অনলাইন

টেস্ট কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে কতদিন লাগে?

আলী রীয়াজ

২৬ মে ২০২০, মঙ্গলবার, ১:০১ পূর্বাহ্ন

আমাকে কি কেউ বলতে পারেন যে করোনাভাইরাস টেস্ট কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে কত দিন লাগে? আমি ভাইরোলজিস্ট নই, ডাক্তার নই, জনস্বাস্থ্য বিষয়ে আমার কোনো ধরণের জ্ঞান নেই। সেই কারনেই এই রকম একটা নির্বোধ প্রশ্ন সর্বসমক্ষে করতে হচ্ছে। সারা পৃথিবীতে মহামারি চলছে, বাংলাদেশে এখন সংক্রমনের মাত্রা উর্ধ্বমুখী, মৃত্যুর হার বাড়ছে। সরকারের নিয়োগ দেয়া জাতীয় কারিগরি বিশেষজ্ঞ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন তাঁদের কমিটির সুপারিশ রয়েছে ‘প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ হাজার টেস্ট করতে’।

কিন্ত এখন পর্যন্ত দৈনিক পরীক্ষা হচ্ছে ১০ হাজারের কম। দেশের সবগুলো পিসিআর ল্যাব একত্রিত করলে টেস্টের সামর্থ্য ৩০ হাজারই। তা হলে দাঁড়াচ্ছে যেভাবেই হোক টেস্টের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বাড়াবার একটা উপায় তো হাতেই ছিল। গণস্বাস্থ্যের তৈরি করা কিট। ১৭ মার্চ প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণায় কিট উৎপাদনের কথা জানায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গবেষক ড. বিজন কুমার শীলের নেতৃত্বে ড. নিহাদ আদনান, ড. মোহাম্মদ রাঈদ জমিরউদ্দিন, ড. ফিরোজ আহমেদ এই কিট তৈরি করেন। মনে রাখবেন সেটা হচ্ছে বাংলাদেশে প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হবার ৯ দিনের মধ্যেকার ঘটনা। ১৯ মার্চ কিট উৎপাদনে যায় প্রতিষ্ঠানটি। সেদিন বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। দেখে মনে হয় প্রয়োজনের তাগিদে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছেন কয়েকজন গবেষক – মানুষকে বাচাবার জন্যে তাঁদের যতটুকু সামর্থ্য তাই নিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। পৃথিবীর আর দশটা দেশে যেমন বিজ্ঞানীরা উঠেপরে লেগেছেন ওষুধ এবং টিকা আবিষ্কারের জন্যে ঠিক তেমনি জরুরিভাবেই কাজে নেমেছিলেন এই বিজ্ঞানী দল। তাঁদের এই কিট কাজে দেবে কিনা সেটা তো পরীক্ষা করে দেখার বিষয়। তারা তাঁদের সবটুকু করবেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষ -

যাদের কাজ হচ্ছে পরীক্ষা করা -- তারাও তো বাংলাদেশেরই প্রতিষ্ঠান – তারাও নিশ্চয় একই রকম জরুরি বিবেচনায় এগিয়ে আসবেন সেটাই তো স্বাভাবিক। কিন্ত আমরা এখন সবাই জানি তারপরে কী হয়েছে। গণস্বাস্থ্যে ল্যাবে বিদ্যুত নেই এই খবর পাওয়া গেল ১১ এপ্রিল; ২৫ এপ্রিল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে সরকারকে কিট দেয়ার অনুষ্ঠানে সরকারের কেউ এলেন না। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের কাছে করোনা টেস্টের কিট হস্তান্তর করা হল। তারপরে শুরু হল হাইকোর্ট দেখানো – কিছু লোক এমনভাবে কথা বলতে শুরু করলেন যেন সারা দুনিয়া ২০২০ সালের ১ জানুয়ারিতে আছে – কত আইন, কত নিয়ম, কত পদ্ধতি আছে তার হিসেবের খাতা খুলে আমাদের দেখানোর কাজ নিলেন। গবেষণা তারা করেন কিনা সেটা বড় কথা নয়, তারা যে অনুমোদনের নিয়ম মুখস্ত করেছেন সেটা জানা গেলো। আমলারা কত ধানে কত চাল তাঁর হিসেব দেখিয়ে বুঝিয়ে দিলেন – দিল্লী অনেক দূরে। সেই সব দেখে মনে হল মানুষের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা–তামাশার খেলা শুরু হয়েছে। তারপরে ৩০ এপ্রিল ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের থেকে বিএসএমএমইউ বা আইসিডিডিআর,বিতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্ভাবিত কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য অনুমতি দেওয়া হল। মে মাসের দুই তারিখ কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য বিএসএমএমইউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. শাহীনা তাবাসসুমকে প্রধান করে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হল।

সেই কমিটির পরীক্ষা এখনো শেষ হয়নি। অন্তত আমাদের জানার সুযোগ হয়নি। গণস্বাস্থ্যের বিজ্ঞানীদের জানার সুযোগ হয়নি, এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান জাফরুল্লাহ চৌধূরীরও জানার সুযোগ হয়নি। এই অবস্থায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের’ জন্য মঙ্গলবার (২৬ মে) সময় নির্ধারণ করে। সোমবার (২৫মে) ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর গণস্বাস্থ্যকে ‘অনুরোধ’ করেছে ‘অনুগ্রহ করে এ পরীক্ষা বন্ধ’ করতে। পরীক্ষা বন্ধ হয়েছে। এই অনুরোধ যেদিন আসল সেদিন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা সরকারী হিসেবে ৭৩৩৪ আর মৃতের সংখ্যা সরকারী হিসেবে ৫০১ জন। এর বাইরে যারা পরীক্ষা ছাড়াই মারা গেছেন, উপসর্গে মারা গেছেন তাঁদের হিসেব নিলে সংখ্যা কোথায় দাঁড়াবে তা কেবল অনুমান করতে পারি। ইতিমধ্যেই জানা গেলো যে ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধূরী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে আছেন। জাফরুল্লাহ চৌধুরী সুস্থ্য হয়ে সবার মাঝে ফিরবেন সেটাই প্রত্যাশা। আগামি ১৪ দিন তাকে এই কিট নিয়ে দৌড়ঝাপ করতে দেখতে পাবোনা। এটা কি তা হলে কিটের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালকে পিছিয়ে দেবে? আর জানতে ইচ্ছে হয় ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর এই অনুরোধের কারণ কি? কত দিনের জন্যে অনুরোধ? এখন তো একটা জনস্বাস্থ্য বিষয়ক জরুরি অবস্থার মধ্যে আছে দেশ। এই সময়ে এই অনুরোধের কারণটা কি তারা বলতে পারেন?

বাংলাদেশের সব গণমাধ্যমেই গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে উদ্ধৃত করে এই অনুরোধের কথা বলা হয়েছে – কিন্ত কোনো সংবাদমাধ্যম কি ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরকে জিজ্ঞেস করেছেন - কেন? দেশে জবাবদিহি নেই, কে কিসের সিদ্ধান্ত নেয় বোঝা মুশকিল – কিন্ত প্রশ্ন তো করা যায়। আর হ্যাঁ, এটাও জানতে মন চায় - বিএসএমএমইউ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই কমিটির পরীক্ষা কি শেষ হয়েছে? জনস্বাস্থ্য যখন বিপদে, মহা বিপদে সেই সময়ে এই ধরণের পরীক্ষায় কতদিন লাগে?

---
আলী রীয়াজের (যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর) ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেয়া
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status