ভারত

এবারের ঈদে সকলের প্রার্থনা ছিল, ফিরুক সুস্থ জীবন

কলকাতা প্রতিনিধি

২৬ মে ২০২০, মঙ্গলবার, ৪:৫৮ পূর্বাহ্ন

করোনা সংক্রমণের আতঙ্ক ও আম্পানের বিপর্যয়ের ধাক্কায় এবারের ঈদ পালিত হয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন আবহে। শহরে মানুষ ঘরে বসে ঈদ পালনের সুযোগ পেলেও ঝড় বিধ্বস্ত গ্রামবাংলায় সেই সুযোগটুকুও ছিল না। আসলে এবার ঈদের দাওয়াত, কোলাকুলি অনুষঙ্গ সেভাবে দানা বাঁধেনি। কলকাতার রাজাবাজারের এক ব্যবসায়ী আকিল আহমেদ বলছিলেন, এ রকম ঈদ আমার ৫০ বছরের জীবনে কোনদিন দেখিনি। রেড রোডে নামাজ হয়নি। মসজিদে ছিল না জমায়েত। ছেলেমেয়েরা পায় নি নতুন জামাকাপড়। বাড়ি বাড়ি গিয়ে দাওয়াত খাওয়ার কোনও প্রশ্নই ছিল। চেনা-অচেনা মানুষের সঙ্গে আলিঙ্গনের অনাবিল আনন্দও এবার স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য ছিল অধরা। এক বিষন্নতার আবহে ঘরে পরিবোরের সঙ্গে ঈদ পালন করেছি। তবে এবারের ঈদে সকলেরই একটিই প্রার্থনা ছিল, ফিরে আসুক সুস্থ পৃথিবী। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আব্দুল মান্নান বলেছেন, এই রকম ঈদ আগে কখনো দেখিনি। বড্ড কষ্ট হয়েছে, আলিঙ্গন থেকে দূরে থাকতে হয়েছে। হাত সরিয়ে নিতে হয়েছে করমর্দন থেকে। ঈদের দিন মসজিদে যেতে না পারার আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেছেন, ঈদের দিন ছোটবেলা থেকেই একটা আনন্দ-উত্তেজনা কাজ করে। সকালে ¯œান করে নতুন জামাকাপড় পড়ব। নামাজ পড়তে মসজিদে যাব। এই প্রথমবার মসজিদে যাওয়া হল না। অথচ যে কোনও দিন মসজিদে যায় না, সেও দুটি ঈদে নামাজ পড়তে মসজিদে যায়। এবার আমরা বাড়িতে বসেই নামাজ পড়েছি। ফিরহাদের স্ত্রী ইসমত হাকিমকে অন্যবার এই দিনে চরম ব্যস্ততায় কাটাতে হয়। এবার বাড়িতে কারও আনাগোনা নেই। তিনি জানালেন, ঈদের খুশি এবার মনে আনতেই পারিনি। কত মানুষ খাবার পায় নি। ছোটরা পায় নি নতুন জামাকাপড়। সেখানে আমরা আনন্দ করি কী করে? সাংসদ নুসরত জাহান ঈদের দিনটি কাটিয়েছেন মনোকষ্টে। কয়েকদিন ধরে তিনি ঝড় বিধ্বস্ত বসিরহাট কেন্দ্রের মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিলিতে ব্যবস্থ ছিলেন। ফিরে এসে ঈদের আগের দিন পার্ক সার্কাস এলাকার গরীব মানুষের মধ্যে বিলি করেছেন সিমাই লাচ্ছা, দুধের প্যাকেট ও চিনি। আর ঈদের সকালে এক বার্তায় তিনি বলেছেন, আজ আমরা সকলে প্রার্থনা করেছি বাংলাবার নিজের প্রাণ ফিরে পাক। সুস্থ হয়ে উঠুক সকলে। এক মুসলিম অধ্যাপক বন্ধু জানিয়েছেন, এই বিষন্নতার মাঝেও ঈদ পালনের একটি নতুন দিকের কথা। তিনি জানিয়েছেন, এবারের ঈদে অনেক বাড়িতেই নামাজের পুরোভাগে ছিলেন মুসলিম নারীরা। অনেক ক্ষেত্রে বাড়িতে তারাই নামাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অথচ অন্যান্য বছর ঈদের নামাজ পড়ার অধিকারটুকুও থাকে না মুসলিম নারীদের। এ নিয়ে আন্দোলনও হয়েছে। আর এই আন্দোলনের অন্যতম অংশীদার বীরভূমের আমোদপুরের বাসিন্দা লেখিকা আয়েশা খাতুন জানিয়েছেন, এবার লকডাউনের সৌজন্যে বাড়ির বেশির ভাগ নারীরা পুরুষদের সঙ্গে নামাজ পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। এটা একাটা বড় প্রাপ্তি। পেশায় স্কুলশিক্ষক ফিরোজ আহমেদ সোমবার ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, আমার স্ত্রীর নেতৃত্বে (সব থেকে যোগ্য বলেই নেতৃত্ব দিয়েছেন) সপরিবার ঈদের নামাজ আদায় করলাম। ইসলাম নারীকে সর্বোচ্চ সম্মান দিতে বলে। আমরা চেষ্টা করলাম। ফিরোজের স্ত্রী স্কুলশিক্ষিকা বেনজির খান জানিয়েছেন, ঈদের নামাজ আমাদের কোনও বছরেই পড়া হয় না। লকডাউন সেই সুযোগ করে দিল। আমার শ্বশুরমশাই আমাকে নামাজের নেতৃত্ব দিতে বলেন। এবারের ঈদের দিনটা সারা জীবন মনে থাকবে। তবে বিধ্বস্ত গ্রামবংলায় ঈদ পালনের যে সব ছবি নেট দুনিয়ায় ঘুরে বেরিয়েছে তাতে দেখা গেছে, ধ্বংসস্তুপের মাঝে দাঁড়িয়ে একাকী অনেকে এক টুকরো কাপড় যোগাড় করে তার উপরে বসে নামাজ আদায় করেছেন। তাদের জোটেনি কোনও বিশেষ খাদ্য। রিলিফের ত্রাণ দিয়েই কাটাতে হয়েছে ঈদের দিনটিও।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status