দেশ বিদেশ

সিলেটে আক্রান্ত ৩১২ ফ্রন্টলাইনার

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

১৯ জুন ২০২০, শুক্রবার, ৭:৩৪ পূর্বাহ্ন

সিলেটে চলছে প্রাণপণ লড়াই। করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। জেলাতেই আক্রান্ত ১৬শ’। হাল ছাড়ছেন না ফ্রন্টলাইন যোদ্ধারা। কেউ হাসপাতালে, কেউ মাঠে করোনার সঙ্গে লড়ছেন। আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে যাচ্ছেন, ফিরে এসে আবার যুদ্ধে নামছেন। এই যুদ্ধ শেষ হচ্ছে না। হাল ছাড়ছেন না কেউ। এ যেনো প্রাণ বাঁচানোর নিরন্তর প্রচেষ্টা। সিলেট এখন করোনায় লাল। সবখানেই রোগী। বাদ যাচ্ছেন না ফ্রন্টলাইনাররাও। এ পর্যন্ত শুধু সিলেট জেলাতেই আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৩১২ জন ফ্রন্টলাইন যুদ্ধা। করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করে কেউ কেউ আবার লড়াইয়ে নামলেও অধিকাংশই রয়েছেন আইসোলেশনে। আক্রান্তদের মধ্যে পুলিশের রয়েছেন সবচেয়ে বেশি। জেলা ও মহানগর পুলিশের ১৫৮ জন সদস্য করোনার সঙ্গে লড়াই করছেন। এছাড়া- ১৪৭ জন রয়েছেন ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও ৮ জন সাংবাদিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সিলেটের ফ্রন্টলাইন যুদ্ধা ছিলেন ডা. মঈন উদ্দিন। করোনার ভীতি উপেক্ষা করে তিনি রোগী দেখা বন্ধ করেননি। সিলেটের যখন রোগী দেখার ডাক্তার সংকট তখন মঈন উদ্দিন ছিলেন সক্রিয়। রোগী দ্বারা সংক্রমিত হয়েই তিনি এপ্রিলে মৃত্যু বরন করেন। এরপর থেকে একে একে ডাক্তাররা আক্রান্ত হতে শুরু করেন। সঙ্গে নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীরা। সিলেটের শামসুদ্দিন হাসপাতালের সিনিয়র ব্রাদার রুহুল আমীনও মারা যান করোনায়। স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানিয়েছে- সিলেট বিভাগে এ পর্যন্ত ২৯৪ জন ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ডাক্তার ৮৯, নার্স ৭২ ও স্বাস্থ্যকর্মী ১৩৩ জন। সিলেট জেলাতেই আক্রান্ত ১৪৭ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ৬২ জন ডাক্তার, ৩৫ জন নার্স ও ৫০ জন স্বাস্থ্যকর্মী। সিলেটে আক্রান্তদের মধ্যে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যাই বেশি। স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান মানবজমিনকে জানিয়েছেন- সিলেটে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি। এর কারন, তারা সরাসরি রোগীদের সংস্পর্শে আসেন। রোগী দ্বারাই সংক্রমিত হন। তিনি জানান- অনেক রোগী ওসমানী হাসপাতালে করোনার তথ্য গোপন করে এসে ভর্তি হন। তাদের সেবা দিতে গিয়ে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীরা আক্রান্ত হন। এদের মধ্যে অনেকেই সুস্থ হয়ে আবার কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। প্রথম দিকে ফ্রন্টলাইন যুদ্ধাদের আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়লেও এখন কিছুটা কমে এসেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। এদিকে- সিলেট পুলিশের ১৫৮ সদস্য সিলেটে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ৬৬ এবং জেলা পুলিশের সদস্য ৯২ জন। গত এক মাসে সিলেট মহানগর পুলিশের ৬৬ জন সদস্যের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। তবে এর মধ্যে অধিকাংশই ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। আর বাকিরা কয়েকজন আছেন সিলেট বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং কয়েকজন আছেন নিজ বাসাতেই আইসোলেশনে। এছাড়াও আক্রান্ত এই ৬৬ জনের মধ্যে কেউ মারা যাননি। সিলেটে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মহানগর পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) জেদান আল মুছা। তিনিও বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন- মহানগর পুলিশের করোনা আক্রান্ত সদস্যরা সুস্থ হয়ে আবার যুদ্ধে নামছেন। সরকার থেকে যখন যে নির্দেশনা আসছে সেটি পালনে পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করছে। এদিকে- সিলেট জেলা পুলিশের ৯২ জন সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু ৪৫ জন আছেন বিশ্বনাথ থানা পুলিশের সদস্য। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্ত হচ্ছে গোয়াইনঘাট থানায়। সেখানে আক্রান্ত আছেন ১২ পুলিশ সদস্য। সিলেট জেলা পুলিশে আক্রান্ত সদস্যর মনোবল বাড়াতে কাজ করছেন পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন আহমদ। ভয়কে জয় করে তিনি ছুটে চলেছেন প্রতিটি থানায়। আক্রান্ত পুলিশ সদস্যের মনোবল বাড়াতে তিনি নিজ থেকে ফল পাঠিয়েছেন। আক্রান্ত পুলিশ সদস্যের বাসায় সহায়তা সামগ্রীও পাঠাচ্ছেন। এ কারনে করোনা আক্রান্ত হলেও সিলেট পুলিশের সদস্যরা লড়াইয়ে পিছপা হচ্ছে না। সিলেট জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. লুৎফর রহমান জানিয়েছেন- আক্রান্তের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত পজেটিভ শনাক্ত হওয়া এই ৯২ জনের মধ্যে বেশির ভাগই সুস্থ্য হয়ে উঠেছেন। বাকিদের মধ্যে কয়েকজন আছেন সিলেট বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে এবং কয়েকজন আছেন নিজ বাসাতে আইসোলেশনে। এদিকে- বাদ যাচ্ছেন না সিলেটের সাংবাদিকরা। ইতিমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক কমিশনের সভাপতি ও সমকালের রিপোর্টার ফয়সল আহমদ বাবলু। মায়ের মৃত্যুর দিনই তার করোনা পজেটিভ আসে। একই সঙ্গে আরো কয়েকজন সাংবাদিকও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। কয়েকজন সুস্থ হয়ে ইতিমধ্যে আবার কাজে যোগ দিয়েছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status