শেষের পাতা

পরীক্ষার বালাই নেই

চট্টগ্রামে করোনা উপসর্গ নিয়ে ঘুরছে হাজারো মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে

২৯ মে ২০২০, শুক্রবার, ১১:৫৮ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন অলিগলি ও হাটে-বাজারে করোনা উপসর্গ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে হাজারো মানুষ। এদের কেউ হাঁচি দিচ্ছে, কেউ কাশি দিচ্ছে, কেউ শ্বাসকষ্ট ও জ্বরে ভুগছে। যাদের অনেকের মুখে মাস্ক নেই। এরা আবার মসজিদেও যাচ্ছে নামাজ আদায়  করতে। এ নিয়ে কোনরকম চিন্তা চেতনা নেই এদের মধ্যে। আতঙ্কে ভুগছে শুধু সচেতন মহল। যারা প্রশাসনিক ঝামেলার ভয়ে কিছু বলার সাহসও পাচ্ছেন না। স্থানভেদে এসব লোকের প্রভাব তো রয়েছেই। ঈদের দিন সন্ধ্যায় নগরীর চাঁন্দগাও থানার ফরিদের পাড়া মাজারগলি এলাকায় দুবাই প্রবাসীর স্ত্রী সামশুন্নাহারের মৃত্যু হয়। তার করোনা উপসর্গ ছিল। এর দু‘দিন আগে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু মৃত্যুর পর গোপনে ওই গৃহবধুর মরদেহ কবর দেয়ার চেষ্টা করা হয়। এ নিয়ে পুরো এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হলেও স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসনকে জানানোর সাহস করেনি কেউ। পরে খবর পেয়ে ছুটে আসে চান্দগাঁও থানার পুলিশ। রাত ১২টার দিকে নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে করোনা পজেটিভ আসে ওই নারীর। স্থানীয়রা জানান, এর আগে ওই প্রবাসী ও তার তিনভাই শ্বাসকষ্ট-জ্বর নিয়ে সকালে ফরিদের পাড়া জামে মসজিদে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন। ফলে মৃত স্ত্রীর করোনা পজেটিভ হওয়ার পর মসজিদে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়কারী পাঁচশতাধিক মুসল্লির মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে চান্দগাঁও থানা পুলিশ প্রবাসীর বাড়িসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি ভবন ও মসজিদ লকডাউন করে।
জানা গেছে, ফরিদের পাড়া এলাকার শতাধিক পরিবারে শতশত মানুষ এখন করোনা উপসর্গ নিয়ে ভুগছে। এরমধ্যে প্রবাসী পরিবারের কয়েকজনের নমুনা সংগ্রহ করা হলেও করোনা উপসর্গে ভোগা মানুষদের নমুনা পরীক্ষার বালাই নেই।
শুধু ফরিদের পাড়া নয়, পার্শ্ববর্তী সমশের পাড়া, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, পূরাণ চান্দগাঁও, নিউ চান্দগাঁও, বহদ্দারহাট ও মোহাম্মদপুর এলাকার অলিগলিতে করোনা উপসর্গ নিয়ে ঘুরছে শতশত মানুষ। একইভাবে নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের প্রতিটি এলাকার এমন কোন অলিগলি নেই যেখানে করোনা উপসর্গ নিয়ে ঘুরপাক করছে না মানুষ। পাঁচলাইশ থানার শুলকবহর, মুরাদপুর, প্রবর্তক, খুলশী থানার ওয়্যারলেস, নাসিরাবাদ, জিইসি, চকবাজার এলাকার কাপাসগোলাসহ বিভিন্ন অলিগলিতে এখন করোনা উপসর্গ নিয়ে ঘুরাফেরা করছে মানুষ। যাদের অনেকে আজান শুনলে মসজিদে গিয়ে নামাজও আদায় করছে। এদের অনেকের মুখে মাস্ক নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ধারে কাছেও নেই এরা। ফলে সচেতন মহল এদের নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর কোতায়ালী থানার কাজীর দেউরি বাজারে আনিসুর রহমান (৩৬) নামে এক ব্যক্তি বাজার করছিল। মুখে মাস্ক থাকা অবস্থায় সে কয়েকবার হাঁচি দেয়। এরপর তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এ সময় তার গায়ে জ্বরও ছিল। ফলে এ বিষয়ে অনেকে তাকে নানা প্রশ্ন করলেও বেপরোয়াভাব দেখিয়ে চলে যান তিনি। আর এ নিয়ে চরম আতঙ্কে ভুগছে ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, বাজারে প্রতিদিন করোনা উপসর্গ নিয়ে শতশত মানুষ বাজার করছে। বিষয়টি মাঝে মধ্যে নজরে আসলেও ব্যস্ততার ফাঁকে অধিকাংশই নজরে পড়ছে না। আর নজরে পড়লেও এ নিয়ে কথা বলার সুযোগ নেই। বললে উল্টো চাপ আসে। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি এ প্রসঙ্গে বলেন, পোশাক কারখানা ও দোকানপাট খোলার বিষয়ে শীতলতা আসার পর চট্টগ্রামে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি ভেঙে পড়ে। এতে পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রামে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগী। এরমধ্যে যাদের উপসর্গ মিলছে তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হলেও পরীক্ষা-নিরীক্ষার বাইরে থেকে যাচ্ছে একটি অংশ। যারা কিছু কিছু উপসর্গ নিয়ে চট্টগ্রামে ঘুরাফেরা করছে। এ কারণেই মূলত করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। তিনি জানান, চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত দুই হাজার ২০০ লোক করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। বুধবার রাতে সর্বশেষ ফলাফলে একদিনে ২১৫ জন করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছে এ পর্যন্ত ৬১ জন। সুস্থ হয়েছে ১৯১ জন। বাকীদের অধিকাংশই হোম আইসোলেশনে আছেন। তবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় চট্টগ্রামে তিনটি সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি আরও চারটি বেসরকারি হাসপাতালকে করোনা হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সাথে নমুনা পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রাম নগরীতে ১২টি বুথ স্থাপন করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। এসব বুথে কার্যক্রম শুরু হলে নমুনা পরীক্ষাও বাড়বে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status