বাংলারজমিন

ঝড়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে অন্যের ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন তারা

হাসান পিন্টু, লালমোহন (ভোলা) থেকে

৩১ মে ২০২০, রবিবার, ৯:২৯ পূর্বাহ্ন

সম্প্রতি ভোলার লালমোহনে আম্ফান পরবর্তী আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় উপজেলার ৫ গ্রাম। এতে দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিধ্বস্ত হয় প্রায় দুই শতাধিক ঘরবাড়ি। ঝড়ে গাছ চাপায় পড়ে আহত হয় অন্তত পাঁচজন। গত বুধবার (২৭ মে) রাত সাড়ে ১০ টার দিকে উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ, রমাগঞ্জ ও লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যায় এ ঘূর্ণিঝড়। এতে ব্যাপক ক্ষতি হয় পশ্চিম চরউমেদ, ইলিশাকান্দি, রমাগঞ্জ, প্যায়ারী মোহন ও ফাতেমাবাদ গ্রাম। তবে ঘটনার ৪ দিন অতিবাহিত হলেও ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারেনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো অপেক্ষায় রয়েছে সরকারী সহযোগিতার।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের পশ্চিম চরউমেদ এলাকার মো. বিল্লাল ও মো. সোহাগ। তারা আপন দুই ভাই। দার-দেনা আর সুদের ওপর টাকা নিয়ে মাত্র কয়েক মাস আগেই নতুন করে দুজনে দুইটি টিনসেড ঘর নির্মাণ করেছেন। সম্প্রতিকালের আকস্মিক এ ঘূর্ণিঝড়ে বিল্লাল ও সোহাগের সেই মাথা গোঁজার শেষ সম্বলটুকুও লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। মাত্র ৫ মিনিটের এ ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে তাদের ঘরের টিনের চালা উড়িয়ে নিয়ে গেছে অন্যত্র। মুহূর্তেই পুরো দুটি ঘর দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে। কোনো মতে নিজেদের রক্ষা করতে পারলেও ঘর দুটি আর রক্ষা করতে পারেননি তারা। দার-দেনা করে ঘর নির্মাণ করার পরপরেই আকস্মিক এ ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে বিধ্বস্ত হওয়া তাদের ঘর দুটি মেরামতের জন্য হাত নেই টাকা। তাই সরকারী সহযোগিতার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছেন এ দুই ভাই। বর্তমানে নিজেদের ঘর মেরামত করতে না পেরে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে অন্যের ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন তারা। এ দুই ভাইয়ের মত একই হাল উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের প্যায়ারীমোহন এলাকার বাসিন্দা নূরুল ইসলামের। কৃষি কাজ করে কোনো মতে পরিবার পরিজন নিয়ে বাস করতে নির্মাণ করেছিলেন ঘরটি। সম্প্রতিকালে বয়ে যাওয়া নির্দয় ওই ঘূর্ণিঝড়ে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে তার বসত ঘরটিও। ঘরের মেরামতের প্রয়োজনীয় অর্থ না থাকায় এখন স্ত্রী সন্তানসহ প্রায় ৪ জন থাকছেন এক প্রতিবেশীর ঘরে। শিগগিরই ঘর মেরামতের জন্য সরকারী সহযোগিতার দাবী জানিয়েছেন নূরুল ইসলাম।
অন্যদিকে উপজেলার রমাগঞ্জ ইউনিয়নের চৌমুহনী এলাকার বাসিন্দা মো. জসিম। নির্দয় এ ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে তার দু:খ বেড়েছে কয়েকগুন। পান দোকান করে চলে তার সংসার। বছরের ১২ মাসই টানাপোড়নে চলে তার সংসার। তার ওপরে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে বহু কষ্টে অর্জিত টাকায় নির্মাণ করা ঘরটিও ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। নতুন করে ঘর নির্মাণের সার্মথ্যও নেই তার। ঘর তুলতে না পেরে তাই ঝড়ের আঘাতে বিধ্বস্ত হওয়া টিন দিয়ে একটি ঝুপড়ি তৈরি করেছেন। সেখানেই স্ত্রী-সন্তানসহ ৫জনকে নিয়ে কোনো রকমে রাত পার করছেন তিনি। তবে ঘরের চুলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ভাত রান্না করতে পারছেন না। তাই তিন বেলা খেতেও পারেন না। কোনো মতে দুপুরের বেলা আত্মীয়দের বাড়ি থেকে দেয়া খাবার খেয়ে দিন পার করছেন তারা। দ্রুত নিজের ঘরটি মেরামত করতে সরকারী সহযোগিতা দেয়ার জোর দাবী করেছেন জসিম।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল হাসান রুমি বলেন, ঘটনারদিন রাতেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। পরদিন সকালেও স্থানীয় এমপি মহোদয়ের নেতৃত্বে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী বরাদ্দ হলে শিগগিরই তা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কাছে পৌছে দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, আকস্মিক এ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর দিন সকালেই ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কাছে ছুটে যান ভোলা-৩ আসনের এমপি নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ব্যক্তিগতভাবে তাৎক্ষনিক পাঁচ হাজার টাকা করেও প্রদান করেন তিনি।

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status