অনলাইন

আমচাষিদের মাথায় হাত

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে

২১ মে ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৪:৩৫ পূর্বাহ্ন

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে রাজশাহীতে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমের ভরা মৌসুমে এ ঝড় হওয়ায় প্রায় ২০-২৫ শতাংশ আম ঝড়ে পড়েছে। এতে করে হাত পড়েছে আমচাষিদের মাথায়। আম ছাড়াও লিচু, কলা, ভুট্টা, পেঁপে ও ধানসহ অন্যান্য ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী অঞ্চলের চাষিরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীর পুঠিয়া, দুর্গাপুর, বাঘা, চারঘাট, পবা, বাগমারা, গোদাগাড়ী, মোহনপুর ও তানোরেও ঝড়ে আমসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বাঘা-চারঘাট, পুঠিয়া ও দুর্গাপুরে। এই চার উপজেলায় আমচাষ সাধারণত বেশি হয়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ভোর থেকে আমরা আমসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি নিরুপণে মাঠে নামি। তাতে সরেজমিন পর্যবেক্ষণে যেটা দেখেছি তাতে আমাদের ধারণা গড়ে ২০-২৫ শতাংশ আমের ক্ষতি হয়েছে। গড়ে ১৫ শতাংশের কিছু বেশি আম ঝড়ে পড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘রাতেই বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে আমরাই জেলা প্রশাসককে জানিয়েছিলাম যে ২০ শতাংশ আম ঝরে পড়েছে। তবে সকালে আমরা বিভিন্ন বাগান পরিদর্শন করে দেখছি- ক্ষতির পরিমাণ একেক এলাকায় একের রকম। শহরের দিকে ১০ শতাংশ এবং চারঘাট উপজেলায় এসে ১৫ শতাংশ আম ঝরে পড়ার দৃশ্য দেখছি। তবে বাঘায় আমের বাগান বেশি। এখানে ক্ষতির পরিমাণ একটু বেশি হয়েছে। তবে রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলার কয়েকজন আমচাষির সাথে কথা বলে জানা গেছে, কয়েকদিন পরই যেসব আম নামানোর কথা ছিল, তা ব্যাপক হারে ঝরে পড়েছে। এলাকাভেদে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ আম নষ্ট হয়ে  গেছে বলছেন তারা।
চারঘাটের আমচাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ঝড়ে সব শেষ। এবার হয়তো আম নামাতে যেতেই হবে না গাছে। কারণ সব আম ঝড়ে পড়েছে। দুই-চারটা থাকলেও সেগুলোরও বেশিরভাগ ঝড়ের কারণে ফেটে গেছে। ফলে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবার। আমচাষিদের পাশে সরকার না দাঁড়ালে এবার তার বড় ধরনের  লোকসানের মুখে পড়বেন। অনেকই পুঁজি হারিয়ে পথে বসবেন।’ দুর্গাপুরের আমচাষি সোহাগ বলেন, ‘গাছের আম অর্ধেক পড়ে গেছে। দুইটা গাছও উপড়ে গেছে। এই অবস্থায় আমের অনেক ক্ষতি হয়েছে।’ বাঘার আড়ানী পাঁচপাড়া গ্রামের আমচাষি শহিদুল ইসলাম বলেন, গোপালভোগ আম নামানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আজ অথবা আগামীকাল পাড়ার দিনক্ষণও ঠিক করেছিলাম। ঝড়ে গাছ থেকে অর্ধেকের বেশি আম পড়ে গেছে। গাছেও অনেক আম ফেটে ফেটে ঝুলে আছে। আমাদের এ ক্ষতি কেউ পোষাতে পারবে না। পুঠিয়ার শিলমাড়িয়া গ্রামে আমচাষি রইছ উদ্দিন বলেন, খুব কষ্টে এবার আম পরিচর্যা করে টিকিয়ে রেখেছিলাম গাছে। এক ঝড়ে সব শেষ। কয়টা দিন পরই আম নামানোর কথা ছিল। একদম পরিপুষ্ট আম এভাবে নষ্ট হওয়া কোনোভাবে মেনে নিতে পারছি না। ব্যাপক লোকসানে পড়তে হবে। এদিকে রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন বলেন, রাত ২টা ৫৫ মিনিটে আম্পান প্রবেশ করে এই অঞ্চলে। আম্পানের যে গতিবেগ ছিল তা রাজশাহী পৌঁছার আগেই দুর্বল হয়ে পড়ে। ঝড় হিসেবেই রাজশাহী ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রবেশ করে আম্পান। ওই সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৫৯ কিলোমিটার। এর স্থায়িত্ব ছিলো মাত্র তিন মিনিট। এর আগে আম্পানের প্রভাবে বুধবার সন্ধ্যা থেকে রাজশাহীতে শুরু হয় দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীতে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৮১ মিলিমিটার। রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. হামিদুল হক বলেন, ‘সকাল থেকে বিভিন্ন উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপূণে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছিলাম। সেসময় তাদের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে, রাজশাহীর বাগানগুলোতে ২০ শতাংশ আম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বিস্তারিত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পরে জানা যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জেলায় আম-লিচু ছাড়াও বোরো ধান, পানসহ কৃষি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গ্রামাঞ্চল থেকে কিছু বাড়িঘর ভেঙ্গে পড়ার খবরও পেয়েছি। ইউএনও ও কৃষি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা খোঁজ-খবর নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন করবেন। আর এই প্রতিবেদন তৈরী করতে একটু সময় লাগবে।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status