এক্সক্লুসিভ
চট্টগ্রামে করোনার উৎস যখন হাসপাতালের বর্জ্য
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
৫ জুলাই ২০২০, রবিবার, ৭:৪৫ পূর্বাহ্ন
ফাইল ছবি
করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে চট্টগ্রামের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হয়। ফলে হাসপাতালটির পাশের ডাস্টবিনে প্রায়ই পড়ে থাকে ডাক্তার-নার্সদের ব্যবহৃত পিপিই, মাস্ক, গ্লাভসসহ নানা বর্জ্য। নিয়ম অনুযায়ী এসব বর্জ্য জীবাণুমুক্ত করে পুড়িয়ে ফেলার কথা থাকলেও সে নিয়ম মানা হচ্ছে না। তাতে বাড়ছে সংক্রমণের শঙ্কা। শুধু জেনারেল হাসপাতাল নয়, এ শঙ্কা বাড়াচ্ছে চট্টগ্রামের অন্য হাসপাতালগুলোও। এরমধ্যে চমেক হাসপাতাল, বিআইটিআইডি হাসপাতাল, রেলওয়ে হাসপাতাল, বেসরকারি হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, ইমেপরিয়াল হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালও করোনা রোগীদের পুরোদমে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। আর এসব হাসপাতালের আশপাশে রাস্তায় করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত সুই, সিরিঞ্জ, গজ কাপড়, ফেসমাস্ক, পিপিই, হ্যান্ডগ্লাভস, নেজাল সোয়াব, রক্তসহ নানা ধরনের বর্জ্য ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। যেগুলো প্রায় কুড়িয়ে নিয়ে যায় টোকাইরা। যারা এগুলো ধুয়ে খোলা বাজারেও বিক্রি করছে। ফলে এসব বর্জ্য এখন চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণের আরেক উৎস হয়ে দাড়িয়েছে। সূত্রমতে, চমেকসহ নগরীর ৯০টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ১৮৩টি প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিও এ ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এসব হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন মেডিকেল বর্জ্য বের হচ্ছে প্রায় ১০ টন। যেগুলো পরিষ্কার করার কথা চসিকের। কিন্তু সংক্রমণের ভয়ে চসিকের সেবকরা তা পরিস্কার করছে না। যা স্বীকার করেছেন চসিকের কাউন্সিলর চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী। তিনি বলেন, মেডিকেলের বর্জ্য পরিস্কারের জন্য সিটি করপোরেশনের সঙ্গে হাসপাতালের আলাদা চুক্তি রয়েছে। আলাদা শ্রমিক এবং গাড়িও রয়েছে। কিন্তু পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ভয়ে হাসপাতালের বর্জ্য পরিষ্কার করতে চাচ্ছেন না। সেখানে পিপিই, মাস্ক, গ্লাভসসহ নানা ধরনের বর্জ্য থাকছে। এগুলো থেকে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে ডাক্তার-নার্সদের। ফলে এগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা উচিত। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, মেডিকেল বর্জ্যে এমনিতেই স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি। পিপিই, মাস্ক, গ্লাভসসহ নানা ধরনের মেডিকেল বর্জ্যে ঝুঁকি আরও কয়েকগুণ বেশি। করোনাভাইরাস যতদিন থাকবে, ততদিন অত্যন্ত সাবধানে চলতে হবে সবাইকে। মেডিকেল বর্জ্য যত্রতত্র ফেলা যাবে না। একদিনের বর্জ্য কয়েকদিন ফেলেও রাখা যাবে না। এগুলো নিয়ে দায়িত্বশীলরা সচেতন না হলে বড় মূল্য দিতে হবে আমাদের। তিনি বলেন, মার্চে আমরা এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তারা মনে হয় এখন সব ভুলে বসে আছেন। আমি হাসপাতালগুলোর সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার নাথ বলেন, আমরা এ ব্যাপারে সচেতন। পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭ অনুযায়ী, হাসপাতাল-ক্লিনিকসহ সব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে মেডিকেল বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের বিধান রয়েছে। বর্জ্য ফেলার আগে তা প্রথমে অটোক্লেভস বা ইটিপির মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত করার কথাও বলা আছে। চমেক হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, বর্জ্যগুলোকে জীবাণুমুক্ত করতে চমেক হাসপাতালে দুটি ইনসিনারেটর মেশিন রয়েছে। কিন্তু এ মেশিন দুটি পড়ে আছে অযত্ন-অবহেলায়। গুরুত্বপূর্ণ এ মেশিনগুলো সচল করার তাগিদ নেই কর্তৃপক্ষের। বর্জ্য জীবাণুমুক্ত করার মতো দক্ষ জনবলও নেই। ফলে হাসপাতালের পাশের ডাস্টবিনে এখনও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে স্যালাইনের খালি ব্যাগ, প্লাস্টিকের সিরিঞ্জ, ওষুধের শিশি-বোতল, রোগীর গজ-ব্যান্ডেজসহ নানা ধরনের বর্জ্য। চমেক হাসপাতালে বড় ভাইকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা নগরীর বাকলিয়া এলাকার বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের পাশে ডাস্টবিনে প্রতিনিয়ত করোনাসংক্রমণ রোধে ব্যবহৃত উপকরণের বর্জ্য ছুড়ে ফেলা হচ্ছে, যা ভয়ংকর স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করছে। অথচ শুরু থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এসব বর্জ্যকে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ভয়ংকর ঝুঁকি হিসেবে উল্লেখ করে বর্জ্যগুলো কীভাবে ব্যবস্থাপনা করতে হবে, তার সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন দিয়েছে। এরই আলোকে পরিবেশ অধিদপ্তর হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে চিঠি দিয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নুরী বলেন, হাসপাতালগুলোতে ব্যবহৃত বর্জ্য উন্মুক্ত স্থানে না ফেলতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গাইডলাইন মেনে এসব বর্জ্য রিসাইক্লিং করার পর পুঁতে ফেলতে হবে।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত সামগ্রী কোনোভাবেই খোলা স্থানে ফেলা যাবে না। এটি গর্হিত কাজ। তিনি বলেন, নির্দেশনা মতে প্রতিটি হাসপাতাল এসব বর্জ্য কীভাবে আলাদা করবে তার জন্য পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেবে।
এসব বর্জ্য দুই স্তরবিশিষ্ট প্লাস্টিক ব্যাগের দুই-তৃতীয়াংশ ভর্তি করে ব্যাগের মুখ ভালোভাবে শক্ত করে বেঁধে এমন একটি বিনে রাখতে হবে, যার গায়ে লেখা থাকবে কোভিড-১৯ বর্জ্য।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত সামগ্রী কোনোভাবেই খোলা স্থানে ফেলা যাবে না। এটি গর্হিত কাজ। তিনি বলেন, নির্দেশনা মতে প্রতিটি হাসপাতাল এসব বর্জ্য কীভাবে আলাদা করবে তার জন্য পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেবে।
এসব বর্জ্য দুই স্তরবিশিষ্ট প্লাস্টিক ব্যাগের দুই-তৃতীয়াংশ ভর্তি করে ব্যাগের মুখ ভালোভাবে শক্ত করে বেঁধে এমন একটি বিনে রাখতে হবে, যার গায়ে লেখা থাকবে কোভিড-১৯ বর্জ্য।