বাংলারজমিন

‘আইলার ১১ বছর পর সেই মে-তেই ‘আম্পান, আতঙ্কে খুলনাঞ্চলের উপকুলবাসী

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে

২০ মে ২০২০, বুধবার, ৫:০৪ পূর্বাহ্ন

সুপার সাইক্লোনে রূপ নিয়ে প্রচন্ড শক্তি সঞ্চয় করে উপকূলের দিকে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। উপকূলের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে সুপার সাইক্লোন আম্পান। গত বছরের ৯ নবেম্বরও ঘূর্ণিঝড় বুলবুল এভাবে এসেছিল। এরও আগে ২০০৯ সালের ২৫ মে এসেছিল সর্বনাশা আইলা। এর ১১ বছর পর সেই মে মাসের ২০ তারিখে আসছে আম্পান।
আবহাওয়া অধিদপ্তর এরই মধ্যে মংলা এবং পায়রা সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ১০ থেকে ১৫ ফুট জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে এখন বৈরি আবহাওয়া বিরাজ করছে খুলনাঞ্চলজুড়ে। বৃষ্টির সঙ্গে বইছে দমকা হাওয়া। ক্ষণে ক্ষণে ভারী বৃষ্টিও হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। সময় যতো যাচ্ছে ততোই বাতাসের তীব্রতা বাড়ছে। নদীতে বাড়ছে জোয়ারের পানি এবং উত্তাল অবস্থা বিরাজ করছে। মংলা বন্দরসহ আশপাশের নদীর নৌ-যানগুলো নদীর পাড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়েছে। সকাল থেকে ভারী বৃষ্টিপাত এবং দমকা হাওয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
কয়রা উপজেলার কয়রা সদর, উত্তর বেদকাশী এবং দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের কয়েক জায়গা দিয়ে বেড়িবাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করেছে লোকালয়ে। স্থানীয় মানুষ বেড়িবাঁধের ওপর মাটি দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করছে। তবে আজকের আমাবশ্যার জোয়ারে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় লোকজন। সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনা জেলার কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলাসহ আশপাশের অঞ্চলে বয়ে চলেছে দমকা হাওয়া, হচ্ছে বৃষ্টিপাত। স্থানীয় নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ২-৩ ফুট উচ্চতায় বয়ে চলেছে।
খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবিলার জন্য খুলনায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৩৪৯টি সাইক্লোন শেল্টার। এছাড়াও জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় যেসব পাকা ভবন ও স্কুল কলেজ ভবন রয়েছে সেগুলোকেও শেল্টার হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিতে পারবেন প্রায় ৫ লাখ মানুষ। এছাড়া খুলনা সিভিল সার্জন অফিস ৯টি উপজেলায় ১১৬টি মেডিকেল টিম গঠন করেছে। লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে মাইকিং চলছে। মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে শুরু করেছে।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ বলেন, মঙ্গলবার দুপুর ১টা থেকে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সুপার সাইক্লোন আম্পান বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ সুন্দরবনের কাছ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
খুলনা জেলা ত্রান ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আজিজুল হক জোয়ার্দার বলেন, ‘মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতে কাজ শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। একই সাথে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে-যারা আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করবেন তাদেরকে দুই বেলা খাবার দিতে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা কেন্দ্রগুলোতে খিচুড়ির ব্যবস্থা করেছে। এছাড়াও জেলা সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকেও বিশেষ মেডিকেল টিমকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রয়োজন হলে তারা চিকিৎসা ও পরামর্শ দিবেন। একই সাথে জেলা প্রশাসনের ১৪৬০ জন স্বেচ্ছাসেবী মানুষের সহযোগিতায় কাজ করছে বলে তিনি জানান।’
কয়রার হরিণখোলার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রামটির মানুষ উৎকন্ঠায় রয়েছেন। তারা আশঙ্কা করছেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত হানলে গ্রামের সামনের ছোট্ট বেড়িবাঁধটি ভেঙে যেতে পারে। আর সেটি হলে লোনা পানিতে পুরো এলাকা ভেসে যাবে। দড়ি দিয়ে শক্ত করে ঘর-বাড়ি বেঁধে রাখার চেষ্টা করছেন তারা। অনেকে গরুছাগল নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে গেছেন। হরিণখোলার মতোই ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছেন দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের আংটিহারা, খাসিটানা, জোড়শিং, মাটিয়াভাঙ্গ; উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাতিরঘেরি, গাববুনিয়া, গাজিপাড়া, কাটকাটা, কয়রা সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর কয়রা, ৪ নম্বর কয়রার পুরাতন লঞ্চঘাট সংলগ্ন এলাকা, মদিনাবাদ লঞ্চঘাট, ঘাটাখালি, হরিণখোলা; মহারাজপুর ইউনিয়নের উত্তর মঠবাড়ি, দশালিয়া, লোকা এবং মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের কালিবাড়ি, নয়ানি, শেখেরটেকের বেড়িবাঁধ এলাকা।
কয়রা সদরের ৯ নং ওয়ার্ড মেম্বর হরেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, দুপুরের জোয়ারে বেদকাশীর কাটকাটা গ্রামের পাশ দিয়ে বাঁধ উপচে পানি ঢুকেছে। পরে লোকজন মাটি দিয়ে পানি আটকায়। তবে জলোচ্ছ্বাস আসলে এ বাঁধ টিকবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, কয়রা বাদে অন্যান্য উপজেলার বেড়ি বাঁধ অতটা নাজুক নয়। জলোচ্ছ না হলে বাঁধে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। গেল জোয়ারে নদীতে পানি বেড়েছে। তবে এর থেকে বেশি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা কম বলে তিনি মন্তব্য করেন।

কয়রা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিমুল কুমার সাহা বলেন, 'আম্পানের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও সিপিপিসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে সতকর্তামূলত প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। ১২টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। কয়রা উপজেলা জুড়ে ১১৬টি সাইক্লোন শেল্টার, বিভিন্ন বিদ্যালয়ভবনসহ পাকা ও নিরাপদ স্থাপনা প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয়ের জন্য। পাশাপাশি সাতটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও থানা পুলিশকে নিয়ে আলাদা টিম গঠন করা হয়েছে। নিরাপদ পানি ও খাদ্য মজুত করা হয়েছে।'
এদিকে ঘূর্ণিঝড় আ¤পান’র কারণে মংলা সমুদ্র বন্দরে পণ্য বোঝাই-খালাস ও পরিবহণের কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ বন্দরে বন্দর কর্তৃপক্ষ ‘এলার্ট-৩’ জারী করেছে। মংলা বন্দরে কয়লা ও ক্লিংকারবাহীসহ মোট ১১টি বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করছে। বন্দরের হারবার মাষ্টার কমান্ডার ফখর উদ্দিন জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে জরুরী কন্ট্রোল রুম খুলেছে বন্দর কর্তৃৃপক্ষ। সম্ভাব্য ঝড় মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া অবস্থা বুঝে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি জানান, সংকেত বাড়ার সাথে সাথে জাহাজের পাশে থাকা সব লাইটার জাহাজ ও অন্যান্য নৌযান নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status