বাংলারজমিন

পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লাগামহীন ভুতুরে বিল

বরগুনা প্রতিনিধি

২ জুন ২০২০, মঙ্গলবার, ১২:২২ অপরাহ্ন

পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের লাগামহীন ভুতুরে বিল দেখে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন গ্রাহকরা। করোনা দুর্যোগের কারণে দুই মাস যাবৎ কর্মহীন ও ঘরবন্দী থাকায় প্রায় লোকজনের আয় নেই। সেখানে ভুতুড়ে বিলের কারণে গুণতে হচ্ছে প্রকৃত বিলের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ অতিরিক্ত টাকা। বিশেষ করে গত মে মাসের তৈরি ভুতুরে বিল নিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বামনা উপজেলার হাজার হাজার গ্রাহক।
অভিযোগ উঠেছে, মিটার রিডার বাড়ি বাড়ি না গিয়েই ইচ্ছে মতো রিডিং বসানোর কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে। এতে করে গ্রাহকদের অতিরিক্ত চার্জ গুণতে হচ্ছে। বিগত কয়েক মাসের তুলনায় মে মাসে হঠাৎ বিলের পরিমাণ দুই থেকে তিনগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রাহকদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এমন কি একজন গ্রাহকের ব্যবহৃত ইউনিট ১৯৮ স্থলে দেখানো হয়েছে ৪৪২০।
জানা যায়, করোনা ভাইরাসের কারণে পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিস গত এপ্রিল মাসে হাজার হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ একই সময়ে /একই মাসে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ভিত্তিতে গড় বিল প্রণয়ন করা হয়। কোন অসঙ্গতি থাকলে পরবর্তীতে তা সংশোধন/সমন্বয় করা হবে এই শতে অফিসের কর্মকর্তারা গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল তৈরি করেন। বিদ্যুৎ বিলের কপি হাতে পেয়ে গ্রাহকরা অভিযোগ জানালে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস আগামী মাসে সমন্বয় করা হবে বললেও এমন আশ্বাসে আস্থা রাখতে পারছেন না গ্রাহকরা।
গ্রাহকদের মতে পল্লীবিদ্যুৎ একবার যে বিলের বোঝা গ্রাহকদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয় তা বিভিন্ন নিয়ম দেখিয়ে আদায় করেই ছাড়ে। গ্রাহকরা এই গড়মিল বিলের ব্যাপারে অফিসে গিয়ে মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ দিলেও তার কোন প্রতিকার পায়নি বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
ফলে বাধ্য হয়ে তাদেরকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভৌতিক বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে।
সারওয়ারজান মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মিজনুর রহমান তার ব্যক্তিগত ফেইসবুক আইডি থেকে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের দুর্নীতি, অনিয়ম ও হয়রানির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান লিখে একটি স্ট্যাটাসের মাধ্যমে পল্লী বিদ্যুতের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরলে সেখানে অসংখ্যা ভুক্তভোগী গ্রাহকরা পল্লী বিদ্যুৎ এর বিরুদ্ধে কমেন্ট করে তাদের বিভিন্ন অনিয়ম ও ক্ষোভের কথা তুলে ধরেন।
এ বিষয়ে বামনা উপজেলার ঔষধ ব্যবসায়ী মো. মোস্তফা কামাল বলেন, আমার বাসার ব্যবহৃত ৭৩৬৫৬৭ নং মিটারে পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তথ্যমতে পূর্ববতী রিডিং ছিল (১৩.০৪.২০২০) ২৫৭৮০, বর্তমান রিডিং (২৫.০৫.২০২০) ৩০২০০ এবং ব্যবহৃত ইউনিট দেখানো হয়েছে ৪৪২০। বিলম্ব মাশুলসহ বিদ্যুৎ বিল করা হয়েছে ৫৩৯৭৯ টাকা। বাস্তবিক পক্ষে আজ ০১.০৬.২০২০ তারিখে মিটারে রিডিং রয়েছে ২৫৯৭৮, পূর্ববতী রিডিং ছিল ২৫৭৮০। (২৫৯৭৮-২৫৭৮০=১৯৮) ৫.৭২ টাকা প্রতি ইউনিট হিসাবে বিল হওয়ার কথা ১১৩২.৫৬ টাকা। সেখানে বিল করা হয়েছে ৫১৫৭৬ টাকা। মিটারে উল্লেখিত রিডিং এর চেয়ে ৪২২২ ইউনিটের বাড়তি বিল করা হয়েছে। উল্লেখ্য, জানুয়ারি ২০২০ এ ব্যবহৃত ইউনিট ছিল ৬৫, ফেব্রুয়ারি ২০২০ এ ব্যবহৃত ইউনিট ছিল ৮০, মার্চ ২০২০ এ ব্যবহৃত ইউনিট ছিল ৯০, এপ্রিল ২০২০ এ ব্যবহৃত ইউনিট ছিল ১২০। মে ২০২০ ব্যবহৃত ইউনিট দেখানো হল ৪৪২০।
পশ্চিম সফিপুর গ্রামের আরেক বিদ্যুৎ গ্রাহক ইমরান খন্দকার বলেন, পল্লী বিদ্যুৎতের মনগড়া বিল এবং হয়রানির ব্যাপারে একাধিক জাতীয় এবং স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রচার হলেও ঘাপটি মেরে বসে থাকা কর্মকর্তা কর্মচারীদের কোন ধরণের শাস্তি বা সচেতনতা না হওয়ায় কোন ধরণের সুফল পাচ্ছে না সাধারন গ্রাহকরা। বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নজরে আনা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
এ ব্যাপারে বামনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. নাসির মোল্লা বলেন, শেখ হাসিনার উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, স্লোগানকে সামনে রেখে সাংসদ শওকত হাসানুর রহমান রিমনের সার্বিক সহযোগিতায় বামনাকে শতভাগ বিদ্যুৎতায়িত উপজেলায় রুপান্তরিত করা হয়। কিন্তু গ্রাহকদের উপর নানাভাবে হয়রানি ও অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল এবং গ্রাহকদের সাথে অশোভন আচরণের অভিযোগ খুবই দুঃখজনক।
এ বিষয়ে পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের জোনাল জেনারেল ম্যানেজার মো. মফিজুর রহমান বলেন, রিডিং নিতে ভুল হতেই পারে, গ্রাহক অভিযোগ দিলে আমরা সংশোধন করে দেই।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status