শেষের পাতা

২৫ বছরে ৬৯০ লঞ্চ দুর্ঘটনা

তদন্ত আলোর মুখ দেখে না

আল আমিন

১ জুলাই ২০২০, বুধবার, ৯:২৪ পূর্বাহ্ন

দেশে প্রতিবছর ঘটছে লঞ্চ দুর্ঘটনা। লঞ্চের ফিটনেসের অভাব, চালকদের অদক্ষতা, ফিটনেসের কাগজ তদারকির অভাব ও নদীতে নৌ পুলিশে ট্রাফিক সিগন্যালের ব্যবস্থা না থাকার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন নিরীহ যাত্রীরা। গত ২৫ বছরে ৬৯০টি লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রায় ৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। প্রত্যেকটি দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও সেটি আলোর মুখ দেখে না। তদন্ত কমিটি নানাবিধ সুপারিশও করে থাকে। কিন্তু সেসব সুপারিশ বাস্তবায়ন হয় না। যাত্রী কল্যাণ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরেই ঢাকার সদরঘাটে ১২টি ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে লঞ্চে লঞ্চে সংঘর্ষ ৬টি এবং লঞ্চের সঙ্গে ছোট নৌকার সংঘর্ষ হয়েছে ৬টি। ২০১৯ সালে সারা দেশে লঞ্চ, ট্রলার ও নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে ১১৬টি। এরমধ্যে সংঘর্ষ ও ধাক্কার কারণে ডুবেছে ৪৪টি নৌ যান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লঞ্চ দুর্ঘটনা এড়াতে লঞ্চের ফিটনেস ঠিক আছে কিনা তা স্বচ্ছতা ঠিক করা, চালকদের প্রশিক্ষণ এবং যথাযথ আইনের প্রয়োগ করলে লঞ্চ দুর্ঘটনা কমে আসবে। পাশাপাশি  নৌ-পুলিশের জন্য ফাঁড়ি ও থানা প্রয়োজন। প্রয়োজন আধুনিক জাহাজ, স্পিডবোট, হেলিকপ্টার ও সি-প্লেন। অন্যথায় পানি পথে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যাবে না। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক মানবজমিনকে জানান, আমরা ছোট-বড় সব দুর্ঘটনাকে আমলে নেই। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করি। কোনো ছাড় দেয়া হয় না। তবে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব জানালেন অন্যকথা। তিনি জানান, দুর্ঘটনা ছোট হোক, বড় হোক কোনো গুরুত্ব দেয়া হয় না। এতে আরো দুর্ঘটনা বাড়ছে। বিআইডব্লিউটিএ এবং ঢাকা নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, দেশে শুষ্ক মৌসুমে এখন ৬ হাজার কিলোমিটার নদীপথ রয়েছে। সেখানে ৪ হাজার ছোট-বড় নৌ যান চলাচল করে থাকে। বর্তমানে এসবের ৬০ ভাগে মালামাল পরিবহন ও ৪০ ভাগে যাত্রী চলাচল করে। সূত্র জানায়, গত বছরের ৪ঠা আগস্ট পদ্মায় পিনাক-৬ ডুবে যায়। এ দুর্ঘটনায় ৪৯ যাত্রীর লাশ উদ্ধার হয়েছে। সরকারি হিসাবে এখনো নিখোঁজ রয়েছে ৬১ যাত্রী। আধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহার করে লঞ্চ উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে দুর্ঘটনার ৮ দিনের মাথায় ১১ই আগস্ট উদ্ধার কাজ পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। তাই লঞ্চটির আর কোনো সন্ধান মেলেনি। এই মামলায় পিনাক-৬ এর মালিক আবু বক্কার সিদ্দিক কালু ও পুত্র ওমর ফারুককে গ্রেপ্তার করা হয়। দুর্ঘটনার এক মাস ১০ দিন পর ১৪ই সেপ্টেম্বর তদন্ত কমিটি ৬২ পৃষ্ঠার রিপোর্ট পেশ করে। এই রিপোর্টে বিআইডব্লিউটিএ ও সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের পাঁচ কর্মকর্তার অবহেলা ও অনিয়মকে দায়ী করা হয়। এ ছাড়াও একটি সুপারিশ প্রদান করা হয়। জানা গেছে, দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা বা সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি। কর্তৃপক্ষের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়। কিন্তু পরক্ষণে কিছুই হয় না। দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। সূত্র জানায়, ১৯৭৬ সালের একটি সরকারি অধ্যাদেশ সংশোধন করার পরেও শাস্তির বিধান আছে মাত্র ১০ হাজার টাকা জরিমানা। সঠিক নকশা অনুযায়ী লঞ্চ নির্মাণ, লঞ্চের ফিটনেস নিয়মিত তদারকি ও চালক-সহযোগীদের দক্ষতা-অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে এই পুরো ব্যবস্থার ওপর শৃঙ্খলা আনতে হবে। এ ছাড়াও দুর্ঘটনার জন্য যারা দায়ী তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। সূত্র জানায়, প্রত্যেক লঞ্চ দুর্ঘটনার সময় যে ঘটনা ঘটে তার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন হয়। একাধিক তদন্ত কমিটি হয়। সেই সব তদন্ত কমিটি একাধিক সুপারিশও প্রদান করেন কর্তৃৃপক্ষকে। এসব সুপারিশ বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হলেও বাস্তবায়ন হয় না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্ঘটনা এড়াতে সুপারিশগুলো শক্তহাতে বাস্তবায়ন করতে হবে। দোষী যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। উল্লেখ্য, সোমবার সকালে সদরঘাট সংলগ্ন বুড়িগঙ্গা নদীতে মুন্সীগঞ্জ থেকে আসা ‘মর্নিং বার্ড’ নামে একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ অপর আরেকটি লঞ্চ ময়ূরের ধাক্কায় ডুবে যায়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৩২ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানা গেছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status