খেলা

‘এখন মাঠে ফেরাটা হবে ভয়ঙ্কর’

ইশতিয়াক পারভেজ

১ জুন ২০২০, সোমবার, ৬:৪১ পূর্বাহ্ন

১৯শে মার্চ। বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা তখন ২০  জনও হয়নি। মৃত মাত্র ১ জন। ঠিক সেই সময় করোনা ভাইরাস আতঙ্কে বাংলাদেশে সব ধরনের ক্রিকেট অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে যায়। যত দিন গেছে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে। এখন আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজার ছুঁই ছুঁই। মৃত্যুর সংখ্যা ৬’শ ছাড়িয়েছে। তবে এমন অবস্থায় বাংলাদেশ সরকার সব কিছু খুলে দিয়েছে। সাধারণ জনগণকে করোনার চ্যালেঞ্জ নিয়ে ঘর থেকে বের হতে হচ্ছে জীবিকার জন্য। তাহলে কি সব কিছুর মত মাঠেও ক্রিকেট ফিরবে? ঢাকা প্রিমিয়ার লীগের ক্রিকেটারদের দাবি ছিল ঈদের পর ফের আসরটি শুরু করার। তাদের হয়ে ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অব বাংলাদেশও (কোয়াব) বিসিবি ও সিসিডিএমকে চিঠি দিয়েছিল। যেন ক্রিকেটারদের স্বার্থে ঈদের পরই লীগ ফের চালু করা হয়। তবে বাস্তবতা বড় কঠিন। বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক মুমিনুল হক সৌরভ স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন এমন পরিস্থিতিতে মাঠে ক্রিকেট খেলতে যাওয়া মানে নিজের মৃত্যুকে ডেকে আনা।  দৈনিক মানবজমিনকে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ। তার উপর খুলে দেয়া হয়েছে অফিস, গণপরিবহন। তার মানে এই ছোঁয়াচে ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা আরো বাড়লো। তাই এখন মাঠে ফেরাটা হবে  ‘ভয়ঙ্কর’।’
মাঠে ক্রিকেট না থাকায় সবচেয়ে ক্ষতি ক্রিকেটারদেরই।  এরপরও মুমিনুল কেন মাঠে ক্রিকেট চান না তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দেখেন এখন সারা বিশ্বে ক্রিকেট বন্ধ। সবার যেমন ক্ষতি হচ্ছে আমাদেরও হচ্ছে। অর্থিক ক্ষতি তো আছেই। সেই সঙ্গে স্কিল  ও ফিটনেসেরও। কিন্তু যখন ক্রিকেট শুরু হবে, সব জায়গায় একই সঙ্গে শুরু হবে। এমন নয় যে অন্যরা আমাদের চেয়ে এগিয়ে থাকবে। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি তাতে আরো বড় ক্ষতি হতে পারে। কারণ ক্রিকেট হচ্ছে দলীয় খেলা। এখানে যে শুধু ক্রিকেটাররা থাকে তা নয়। টিম বয়, ফিজিও, চিকিৎসক, আম্পায়ার সবাইকে নিয়ে ক্রিকেট হবে। সেখানে একজনের চেয়ার আরেক জন ব্যবহার করবে। দূরে দূরে থাকা এখানে একেবারেই অসম্ভব। আল্লাহ মাফ করুক, এদের কারো একজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত থাকলে পুরো দলই ঝুঁকির মুখে পড়বে। আরেকটি বিষয় হলো আমরা ক্রিকেট খেলি মানুষের জন্য। মানে দর্শক। সেই দর্শকইতো মাঠে থাকবে না। তাহলে এমন ক্রিকেটের মানে কি!’
শুধু তাই নয়, দুই মাস ধরে ক্রিকেটাররা বাসায় বসে সব কষ্ট মেনে নিয়েছেন। নিজেদের ত্যাগের সর্বোচ্চ পরিচয় দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এখন মাঠে ফেরা মানে এত দিনের সব কষ্টকে বিসর্জন দেয়া। এত দিন আমরা যে ভয়ে নিজেদের বাঁচাতে, মানুষকে নিরাপদ রাখতে কষ্ট করলাম তার কোনো মূল্য থাকবে না।  যেখানে ছিলাম এখন তার  চেয়ে বেশি ক্ষতির সম্ভাবনা নিয়ে ফিরতে হবে। যে কারণে আমি মনে করি সত্যিকার অর্থে যে দিন দেশ ও করোনা ভাইরাসমুক্ত হবে। ঝুঁকি থাকবে না, মাঠে  ভয় আর শঙ্কা নিয়ে যেতে হবে না সেই দিনই ক্রিকেট শুরু করা  হোক। তার আগে নয়। বাংলাতে একটা কথা আছে নাÑ যে লাউ সেই কদু। তাই হবে।’
অন্যদিকে ক্রিকেটারদেরই দাবি ছিল ঢাকা লীগ ঈদের পর শুরু করার। তবে মুমিনুল মনে করেন এখন ঢাকা প্রিমিয়ার লীগের চেয়ে নিজেদের জীবন বাঁচানোটাই বড় বিষয়। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, এটি সত্যি ঢাকা লীগের সঙ্গে অনেক ক্রিকেটারের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে। কিন্তু করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সেখানে জীবন মূল্যহীন হয়ে যাবে। যে সংসার বা পরিবারের জন্য আমরা ক্রিকেট খেলি তাদেরও আমরা ঝুঁকির মুখে ফেলবো। কারণ যতই কঠিন নিয়ম থাকুক চোখে দেখা যায় না এমন একটি ভাইরাসের আক্রমণের শিকার হবেন তা নিজেও জানবেন না। তাই আমি মনে করি ঢাকা লীগের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। বেঁচে থাকলে, সুস্থ থাকলে এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন ইনশাল্লাহ।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status