শেষের পাতা
করোনা, একটি চিকিৎসক পরিবার এবং...
সাজেদুল হক
২১ মে ২০২০, বৃহস্পতিবার, ১১:৫৮ পূর্বাহ্ন
ডা. মাশফিক আহমেদ ভূঁঞা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে কর্মরত। লেপারোস্কপি, এনডোস্কপিক সার্জন হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন অল্প বয়সেই। অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন দেশে-বিদেশে। করোনার প্রকোপের শুরু থেকেই এক ধরনের শঙ্কা ছিল। কিন্তু বসে থাকেননি। নিরন্তর চিকিৎসা সেবা দিয়ে গেছেন। তখনও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালু হয়নি। চিকিৎসকরাও প্রয়োজনীয় যথাযথ সুরক্ষা সামগ্রী পাননি। এরইমধ্যে উদ্ভূত জটিল পরিস্থিতিতে অনেক রোগীই নিজেদের লক্ষণ গোপন করে ভর্তি হন হাসপাতালে। তাদের মাধ্যমে আক্রান্ত হন বেশ কয়েকজন চিকিৎসক। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহের কথা। নিজের মধ্যে হালকা লক্ষণ দেখতে পান ডা. মাশফিক আহমেদ। দুই শিশু সন্তান আর স্ত্রী থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলেন। নিজের নমুনা পরীক্ষা করাতে দেন। জানা যায়, করোনায় সংক্রমিত তিনি।
এরচেয়েও খারাপ খবর অপেক্ষা করেছিল ডা. মাশফিকের জন্য। তার স্ত্রী কাকলি হাসমিনা পেশায় চিকিৎসক। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই কর্মরত। এই দম্পতির ঘর আলোকিত করে আছে মুবাশ্বির মুরসালাত রুশো ও তাজমিন মাইসারা কারিমা। ১০ ও চার বছর বয়সী দু’ সন্তান এবং ডা. কাকলির নমুনা পরীক্ষা করতে দেয়া হয়। দুরুদুরু বুকে তারা অপেক্ষা করেন। শেষ পর্যন্ত বড় দুঃসংবাদই আসে। করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে ডা. কাকলি হাসমিনা ও তাদের দুই সন্তানের। ছোট্ট দুই সন্তানের কথা ভেবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন চিকিৎসক বাবা-মা। বাসাতেই তারা নিজেদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। কী ধরনের চিকিৎসা নিয়েছেন জানতে চাইলে ডা. মাশফিক আহমেদ বলেন, এরতো এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই। লক্ষণবেধে আমরা ওষুধ সেবন করেছি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের এক চিকিৎসকেরও পরামর্শ নিয়েছি। তিনি বলেন, আমার কাশি, গলাব্যথা ছিল। তবে সবচেয়ে কষ্টকর ছিল কয়েকদিনের জন্য ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলা। কোনো কিছুরই গন্ধ পাচ্ছিলাম না। এটা ছিল খুবই যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতা। আমার পুরো পৃথিবীটাই বদলে গিয়েছিল। আমরা স্ত্রীর ব্যাক পেইন ছিল। বাচ্চাদের জ্বর ছিল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য এ দুঃসহ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠছেন এই চিকিৎসক দম্পতি। শনাক্তের দুই সপ্তাহ পর তাদের আবার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। প্রথম পরীক্ষায় পরিবারের সবারই নেগেটিভ রেজাল্ট এসেছে। ডা. মাশফিক বলেন, করোনা যেন না হয় সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। কিন্তু হয়ে গেলে আতঙ্কগ্রস্ত হওয়া চলবে না। কারণ এতে কোনো উপকার নেই। বরং ক্ষতি বাড়বে। মানসিকভাবে শক্ত থাকতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শ্বাস-প্রশ্বাসে কোনো সমস্যা হয় কি না সেদিকে খুব খেয়াল রাখতে হবে। তিনি বলেন, আমি হাসপাতালেই সংক্রমিত হয়েছি। আমার স্ত্রী কোথায় হয়েছেন তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। হাসপাতালে হতে পারেন, আবার আমার দ্বারাও হতে পারে। সন্তানরা তো আমাদের দ্বারাই হয়েছে। ওরা তো আর বাইরে যায়নি। তিনি বলেন, শুরুর দিকে সুরক্ষা সামগ্রীর বেশ ঘাটতি ছিল। এখন অবশ্য পরিস্থিতি আগের তুলনায় ভালো। সরকার ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি মাধ্যমেও সুরক্ষা সামগ্রী আসছে। অনেক চিকিৎসক ব্যক্তিগতভাবেও সংগ্রহ করছেন। তিনি বলেন, করোনা যে কারোই হতে পারে। তাই করোনা আক্রান্তদের সঙ্গে কোনো ধরনের অমানবিক আচরণ করা যাবে না। মানবিকতাই পারে এই সংকটকাল অতিক্রম করতে। বর্তমানে অনেক রোগীর চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধু চিকিৎসকদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। ব্যবস্থাপনা ঠিক করতে হবে। আমরা বছরের পর বছর দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে উন্নত না করে বিদেশি ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করেছি। এবার সময় এসেছে নিজের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে বিশ্বমানে উন্নিত করার। আর এজন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। ক্রিকেটে বিশ্বমানের হতে পারলে চিকিৎসায়ও তা সম্ভব। তিনি বলেন, ব্যবস্থাপনা ঠিক না হলে এমন সংকট থেকে বের হওয়া যাবে না। আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাকে এমন পর্যায়ে নিতে হবে যেন কাউকেই আর চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে না হয়।
এরচেয়েও খারাপ খবর অপেক্ষা করেছিল ডা. মাশফিকের জন্য। তার স্ত্রী কাকলি হাসমিনা পেশায় চিকিৎসক। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই কর্মরত। এই দম্পতির ঘর আলোকিত করে আছে মুবাশ্বির মুরসালাত রুশো ও তাজমিন মাইসারা কারিমা। ১০ ও চার বছর বয়সী দু’ সন্তান এবং ডা. কাকলির নমুনা পরীক্ষা করতে দেয়া হয়। দুরুদুরু বুকে তারা অপেক্ষা করেন। শেষ পর্যন্ত বড় দুঃসংবাদই আসে। করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে ডা. কাকলি হাসমিনা ও তাদের দুই সন্তানের। ছোট্ট দুই সন্তানের কথা ভেবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন চিকিৎসক বাবা-মা। বাসাতেই তারা নিজেদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। কী ধরনের চিকিৎসা নিয়েছেন জানতে চাইলে ডা. মাশফিক আহমেদ বলেন, এরতো এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই। লক্ষণবেধে আমরা ওষুধ সেবন করেছি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের এক চিকিৎসকেরও পরামর্শ নিয়েছি। তিনি বলেন, আমার কাশি, গলাব্যথা ছিল। তবে সবচেয়ে কষ্টকর ছিল কয়েকদিনের জন্য ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলা। কোনো কিছুরই গন্ধ পাচ্ছিলাম না। এটা ছিল খুবই যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতা। আমার পুরো পৃথিবীটাই বদলে গিয়েছিল। আমরা স্ত্রীর ব্যাক পেইন ছিল। বাচ্চাদের জ্বর ছিল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য এ দুঃসহ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠছেন এই চিকিৎসক দম্পতি। শনাক্তের দুই সপ্তাহ পর তাদের আবার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। প্রথম পরীক্ষায় পরিবারের সবারই নেগেটিভ রেজাল্ট এসেছে। ডা. মাশফিক বলেন, করোনা যেন না হয় সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। কিন্তু হয়ে গেলে আতঙ্কগ্রস্ত হওয়া চলবে না। কারণ এতে কোনো উপকার নেই। বরং ক্ষতি বাড়বে। মানসিকভাবে শক্ত থাকতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শ্বাস-প্রশ্বাসে কোনো সমস্যা হয় কি না সেদিকে খুব খেয়াল রাখতে হবে। তিনি বলেন, আমি হাসপাতালেই সংক্রমিত হয়েছি। আমার স্ত্রী কোথায় হয়েছেন তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। হাসপাতালে হতে পারেন, আবার আমার দ্বারাও হতে পারে। সন্তানরা তো আমাদের দ্বারাই হয়েছে। ওরা তো আর বাইরে যায়নি। তিনি বলেন, শুরুর দিকে সুরক্ষা সামগ্রীর বেশ ঘাটতি ছিল। এখন অবশ্য পরিস্থিতি আগের তুলনায় ভালো। সরকার ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি মাধ্যমেও সুরক্ষা সামগ্রী আসছে। অনেক চিকিৎসক ব্যক্তিগতভাবেও সংগ্রহ করছেন। তিনি বলেন, করোনা যে কারোই হতে পারে। তাই করোনা আক্রান্তদের সঙ্গে কোনো ধরনের অমানবিক আচরণ করা যাবে না। মানবিকতাই পারে এই সংকটকাল অতিক্রম করতে। বর্তমানে অনেক রোগীর চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধু চিকিৎসকদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। ব্যবস্থাপনা ঠিক করতে হবে। আমরা বছরের পর বছর দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে উন্নত না করে বিদেশি ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করেছি। এবার সময় এসেছে নিজের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে বিশ্বমানে উন্নিত করার। আর এজন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। ক্রিকেটে বিশ্বমানের হতে পারলে চিকিৎসায়ও তা সম্ভব। তিনি বলেন, ব্যবস্থাপনা ঠিক না হলে এমন সংকট থেকে বের হওয়া যাবে না। আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাকে এমন পর্যায়ে নিতে হবে যেন কাউকেই আর চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে না হয়।