শেষের পাতা

ভৈরবে ঘরে ঘরে কান্না

জিম্মি করে নির্যাতনের ভয়েস রেকর্ড পাঠানো হতো পরিবারের কাছে

আশরাফুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলাম, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) থেক

৩১ মে ২০২০, রবিবার, ৭:৪০ পূর্বাহ্ন

স্বপ্নের দেশ ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো না কিশোরগঞ্জের ভৈরবের ৯ যুবকের। লিবিয়ায় গত মঙ্গলবার ২৬ বাংলাদেশিসহ ৩০ জনকে গুলি করে হত্যা করেছে মানবপাচারকারীরা। নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকে ভৈরব উপজেলার অন্তত ৯ জন যুবকের সন্ধান মিলছে না। তাদের মধ্যে ৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারিয়েছেন বলে স্থানীয়ভাবে জানা গেছে। এছাড়া বাকি ৪ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। শনিবার সকালে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুবনা ফারজানা ও ভৈরব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বাহালুল খান বাহার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, নিহতরা হলেন, উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের হাজী মেহের আলীর ছেলে সাদ্দাম হোসেন আকাশ, শ্রীনগর ইউনিয়নের বাচ্চু মিলিটারির ছেলে সাকিব, শিবপুর ইউনিয়নের শম্ভুপর গ্রামের মুখলেস মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ আলী, সাদেকপুর ইউনিয়নের মোটুপী গ্রামের আব্দুল আলীর ছেলে সৌরভ আহমেদ সোহাগ এবং ভৈরববাজারের অধির চন্দ্র ঋষির ছেলে রাজন চন্দ্র ঋষি। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় শাকিল নামে একজনের নাম থাকলেও এখনও তার সঠিক নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে আহতরা হলেন, শিবপুর ইউনিয়নের শম্ভুপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তারে ছেলে জানু মিয়া, পৌর শহরের জগনাথপুরের শফর আলীর ছেলে সজল মিয়া, আকবরনগরের জিন্নাত আলীর ছেলে মাহবুবুর রহমান ও শম্ভুপুর বড়কান্দার লিয়াকত আলীর ছেলে মামুন মিয়া।
এদিকে লিবিয়ায় গুলিতে হতাহতের বিষয়টি জানার পর থেকে পরিবারগুলোতে চলছে মাতম। ঘরে ঘরে পড়ে গেছে কান্নার রোল। বাবা-মা, আত্মীয়স্বজনের কান্না আর আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠেছে এলাকার পরিবেশ। নিহত সাদ্দাম হোসেন আকাশের বড় ভাই মোবারক হোসেন জানান, তারা ছয় ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিল আকাশ। প্রায় এক বছর আগে স্বপ্নের দেশ ইতালি যেতে লিবিয়ায় পাড়ি দেন তার ছোট ভাইসহ এলাকার বেশ কিছু যুবক। সেখানে কয়েক মাস থাকার পর উপজেলার শ্রীনগর পূর্বপাড়ার সোনা মিয়ার ছেলে তানজীরুলের মাধ্যমে ইতালি যাওয়ার জন্য তিন লাখ টাকার চুক্তি হয়। ইতালিতে পৌঁছানোর পর তাকে টাকা পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু পরে তাদের জিম্মি করে দেশে পরিবারের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করে দালাল চক্রটি। একই সঙ্গে একটি কক্ষে জিম্মি করে যুবকদের বেধড়ক মারপিট করা হতো। পরে নির্যাতনের ভয়েস রেকর্ড পাঠানো হতো পরিবারের সদস্যদের কাছে।
মোবারক হোসেন আরো জানান, ১৫ দিন আগে সর্বশেষ মোবাইল ফোনে তার ভাই আকাশকে নির্যাতনের ভয়েস রেকর্ড তাদের মোবাইলে পাঠানো হয়। এরপর থেকে পরিবারের লোকজন আকাশের আর কোন খোঁজ পাচ্ছিলেন না।
নিহত সোহাগের বাবা আব্দুল আলীও একই রকমের তথ্য দেন। তিনি জানান, এলাকার কিছু অসাধু দালালের খপ্পরে পড়ে ইতালিতে যাওয়ার জন্য জীবন বাজি রেখে টাঙ্গি দিয়ে তার ছেলে সোহাগের ইতালি পাড়ি দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরে তাদের জিম্মি করে দেশে পরিবারের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি দালাল চক্রটি। একই সঙ্গে একটি কক্ষে জিম্মি করে বেধড়ক মারপিট করে তারা। দালাল চক্রের কথা টাকা দিতে না পারায় আমার সন্তানকে আজ হারালাম বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন আব্দুল আলী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে একটি দালাল চক্র মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় থেকে স্বপ্নের দেশ ইতালীর যেতে বাংলাদেশী যুবকদের আগ্রহী করে। পরে তাদের জিম্মি করে দালালরা ইচ্ছে মতো টাকা আদায় করে। আর তাদের কথা মতো টাকা না দিলে বেধড়ক মারপিট করা হয়। শুধু তাই নয়, দিনের পর দিন খাবার না দিয়ে আটকে রেখে বাড়ি থেকে টাকা দিতে চাপ প্রয়োগ করে তারা। ফলে কেউ কেউ বাধ্য হয়ে বাপ-দাদার ভিটে মাটি বিক্রি করে দালালদের হাতে টাকা তুলে দেয়। এসব ঘটনায় ভৈরবের অনেকেই এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status