মত-মতান্তর

ডক্টর ইউনূস দেদীপ্যমান অগ্নি

শহীদুল্লাহ ফরায়জী

২৮ জুন ২০২০, রবিবার, ৪:৫৩ পূর্বাহ্ন

দারিদ্র বৈষম্য ও প্রকৃতি নিধন চিরতরে পৃথিবী থেকে বিলোপ করার স্বপ্ন বাস্তবায়নের দেদীপ্যমান অগ্নি যার মাঝে বিরাজমান তিনি হচ্ছেন ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস। যার জীবনের একটিই লক্ষ্য দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠানো। দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠানোর বিশ্বব্যাপী বিশাল কর্মযজ্ঞের নায়ক তিনি। সকল মানুষের মাঝে সৃজনশীলতার উজ্জ্বল আলো দেখতে পারেন তিনি।
ডক্টর ইউনূস দারিদ্র, বঞ্চনা, বৈষম্য অসমতার বিরুদ্ধে আজীবন নিবেদিত। শোষণ নিপীড়নের অন্যায্য সমাজ ব্যবস্থা উচ্ছেদের স্বপ্নে তিনি বিভোর। দারিদ্র শূন্য, বেকারত্ব শূন্য ও শূন্য কার্বন-এই তিন শূন্যের উদ্ভাবক তিনি, তিন শূন্যের একমাত্র স্বপ্নচারীও তিনি।

তিনি আমাদের গর্বিত সন্তান নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূস । আজ তাঁর ৮০তম জন্মদিন। ১৯৪০ সালের ২৮ জুন এই মাটিতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।বৈশ্বিক ভাবে পালিত হচ্ছে এই দিবস।
করোনায় বিপর্যস্ত সারা বিশ্বের অর্থনীতি পুনর্গঠনের সুযোগ কে কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
পুঁজিবাদী অর্থনীতির অধঃপতন ও নির্মমতার বিপরীতে পৃথিবীকে বদলে দিতে তাঁর সামাজিক ব্যবসার নতুন দর্শন সারা বিশ্বকে আলোড়িত করছে। তাঁর চিন্তার অভিঘাত ছড়িয়ে পড়ছে সারা বিশ্বজুড়ে। ৩৩ টি দেশে ৮৩ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর নামে ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পুঁজি বিনিয়োগ হবে অথচ মুনাফা পাবেনা এটা আমাদের অর্থশাস্ত্রের কথা নয়। অথচ তিনি বলেছেন পুঁজি বিনিয়োগ হবে লক্ষ্য থাকবে মুনাফার পরিবর্তে মানব কল্যাণ।
৪২টি দেশে অনুসরণ করা হয় গ্রামীণ ব্যাংকের মডেল। তাঁর বক্তব্য শোনার জন্য বিশ্বের তাবৎ অর্থনীতিবিদ প্রযুক্তিবিদ ও পরিকল্পনাবিদরা অপেক্ষায় উন্মুখ হয়ে থাকেন।
তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার ছাড়াও বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার, গান্ধী পুরস্কার , হো চি মিন পুরস্কার, সাইমন বলিভার পুরস্কার, প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম পুরস্কার, কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল পুরস্কারসহ পৃথিবীর তাবৎ উচ্চ মর্যাদার পুরস্কার লাভ করেছেন।
ডক্টর ইউনূস আমাদের অহংকার। কিন্তু জাতিগতভাবে আমরা তার যথার্থ মর্যাদা দিতে পারিনি।
বিশ্ব বিখ্যাত ঐতিহাসিক থমাস বেবিংটন মেকলে 'ওয়ারেন হেস্টিং' বইয়ে (ডক্টর আকবর আলী খান কৃত অনূদিত) বলেছেন ‘মোষের যেমন সিং আছে মৌমাছির আছে হুল, গ্রীক সংগীতে যেমন মেয়েদের সৌন্দর্য তেমনি বাঙ্গালীদের বিশেষত্ব প্রতারণা। প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করার সুন্দর অজুহাত দেখায়, প্রতারণা মিথ্যা হলফ জালিয়াতি এসব তারা আত্মরক্ষার্থে কিংবা অন্যের ক্ষতি করার জন্য অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে দ্বিধা করে না গাঙ্গেয় নিম্নাঞ্চলের লোকদের স্বভাবই এরকম।
আর বঙ্গবন্ধু অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বলেছিলেন'পরশ্রীকাতরতা এবং বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের রক্তের মধ্যে রয়েছে। বোধহয় দুনিয়ার কোন ভাষায়ই এই কথাটি পাওয়া যাবে না 'পরশ্রীকাতরতা'। পরের শ্রী দেখে যে কাতর হয় তাকে পরশ্রীকাতর বলে।
আমরা অনেক বাঙালিরা ডক্টর ইউনূসের শ্রী দেখে কাতর হয়েছি। অভিসম্পাত করেছি। মর্যাদা নষ্ট করার হেন কোন শব্দ নাই যা ব্যবহার করতে আমরা পিছপা হয়েছি। কিন্তু ডক্টর ইউনূস কারো কথার কোন প্রতিবাদ করেননি।
বিশ্বের মাঝে গ্রহণীয় বরণীয় আরেক জন ডক্টর ইউনূস আমাদের জীবদ্দশায় আর পাওয়া সম্ভব হবে না। যার মানসিক শক্তি অসাধারণ, যার চেতনা অতি সমুন্নত।

বিশ্ব বিখ্যাত দার্শনিক ফ্রেডরিক নিৎসে বলেছিলেন' যারা আমার লেখা ঘ্রাণ নিঃশ্বাসে গ্রহণ করতে পারেন তারাই জানেন যে, এই বাতাস অনেক উঁচু অবস্থানের এবং অনেক তেজি। এটাকে গ্রহণ করার জন্য একজনকে প্রথমে যোগ্য হতে হয়।'
আমরা অনেকেই ডক্টর ইউনূসকে বুঝার যোগ্য হয়ে উঠিনি।
শুভ জন্মদিন। জয়তু ডক্টর ইউনূস।

২৮ জুন ২০২০
উত্তরা ঢাকা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status