বাংলারজমিন

করোনায় তলানিতে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রবৃদ্ধি

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে

৫ জুলাই ২০২০, রবিবার, ৭:৩৭ পূর্বাহ্ন

করোনাকালে এক দিনের জন্যও অচল হয়নি চট্টগ্রাম বন্দর। চলেছে জাহাজ, হয়েছে কন্টেনার হ্যান্ডলিং কিংবা পণ্য হ্যান্ডলিং। কিন্তু সবকিছুর পরও প্রত্যাশিত লক্ষ্য থেকে ছিটকে পড়ে তলানি ছুঁয়েছে চট্টগ্রামের বন্দরের প্রবৃদ্ধি।
চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনা পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ জাফর আলম বলেন, এবার বন্দরের প্রত্যাশীত প্রবৃদ্ধি ছিল ৯-১০ শতাংশ। কিন্তু করোনায় বন্দর সচল থাকলেও কন্টেনার হ্যান্ডলিং এ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২.৯ শতাংশ এবং খোলা পণ্য হ্যান্ডলিং এ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩.৪ শতাংশ। যা একেবারে অস্বাভাবিক এবং অবিশ্বাস্য। জাফর আলম বলেন, করোনায় গত তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য কমে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে দেশের সর্বক্ষেত্রে। আমাদের বন্দরও এর বাইরে নয়। ফলে কমেছে প্রবৃদ্ধিও। তিনি বলেন, করোনার ভয়াল সময়েও বন্দরের সর্বক্ষেত্রে কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বেশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। করোনাকালে অনেকেই যেখানে ভয়ে ঘরে ঢুকে গেছেন, কাজ ছেড়ে চলে গেছেন সেখানে বন্দরের একজন কর্মকর্তা-কর্মচারীও কাজ করতে পারবেন না বলেননি। এমনকি করোনায় সহকর্মী মারা যাওয়ার পরও কোনো কর্মচারী কাজ বন্ধ রাখেননি। তবে ব্যবসা-বাণিজ্য কমে যাওযায় প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে।
বন্দর সূত্রমতে, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে কন্টেনার হ্যান্ডলিং করে ২৯ লাখ ১৯ হাজার ২৩ টিইইউএস। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে কন্টেনার হ্যান্ডলিং করে ৩০ লাখ ৪ হাজার ১৪২ টিইইউএস। যার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২.৯ শতাংশ। অথচ ডিসেম্বর পর্যন্ত আশা করা হয়েছিল যে চলতি অর্থবছরে কন্টেনার হ্যান্ডলিং এর পরিমাণ অন্তত ৩৩ লাখ টিইইউএস এর ধারে কাছে যাবে। সেটা সত্য হলে বন্দরের প্রবৃদ্ধি দাঁড়াতো ১০ শতাংশের বেশি। কিন্তু কার্যতঃ বন্দরের প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। যা আগে কখনো হয়নি। এর আগে ২০১৭-২০১৮ সালে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৮.৮৮ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরে ১০.১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়ছিল। অপরদিকে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে খোলা পণ্য হ্যান্ডলিং হয়েছে ১০ কোটি ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ২৭২ টন। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে খোলা পণ্য হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৯ কোটি ৮২ লাখ ৪০ হাজার ৬৫৫ টন। প্রবৃদ্ধি ৩.৪ শতাংশ। অথচ ধারণা করা হয়েছিল খোলা পণ্য হ্যান্ডলিং এর ক্ষেত্রেও প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশের ধারে কাছে থাকবে। চট্টগ্রাম বন্দরের খোলা পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের সামপ্রতিক বছরের হিসেবগুলোর মধ্যে ২০১৭ সালে পণ্য হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৮ কোটি ৫২ লাখ ৪৬ হাজার ৯৪৮ টন। ২০১৮ সালে পণ্য হ্যান্ডলিং হয় ৯ কোটি ৬৩ লাখ ১১ হাজার ২২৪ টন। ওই বছরে ১ কোটি ১০ লাখ ৬৪ হাজার ২৭৬ টন পণ্য বৃদ্ধি পেয়েছিল। যার প্রবৃদ্ধি ছিল ১২.৯৮ শতাংশ। ২০১৭ সালেও প্রবৃদ্ধি ছিল ১০.৩৪ শতাংশ। অর্থবছরের হিসেবে ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয় ১৫.২১ শতাংশ, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫.২৮ শতাংশ। ২০১৬-২০১৭ সালে প্রবৃদ্ধি ছিল ১২.৪০ শতাংশ। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে এই খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫.৯৯ শতাংশ।জাহাজ হ্যান্ডলিং এর ক্ষেত্রেও প্রবৃদ্ধিতে ভয়াবহ ধস নামে। ২০১৮-২০১৯ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ হ্যান্ডলিং করে ২৬৯৯টি। ২০১৮-২০১৯ সালে জাহাজ হ্যান্ডলিং ৩৭৬৪টি। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১.৭৬ শতাংশ। অথচ চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। নতুন করে ১০টি গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ অন্তত ৫০টি বিভিন্ন ধরনের নতুন ইকুইপমেন্ট বন্দরের অপারেশনে যুক্ত হয়েছে। এছাড়া বন্দরের ভেতরে পণ্যের ধারণক্ষমতা বাড়াতে নতুন
ইয়ার্ড নির্মাণ ও পুরনো ইয়ার্ড সংস্কার করা হয়েছে। এসব কারণে কন্টেনার এবং পণ্য হ্যান্ডলিং সক্ষমতা অতীতের যে কোনো বছরের চেয়ে বেড়েছে। নতুন নতুন ইক্যুইপমেন্ট সংযোজন, নতুন ইয়ার্ড নির্মাণ ও সংস্কারের মাধ্যমে পণ্য সংরক্ষণের স্থান বাড়ানো এবং বন্দর ব্যবহারকারীদের সার্বিক সহযোগিতায় বন্দরের চট্টগ্রাম বন্দর সক্ষমতার দিকে অত্যন্ত ভালো অবস্থানে রয়েছে। এরপরও বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি থেকে ছিটকে পড়েছে। চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, বন্দরের প্রবৃদ্ধি বন্দরের উপর নির্ভর করে না। বন্দর যত কাজই করুক, পণ্য যদি দেশে না আসে বা দেশ থেকে না যায় সেক্ষেত্রে বন্দরের করার কিছু নেই। করোনাকালে দেশের রপ্তানি বহুলাংশে কমে গেছে। কমে গেছে আমদানিও। যা বন্দরের প্রবৃদ্ধির উপর বড় আঘাত হেনেছে।

 ব্যবসা বাণিজ্য ঠিকঠাকভাবে থাকলে বন্দরের প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি হতে পারতো।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status