবাজারে দ্রুত একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপন ও অক্সিজেন সংকট উত্তরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি জানান। পাশাপাশি তিনি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও জেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রী পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের কাছে দাবি জানিয়ে ই-মেইল পাঠিয়েছেন।  জেলার সম্মিলিত সামাজিক উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি খালেদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আলীম উদ্দিন হালিম বলেন, আমরা মেডিকেল কলেজ ও পিসিআর ল্যাব’র জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

সচেতন নাগরিক ফোরাম (সনাফ) মৌলভীবাজার এর সভাপতি  মোয়াজ্জেম হোসেন মাতুক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান বেলাল জানান, প্রবাসী অধ্যুষিত এ জেলায় করোনা পরীক্ষার জন্য পিসিআর ল্যাব ও মেডিকেল কলেজ স্থাপন অতীব জরুরি। এ জেলা থেকে সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পেলেও  প্রয়োজনীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সবসময়ই উপেক্ষিত। মহামারি জমদূত করোনা পরীক্ষার জন্য প্রবাসী ও পর্যটন অধ্যুষিত এ জেলায় দ্রুত পিসিআর ল্যাব স্থাপন ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জোর দাবি জানাচ্ছি। এই দাবির পক্ষে আমরা জেলাবাসীকে নিয়ে হরতালসহ নানা কর্মসূচি পালনে মাঠের আন্দোলনে নামছি।  মৌলভীবাজারে করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দাফন-কাফন কাজে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাকরীম ফাউন্ডেশনের টিম সমন্বয়ক সাইফুল ইসলাম সরকার জুনেদ বলেন, সময় যত যাচ্ছে জেলাজুড়ে ততই বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। কারণ পিসিআর ল্যাব না থাকায় করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিরাও জানতে পারছেন না তিনি আক্রান্ত কি না। যখন জানছেন, তখন তিনি হয়তো আরও একাধিক ব্যক্তিকে তার অজান্তেই আক্রান্ত করেছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status