শেষের পাতা

ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে চীনা গ্রেড শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা

মানবজমিন ডেস্ক

১ জুন ২০২০, সোমবার, ৮:০৩ পূর্বাহ্ন

বিভিন্ন গ্রেডে এবং গবেষণায় লিপ্ত শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ উপায়ে ‘বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ’ (ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি) অর্জন করছে। এমন অভিযোগ তুলে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প চীনা শিক্ষার্থীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ স্থগিত করে নির্বাহী আদেশ দিয়েছেন। আদেশে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্পর্শকাতর প্রযুক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ অর্জনের জন্য ব্যাপকভিত্তিতে লিপ্ত গণপ্রজাতন্ত্রী চীন। এর মধ্য দিয়ে তারা তাদের নিজেদের সেনাবাহিনী পিপলস লিবারেশন আর্মির আধুনিকায়ন ও তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চায়। এতে বলা হয়েছে, ওইসব শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর। যুক্তরাষ্ট্রে তাদের প্রবেশে সুনির্দিষ্ট বিধিনিষেধ, সীমাবদ্ধতা ও ব্যতিক্রম থাকা উচিত। এই নির্দেশের আওতায় পড়বেন ‘এফ’ এবং ‘জে’ ভিসাধারীরা। আওতামুক্ত থাকবেন আন্ডারগ্রাজুয়েট শিক্ষার্থী ও গ্রিন কার্ডধারীরা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ভয়েস অব আমেরিকা। এমন নির্দেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাবিদরা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে চীনা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে গৃহীত এই পদক্ষেপ হতাশাজনক। কূটনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কে এতে পাল্টা ফল বয়ে আনবে। এক ইমেইলে এসোসিয়েশন অব আমেরিকান কলেজেস অ্যান্ড ইউনিভার্সিটিজের প্রেসিডেন্ট লিন প্যাসকুয়েরেলা বলেছেন, স্টেম গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সহযোগী হলো চীন। যখন আমাদেরকে বৈশ্বিক এক মহামারি গ্রাস করেছে তখন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে এশিয়া-বিরোধী সেন্টিমেন্টের উত্থান ঘটায় আমরা উদ্বিগ্ন। এনএএফএসএ এসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেটরস-এর প্রধান নির্বাহী ও নির্বাহী পরিচালক ড. এস্থার ডি ব্রিমার বলেছেন, এই নতুন ঘোষণা কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে তার বিস্তারিত জানার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। পাশাপাশি আমরা উদ্বিগ্ন এ জন্য যে, এতে আন্তর্জাতিক শিক্ষা ও গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় সহযোগিতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উদ্ভাবনের আলো’কে নিভিয়ে না দিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে পলিসি নেয়া উচিৎ। এমন নীতি নেয়া হলে তাতে বৈষম্যের মতো বিরূপ বিপর্যয় নিয়ে আসবে। ব্যাপারটা হবে গভীর হতাশার। যেদেশে সব কিছু সমানভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে সেখানে এমন ধারণা হবে বৈপরীত্য।  
ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনের সদর দপ্তর নিউ ইয়র্কে। তাদের তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রে পড়ছেন কমপক্ষে ১০ লাখ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী। তার তিন ভাগের মধ্যে এক ভাগেরও বেশি চীনা। তারা টিউশন, ফি এবং আনুষঙ্গিক খরচ মেটায় নগদ অর্থ থেকে। এর ফলে ভাল একটি রাজস্ব পায় যুক্তরাষ্ট্র। এ খাত থেকে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে এসেছে ৪৫০০ কোটি ডলার। ২০১৬ সালে মার্কিন অর্থনীতিতে ১২৫৫ কোটি ডলার এসেছে চীনা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। তবে কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা শিক্ষার্থীদের ভূমিকা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। চীনা বেশির ভাগ শিক্ষার্থী সেখানে পড়তে যান সায়েন্স, প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং, গণিত। ব্যবসায় ডিগ্রি হলো সেখানে দ্বিতীয় পছন্দ।
চীনা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা গুপ্তচরবৃত্তি এবং ইন্টেলেকচুয়াল সম্পদ চুরি করেন। অনেক প্রফেসর অভিযোগ করেছেন, শ্রেণিকক্ষে এজেন্ট পাঠিয়েছে চীন। তারা নজরদারি করে যুক্তরাষ্ট্রে কী পড়ানো হচ্ছে। কোন চীনা শিক্ষার্থী তার দেশের সরকার সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলছেন। চীনা কিছু শিক্ষার্থী ও গবেষকের ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কিছু রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট। ২০১৯ সালের এপ্রিলে সরকারি এক শুনানিতে এফবিআইয়ের পরিচালক ক্রিস্টোফার রে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বিত গবেষণা পরিবেশকে যারা বিপন্ন করতে চায় তাদের বিষয়ে শিক্ষাখাতকে আরো বেশি পরিশীলিত ও চিন্তাশীল হতে হবে। ২০১৭ সালে ওয়াশিংটনে উইলসন সেন্টার রিপোর্ট করে যে, চীনা শিক্ষার্থী ও কূটনীতিকদের ছোট একটি অংশ গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে আর্থিক প্রতিশোধ নেয়ার মতো বিষয়ে ভীতিকর কৌশলে ন্যস্ত। চীনের ‘থাউজেন্ড ট্যালেন্টস প্লান’-এর সমালোচনা আছে যুক্তরাষ্ট্রে। এই কর্মসূচির জন্য মার্কিনী ও বিশ্বের অন্য বিশেষজ্ঞদের চীনের নিজস্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, গবেষণায় ও শিল্পখাতে আকৃষ্ট করে চীন। এই কর্মসূচিতে আকৃষ্ট হয়েছেন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ন্যানোসায়েন্স ডিপার্টমেন্টের একজন শীর্ষ ব্যক্তিকে। চীনের গবেষণা বিষয়ক এজেন্সি থেকে অর্থ পাওয়ার বিষয়ে মিথ্যা বলার জন্য জানুয়ারিতে তাকে অভিযুক্ত করা হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status