বাংলারজমিন

পুলিশ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত, রোষানলে ম্যাজিস্ট্রেট

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে

১ জুলাই ২০২০, বুধবার, ৪:৩৭ পূর্বাহ্ন

নিজেকে জাহির করতে সাত সকালে পুলিশ ছাড়াই কোচিং সেন্টারে অভিযান চালাতে গিয়ে রোষানলে পড়েছেন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেজা মো: গোলাম মাসুম প্রধান। এক পর্যায়ে শিঘটনাটি ঘটেছে নাসিকের সিদ্ধিরগঞ্জে ১০নং ওয়ার্ডের গোদনাইল রসুলবাগ এলাকায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে প্রথমে চৌধুরীবাড়ি এলাকায় জ্ঞানের আলো কোচি সেন্টারে অভিযান চালান গোলাম মাসুম প্রধান। তিনি দুটি রুমে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দেখে ছবি তোলেন। খবর পেয়ে কোচিং সেন্টারের মালিক সাইফুল ইসলাম ঘটনাস্থলে আসেন। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই সাইফুল ইসলাম, তার চার শিক্ষক নাজমুল ইসলাম জীবন, মো: নুর নবী, মো. মেহেদী হাসান, আব্দুল রশিদকে নিয়ে যেতে চাইলে কারণ জানতে বাড়ির মালিক বয়স্ক আব্দুল ওহাব মোল্লা এগিয়ে আসলে তাকেসহ ৬জনকে গাড়িয়ে তুলে নেয়া হয়। এরপর রসুলবাগ এলাকায় গিয়ে তাদের গাড়িতে রেখে মাদবর বাড়িতে ভাড়ায় পরিচালিত এটি কোচিং সেন্টারে যান এসিল্যান্ড গোলাম মাসুম। এসময় স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে এসে জড়ো হয়। কোচিং সেন্টার থেকে শিক্ষকদের নিয়ে যেতে চাইলে লোকজন উত্তেজিত হয়ে উঠে। শুরু হয় হৈ চৈ হট্টোগোল। পুলিশ ছাড়া এসিল্যান্ডের উপস্থিতি সন্দেহজনক হওয়ায় লোকজনের ভীড় বাড়ে। পরে এসিল্যান্ড নিজেকে ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিলে এবং স্থানীয় মুরুব্বিদের সহায়তায় পরিস্থিতি শান্ত হয়। এরপর ওই কোচিং সেন্টারের পরিচালক মোবারক হোসেন অপুকেও নিয়ে গিয়ে গাড়িতে তুলে নিজ কার্যালয়ে যান এসিল্যান্ড। সেখানে নিজ অফিসে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে জ্ঞানের আলো কোচিং সেন্টারকে ৭ হাজার টাকা ও এটি কোচিং সেন্টারকে ৫ টাকা জরিমানা করেন এসিল্যান্ড গোলাম মাসুম প্রধান। জ্ঞানের আলো কোচিং সেন্টারের পরিচালক সাইফুল ইসলাম জানান, আমি তো আর ইচ্ছে করে কোচিং সেন্টার খুলিনি। অভিভাবকদের ইচ্ছায় খোলা হয়েছে। দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া একেবারেই ছেড়ে দিয়েছে। নভেম্বরে যদি পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষায় অনুষ্ঠিত হয় তাহলে তো তারা কিছু লিখতে পারবে না পরীক্ষার খাতায়। অভিভাবকদের অনুরোধে ৫ম ও ৮ম শ্রেণির অল্প কয়েকজন শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোচিং শুরুকরা হয়েছিল। তাছাড়া গত সাড়ে ৩ মাস স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষকদের আয় একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। আর্থিক সংকটে পড়ে অত্যন্ত মানবিক দিন কাটাচ্ছি আমরা। সেখানে ৭ হাজার জরিমানা ‘মড়ার উপর খাড়ার ঘা’ আমার জন্য। আমাকে বলে ৭ হাজার টাকা দিতে হবে না হয় ৬ মাসের জেল। কোন কথা বলা যাবে না। পরে নিরুপায় হয়ে এসিল্যান্ড অফিসে বসেই ৮/১০ কে ফোন করে তাদের কাছ থেকে ধার নিয়ে জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। একটি স্কুলে পরিচলাক সাইফুল দু:খ করে বলেন, আমরা তো শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের টিচিং দিচ্ছিলাম। তাও পেটের তাগিয়ে। কিন্তু চুরি-ডাকাতি তো করিনি। যেভাবে আমাদের গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে মনে হচ্ছিল আমরা চোর-ডাকাত। আমাদের কোন কথাই শুনতে চাননি ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব। ভ্রাম্যমাণ আদালত তো ঘটনাস্থলে অপরাধের বিচার করে রায় দেয়। কিন্তু অফিসে নিয়ে জরিমানা করে এটা বুঝলাম না। তাছাড়া নারায়ণগঞ্জ কলেজ রোডে সম্প্রতিক ৩টি কোচিং সেন্টারকে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা বারিক ম্যাডার ২০০ টাকা করে জরিমানা করে কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে। সেখানে আমাকে ৭ হাজার জরিমানার কারণ কি? এদিকে এটি কোচিং সেন্টারের পরিচালক মোবারক হোসেন অপু জানান, কোচিং সেন্টারে ঢুকে আমাকে সব কিছু বন্ধ করতে বলে। এবং তার সঙ্গে যেতে বলে। এসময় আমার আত্মীয়স্বজন, বাড়িওয়ালাসহ এলাকার ২০ থেকে ২৫জন জড়ো হয়ে তাকে ঘিরে ফেলে। কারণ আমরা প্রায় সময় শুনি ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র‌্যাব, সেনা সদস্য পরিচয়দানকারী প্রতারকদের কবলে পড়ে সাধারণ মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। তাই গাড়ি ও পুলিশ না থাকায় প্রথমে আমরা বুঝতে পারনি তিনি ম্যাজিস্ট্রেট। হৈ চৈয়ের মধ্যে এক পর্যায়ে তিনি লোকজনকে হুমকি দিয়ে বলেন আপনারা সরেন যেতে দিন। না হলে ‘ওর জীবনটা নস্ট করে দিবো। তখন সবাই ভয় পেয়ে যায়। পরে আমাকে নিয়ে গাড়ি তোলে। অফিসে নিয়ে অনেক কথা বলে। এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে। না দিলে ৬ মাসের জেল। এদিকে সিদ্ধিরগঞ্জ বেসকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঐক্য পরিষদেন সভাপতি মজিবুর রহমান বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এমনিতেই অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে শিক্ষকরা। তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এছাড়া করোনার মধ্যেও সরকার কঠোরতা থেকে কিছুটা নমনীয় হয়ে সীমিত পরিসরে সব কিছু খুলে দিয়েছে। সেখানে সামাজিক দরুত্ব ও সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করেই হয়তো কয়েকজন শিক্ষার্থী কোচিং করছিল। বন্ধ করে দিয়েছে, তাতে দু:খ নাই। কিন্তু দুটি কোচিং সেন্টারকে ১২ হাজার টাকা জরিমানা করাটা দু:খজনক। অনেক স্থানে আমরা দেখেছি টোকেন মানি হিসেবে ২০০ টাকা জরিমানা করতে। সেখানে এতো টাকা জরিমানা একজন শিক্ষকের জন্য এই সময়ে কতটা কস্টের তা বলে বুঝানো যাবে না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status