শেষের পাতা

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ কেমন পরীক্ষা?

পিয়াস সরকার

৮ জুলাই ২০২০, বুধবার, ৯:৩১ পূর্বাহ্ন

করোনার ধাক্কায় ধুঁকছে গোটা বিশ্ব। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বন্ধ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও অনলাইনে ক্লাস চালিয়ে নিচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এই ক্লাস নিয়ে নানা ভোগান্তির কথা জানিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা বরাবরই। এরই মাঝে চলে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মিডটার্ম পরীক্ষা। পরীক্ষা হলেও শিক্ষার্থীরা তা দিচ্ছেন নানা অসঙ্গতি নিয়ে।

গতকাল মিডটার্মের পরীক্ষা দিয়েছেন এমন বেশ কিছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, আমাদের পরীক্ষার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি করা একটি সফটওয়্যারে (ব্লেনডেট লার্নিং সেন্টার) লগ ইন করতে হয়। এরপর পরীক্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে আগে আমাদের পরীক্ষার খাতার তথ্য পূরণ করতে হয়। পরীক্ষার শুরুর পরে আমাদের প্রশ্ন দিয়ে দেয়া হয়। এরপর ৩ ঘণ্টা পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার উত্তরপত্র ফাইলে এটাস্ট করতে হয়। এটি খাতায় লিখে ছবি তুলে বা ওয়ার্ড ফাইলে লিখে এটাস্ট করতে হয়। এভাবেই নেয়া হচ্ছে পরীক্ষা।

রাজধানীর স্বানামধন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ডলার মাহমুদ। তিনি বলেন, সোমবার আমাদের প্রথম পরীক্ষা ছিলো। এটাকে পরীক্ষা না বলে শুধুই একটা প্রসেস বললে ভুল হবে না। আমাদের যে সফটওয়্যারে পরীক্ষা নেয়া হয় সেটা থেকে কোন সার্স অপশনে গেলে ধরে ফেলে। কিন্তু অন্য ডিভাইস থেকে তথ্য নিলে কোন সমস্যা হয় না।

মাঈশা হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের প্রথমে পরীক্ষার প্রশ্নটা পাই। পাবার পরে সেটা আমাদের নিজস্ব ফেসবুক গ্রুপে দেয়া হয়। এরপর আমরা ভাগ করে নেই কে কোন প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করব। একেকজন একেক প্রশ্নের উত্তর গ্রুপে দেই। সেখান থেকে নিজের মতো করে সাজিয়ে লিখি। তিনি আরো বলেন, পুরো পরীক্ষার সময় আমরা ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ কলে যুক্ত ছিলাম।

প্রশ্নের সরাসরি উত্তর ওয়ার্ডে কপি পেস্ট করলে কিংবা ছবি তুলে দিলে ধারার ক্ষমতা রাখে এই সফটওয়্যার। সেক্ষেত্রে তারা কিভাবে কী করেছেন প্রশ্নের উত্তরে নাম প্রকাশে একজন শিক্ষার্থী বলেন, আমরা এরজন্য গুগল থেকে প্রথমে কপি করি। কপি করবার পর এটিকে গুগল ট্রান্সলেটরে দিয়ে বাংলা কিংবা অন্য যেকোন ভাষায় ট্রান্সলেট করি। এরপর আবার সেটিকে কপি করে ইংলিশ করি যার ফলে আর কপি পেস্ট ধরবার সুযোগ থাকে না। এরপর সেটি যাতে সবার এক না হয় তাই নিজের মতো করে লিখি। অনেক সময় শব্দ বা বাক্য একটু ঘুরিয়ে লিখি।

আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী আশিক রহমান বলেন, আমারা নিজেদের মধ্যে সার্বক্ষণিক কলে যুক্ত ছিলাম। আমরা বন্ধুর উত্তর পত্র লিখে পর্যন্ত দিয়েছি। আমার এক বন্ধু প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারছিলো না। তাকে আমি উত্তর লিখে দেই ম্যাসেঞ্জারে। সেটাকে কপি করে তার ফাইলের সঙ্গে এটাস্ট করে দিয়েছে। এর মাধ্যমে ধরবার কোন উপায় ছিলো না। বন্ধুর পাসওয়ার্ড নিয়ে তার উত্তরপত্র সাবমিটও করেছে অনেকে।
এছাড়াও নানা উপায়ে পরীক্ষা দিচ্ছেন পরীক্ষার্থীরা। তারা নোট আগে থেকেই লিখে ছবি উঠিয়ে রাখছেন। প্রশ্নের সঙ্গে মিলে গেলে সেটার ছবি উঠিয়েই সাবমিট করেন তারা।

তবে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষকরা প্রশ্ন  করছেন কিছুটা মতামত ধরণের ফলে এই ছবিগুলো ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছেনা।
এসবের পাশাপাশি বরাবরের মতো সমস্যার বিষয়টিতো আছেই।

গাইবান্ধার ঢোলভাঙ্গার শিক্ষার্থী সাগুফতা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, সোমবার পরীক্ষা শুরু হয় দুপুর ২টার সময়। ঠিক ২০ মিনিট পরেই বিদ্যুৎ চলে যায়। আমাদের বিদ্যুৎ চলে গেলে নেটওয়ার্কও দুর্বল হয়ে যায়। এমতবস্থায় বিপদে পড়ে যাই। এই ভীতি নিয়েই পরীক্ষা দিতে থাকি। আমার প্রস্তুতি থাকলেও চিন্তায় পরীক্ষা ভালোভাবে দিতে পারিনি। আর ফাইল এটাস্ট করতে সময় লেগেছে প্রায় ১ ঘণ্টা। পরীক্ষা শেষ হবার ৪০ মিনিট পর এটাস্ট করতে পেরেছি ফাইল।

এছাড়াও একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব সফটওয়্যার ব্যবহারে উপযুক্ত স্মার্টফোন কিংবা ব্যক্তিগত কম্পিউটার সকলের নাই। ক্লাস করলেও শিক্ষার্থীরা কতোটুকু উপকৃত হচ্ছে এই বিষয়টা শিক্ষকদের অনুধাবন করা কঠিন হচ্ছে। অনেকে অন্যের লেখা কপি করে ভালো নম্বর পাচ্ছেন আর যারা নিজে থেকে লিখেও তাদের থেকে ভালো নম্বর মিলছেনা।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের লেকচারার রাশেদ রাতুল বলেন, আমাদের বিএলসি সফটওয়্যারে প্লাগারিজম চেকার
(কোন শিক্ষার্থী হুহহু কপি করলে শনাক্ত করতে সক্ষম) আছে। এছাড়াও আমাদের পরীক্ষাগুলো নেয়া হচ্ছে ওপেনবুক টাইপের। মতামতের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ফলে দেখে লিখলেও খুব একটা উপকার হবে না তাদের যদি বিষয়টা তারা অনুধাবন করতে না পারে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status