বাংলারজমিন

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে দুই বছরের ভাতিজিকে টেঁটাবিদ্ধ করে হত্যা

আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ থেকে

২৩ মে ২০২০, শনিবার, ৮:৩০ পূর্বাহ্ন

কিশোরগঞ্জের ইটনায় দুই বছর বয়সী ভাতিজি স্মৃতি আক্তার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে ছোট চাচা মোহন মিয়া (৩২)। শনিবার বিকালে কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেনের খাসকামরায় মোহন মিয়ার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে ঘাতক চাচা মোহন মিয়াকে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইটনা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আহসান হাবীব আদালতে মোহন মিয়ার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ঘাতক চাচা মোহন মিয়া ইটনা উপজেলার মৃগা ইউনিয়নের জয়সিদ্ধি হাটি গ্রামের মর্তুজ আলীর ছেলে। অন্যদিকে নিহত শিশু স্মৃতি আক্তার ঘাতক মোহন মিয়ার সহোদর ভাই জালাল মিয়ার মেয়ে।
ইটনা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আহসান হাবীব জানান, জয়সিদ্ধি হাটি গ্রামের মর্তুজ আলীর চার ছেলে যথাক্রমে নান্নু মিয়া, দুলাল মিয়া, জালাল মিয়া ও মোহন মিয়া। তাদের সাথে বাড়ির রাস্তা নিয়ে প্রতিবেশী আব্দুর রহিমের পরিবারের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এ রকম পরিস্থিতিতে সম্প্রতি জালাল মিয়া নিজের পুরনো বসতঘর ভেঙ্গে নতুন করে একটি ঘর নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়। ঘরের নির্মাণ কাজ শুরু করার পর গত ২০ই মে দুপুরে আব্দুর রহিম ও তার পক্ষের লোকজন ঘর নির্মাণে বাধা দেয়। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও ঠেলাধাক্কার ঘটনা ঘটে। এ সময় স্থানীয় লোকজন উভয়পক্ষকে নিবৃত্ত করে এবং বিষয়টি বসে শেষ করা হবে সিদ্ধান্ত হয়। দুপুর ২টার দিকে এ ঘটনার পর জালাল মিয়া তার হাঁসের খামারে চলে যায়। অন্যদিকে বড় ভাই নান্নু মিয়া কাজের জন্য অন্যত্র চলে যাওয়ায় তিনি বাড়িতে ছিলেন না। বাড়িতে থাকা দুই ভাই দুলাল মিয়া (৪০) ও মোহন মিয়া প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করতে ফন্দি আঁটে। এক পর্যায়ে তারা সিদ্ধান্ত নেয়, বাড়ির শিশু বাচ্চাদের মধ্যে থেকে কাউকে খুন করে এর দায় প্রতিপক্ষ আব্দুর রহিমদের উপর চাপানো হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ওইদিনই (বুধবার, ২০ই মে) সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে পার্শ্ববর্তী বাড়ির একটি ঘরে ঘুমিয়ে থাকা দুই বছর বয়সী ভাতিজি স্মৃতি আক্তারকে মোহন মিয়া তুলে এনে মাটিতে সজোরে আছড়ে ফেলে। এতে শিশুটি আর্তচিৎকার দিয়ে ওঠলে দুলাল মিয়া ইট দিয়ে শিশুটির মাথায় সজোরে আঘাত করে। এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে মোহন শিশুটির বুকের ডান পাশ দিয়ে সজোরে টেঁটাবিদ্ধ করে। এ সময় দুই ভাই দুলাল ও মোহন সাজানো নাটকের মতো প্রতিপক্ষের লোকজন চড়াও হয়ে শিশুটিকে টেঁটাবিদ্ধ করে মেরে ফেলেছে বলে চিৎকার ও শোরগোল শুরু করে। স্থানীয়রা ছুটে গিয়ে টেঁটাবিদ্ধ শিশুটির মৃতদেহ দেখে হতবাক হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে পরদিন বৃহস্পতিবার (২১শে মে) ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
এদিকে দুই ভাই মিলে এ রকম নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়ে এর দায় প্রতিপক্ষ আব্দুর রহিমদের উপর চাপানোর চেষ্টা করে। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার প্রস্তুতিও নেয় দুলাল-মোহনরা। কিন্তু পুলিশের কুশলী তদন্তে বেরিয়ে আসে প্রকৃত ঘটনা। শুক্রবার রাত পৌনে ১২টার দিকে মৃগা ইউনিয়নের লাইমপাশা বাজারে অভিযান চালিয়ে মোহন মিয়াকে আটক করে পুলিশ। আটকের পর পুলিশের জেরার মুখে পড়ে সত্য প্রকাশ করে মোহন মিয়া। জানায়, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই তারা এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ছক কষেছিল। পরে শনিবার দুপুরে মোহন মিয়াকে কিশোরগঞ্জের আদালতে পাঠানোর পর বিকালে হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দিয়ে সে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
ইটনা থানার ওসি মোহাম্মদ মুর্শেদ জামান বিপিএম জানান, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এমন অমানবিক নৃশংস ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনায় নিহত শিশুর মা ডলি আক্তার বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে ঘাতক দুই চাচা দুলাল মিয়া ও মোহন মিয়াকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এর পরপরই পুলিশ অভিযান চালিয়ে মোহন মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। শনিবার হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এছাড়া পলাতক অপর আসামি দুলাল মিয়াকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status