অনলাইন

ওয়ার্ল্ড রিপোর্টার

আলোচিত জানাজা

মুহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম আনোয়ার

২ জুলাই ২০২০, বৃহস্পতিবার, ২:৪২ পূর্বাহ্ন

করোনা কাতর বাংলাদেশে লকডাউনের মধ্যে প্রখ্যাত আলেম জনাব যুবায়ের আহমদ আনসারী সাহেব মারা যান।মৃত্যুই স্বাভাবিক।মৃত্যুই আমাদের শেষ পরিণতি।এখানে কেউ আগে বা পরে তবে সবার মৃত্যুর ধরণ বা রেশ আলাদা। সেই ক্ষেত্রে যুবায়ের আহমদ আনসারী সাহেব হয়তো একটু ব্যতিক্রম।কিন্তু উনার জানাজা নিয়ে বাংলাদেশের মিডিয়া, আধুনিক প্রচার মাধ্যম ফেসবুক সহ প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক দুনিয়া যে প্রচার ও প্রোপ্রাগান্ডা চালায় তা কতটুকু যুক্তিযুক্ত?
আমি কিন্তু আনসারী সাহেবের ফ্যান(fan) বা আত্মীয় বন্ধুবান্ধব কেউ না। যতটুকু উনার সম্পর্কে মৃত্যু পরবর্তীতে জানতে পেরেছি উনি দেওবন্দ মতবাদের একজন প্রখ্যাত মোফাসসির। তবে উনি ইসলামের প্রকৃত খাদেম। তাই উনার প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা।কারণ আমি দেখেছি বা শিখেছি,আমার বাবার ভিন্ন ধারার ইসলাম শিক্ষিত মানুষজনের প্রতি কি অপূর্ব ভালবাসা! কারণ আব্বু সিলেট আলিয়া প্রদত্ত মোহাদ্দিস।এ প্রসঙ্গে ছোট একটা ঘটনা মনে পড়ে, আমার বাবা তখন বিলেতে সম্ভবত দু’হাজার তিন হবে বড় ভাই জনাব আশরাফুল ইসলাম উনার কিছু বন্ধু নিয়ে ব্রিকলেইন একটি মানি ট্রান্সফার এন্ড ট্রভেলস্ খুলেন।
অফিস উদ্বোধন ও দোয়া আব্বাকে দিয়েই করানো সবার ইচ্ছা। সেই লক্ষ্যে মিলাদ আয়োজন।মিলাদ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর জনাব সাজ্জাদুর রহমান ভাই আমাদের জগ্ননাথপুরের প্রখ্যাত আলেমে দীন জনাব আমিন উল্লাহ সাহেব শেখ কাতিয়াকে নিয়ে এসে যোগদান করেন।আমার মধ্যে কিছুটা শংকা চলে আসছিল। কিন্তু না দেখলাম দুই বন্ধুর অপূর্ব কুশল বিনিময়।
মিলাদ শেষ হতে মাগরিবের সময় হয়ে গেল। কেউ কেউ বললেন মসজিদে মাগরিবের সালাত আদায় করবেন।উনারা বললেন নামাজটা আমরা এখানেই পড়বো। হলোও তাই।ইমামতি করতে আব্বু শেখ সাহেরকে অনুরোধ করলেন কিন্তু উনার তুমুল আপত্তিতে আব্বাকেই নামাজ পড়াতে হল।নামাজ পরবর্তী দোয়া আব্বা শেখ সাহেবকে দিয়েই করান এবং ছেলেমেয়েদের জন্য দোয়া চান।কি আশ্চর্য সহনশীল উনাদের হৃদয়।যাক বাবা সম্পর্কে আল্লাহ সুযোগ দিলে হয়তো অন্য সময় লিখব ইন্শাআল্লাহ।
মূল প্রসঙ্গ জনাব আনসারী সাহেবের বহুল আলোচিত জানাজা । যা নিয়ে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছডিয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলাদেশীদের মধ্যে যে তুলকালাম কান্ড ঘটে গেল সত্যিই অনেকটা অনাকাংখিত। উনার জানাজার লোক সমাগম বা উপস্থিতি কোভিড-১৯ এর অবস্থায়ও ইর্ষনীয়। তাই বলে সব জায়গাতে রাজনীতির গন্ধ বা ছলচাতুরীর আশংখা খুঁজতে হবে এমনতো না।উনি একজন আলেমে দীন। কাজেই মানুষজন বিভিন্ন পন্থায় বা আশ্রয়ে জানাজার অংশ গ্রহনের চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক।যারা জানাজায় আসছেন উনারা নিজস্ব দায়ভার বুঝেই যোগ দিয়েছেন।
আর সরকার, সরকারই বা এখানে কঠোর হলে মানুষজন আবার বলাবলি করতো আলেমদের সরকার লাঠিপেটা করছে বা রক্তপাত ঘটারও সম্ভবনা থেকে য়ায।প্রশাসন সেই অর্থে কতটুকু সিনসিয়ার বা দায়িত্বশীল কর্তা ব্যক্তিদের কি ভূমিকা সেই প্রশ্ন থেকে যায়।
একজন জনপ্রিয় আলেমের নামাজের জানাজাকে কেন্দ্র করে সমস্থ ব্রাহ্মনবাডিয়া জেলার অধিবাসী লোকজনকে যেভাবে আধুনিক মিডিয়ার সুবাদে তুলোধনা করা হল তা দু:খজনক।সামাজিক মাধ্যম ও মিডিয়ায় ব্যবহৃত ভাষা আমাদের স্বকীয়তার কোন কালের জানি না । এ সমস্থ প্রচারণায় লাঙ্গলকোট শিক্ষাই মনে পড়ে ।
ব্রাম্মনবাড়িয়া বাংলাদেশের কোন বিচ্ছিন্ন জনপদ নয়। উনারা ও অন্যান্য জেলার অধিবাসীর মত মানব সন্তান আমাদের ভাই, আমাদের স্বজন। তাই উক্ত জেলার বাসিন্দারা উদ্ভট সমালোচনায় জেলার সুনাম রক্ষায় বিভিন্ন পর্যায়ে লকডাউন অবস্থায় অন্যান্য জায়গার জানাজা,জনসভা,মানুষজনের শপিং,পিকনিক উৎসব ইত্যাদি সামাজিক রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের ছবি স্যোসাল মিডিয়ায় আপলোড করেন।তার সাথে আবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইউর্ক শহরের খ্রিস্টান ফ্রাদার এর শেষ কৃত্যের লোক সমাগমের ফটো ছাড়েন,এটা হওয়াই কাম্য।
আবার অনেকে ইচ্ছাকৃত ভাবেই সবকিছুতে ইসলাম বা ধর্মের ফাঁক ফোকর খুঁজতে থাকেন যেন ধর্ম তত্ত্ববিদের কাজটা উনারাই চালিয়ে যাবেন অথবা নিজ ধর্মকে নিজের প্রয়োজন মত ব্যাখ্যা করেন।যতটুকু জানি,ছাড়তেও রাজি না।অথচ পৃথিবীর পরিবর্তনবাদ ধর্মভিত্তিক,ধর্মই মানুষকে সভ্যতা বা শৃঙ্খলায় আবদ্ধ করে সমাজটাকে এগিয়ে নিয়ে এসেছে। তাই ধর্ম তত্ত্ববিদরাই ইসলাম সম্পর্কে আলোচনা সমালোচনা করবেন এটাই স্বাভাবিক। মতভেদ থাকবে তবে সমাধান উনাদের কাছ থেকেই আসবে,যারা ইসলাম সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখেন।তবে ঐ সব ক্ষেত্রে আমাদের একটু ধৈর্যশীল থাকা আবশ্যিক।নিশ্চিত ধৈর্য মানুষকে তার কাংখিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবে।মহান আল্লাহ আমাদের মানবিক সহনশীল সত্যবাদী মানব দরদী হওয়ার তৌফিক দান করুন।


মুহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম আনোয়ার
৪৫১ ফুটসক্রেরী রোড
ই-১ ৫বিজি, লন্ডন
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status