বিশ্বজমিন

কোভিড-১৯ নিয়ে সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়াচ্ছেন শ্রীলঙ্কার কর্মকর্তারা

মীনাক্ষি গাঙ্গুলি

১৯ মে ২০২০, মঙ্গলবার, ১০:২৬ পূর্বাহ্ন

শ্রীলঙ্কার দীর্ঘস্থায়ী ও নৃশংস গৃহযুদ্ধের শেষ হয়েছে এগার বছর আগে। কিন্তু ওই সময়ে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিষয়ে সত্যনিষ্ঠ, ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার প্রতিশ্রুতিকে প্রত্যাখ্যান করছে দেশটি। পক্ষান্তরে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেখানে মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও ঘৃণাপ্রসূত বক্তব্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বিষয়ে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বললেই চলে। আর এখন কোভিড-১৯ মহামারিকে সরকার ব্যবহার করছে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়াতে এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারকে লঙ্ঘন করতে।
মুসলিমরা কোভিড-১৯ ছড়াচ্ছে এমন মিথ্যা অভিযোগ তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুসলিমদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বর্জনের আহ্বান জানানো হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকার কোনো কথাই বলছে না। পক্ষান্তরে সরকারের সিনিয়র ব্যক্তিরা প্রকাশ্যে মিথ্যা মন্তব্য করেছেন যে, এই করোনা ভাইরাস বিশেষ করে মুসলিমদের মধ্যে বিদ্যমান। এর ফলে অধিকারকর্মী ও নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলো প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসের কাছে উদ্বেগ জানিয়ে চিঠি লিখেছে। তাতে বলা হয়েছে, এই ঘটনায় মুসলিমদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ উস্কানি দেয়া হচ্ছে, ঘৃণাপ্রসূত বক্তব্য দেয়া হচ্ছে।
এ বছর মার্চে সরকার একটি নির্দেশনা প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন তাদের সবার দেহ পুড়িয়ে ফেলতে হবে, যা ইসলামিক রীতির বিরুদ্ধ। সরকারগুলো যাতে এই কাজ না করে সেজন্য সুপারিশ করে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা। একই সঙ্গে এ কাজের কড়া সমালোচনা করেন জাতিসংঘের চার স্পেশাল র‌্যাপোর্টিউর। তাতে বলা হয়, এটা ধর্মীয় স্বাধীনতার লঙ্ঘন।
মৃতদেহ কবর দেয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ফেসবুকে আর্জি জানিয়েছিলেন সরকারের অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা রামজি রাজিক। এ অপরাধে তাকে ৯ই এপ্রিল গ্রেপ্তার করেছে কর্তৃপক্ষ। এখনও তিনি জেলে আছেন। এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে বেশ কিছু আবেদন জমা রয়েছে আদালতে। শ্রীলঙ্কান মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যমুলক আচরণের অভিযোগ করে সরকারের কাছে চিঠি লিখেছে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন।
২০০৯ সালের ১৮ই মে স্বাধীনতাকামী লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলম (এলটিটিই)-এর পরাজয়ের পর যুদ্ধ পরবর্তী পুনর্জাগরণের বিষয়ে জনগণের সমর্থন রয়েছে। সেখানে সাধারণ জনগণ পুনঃ পুনঃ ঘৃণা প্রতিরোধের বিষয়ে কথা বলেছে। ২০১৯ সালের ২১ শে এপ্রিল ইস্টার সানডে’তে ভয়াবহ বোমা হামলা হয়। এতে ইসলামিক স্টেট বা আইসিসের আদর্শে উদ্বুদ্ধ উগ্রপন্থিরা হত্যা করে কমপক্ষে আড়াইশ মানুষকে। ওই ঘটনার পর সরকার আবার বৈষম্যমুলক নীতি গ্রহণ করে এবং খেয়ালখুশি মতো গ্রেপ্তার করতে থাকে। এমনকি ব্ধৌ নারীদের বন্ধ্যাকরণে মুসলিমদের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত থাকার মিথ্যে অভিযোগে কর্তৃপক্ষ গ্রেপ্তার করে একজন ডাক্তারকে।
গৃহযুদ্ধ চলার সময় প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে। তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আছে। তার বিষয়ে শ্রীলঙ্কার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ে আতঙ্ক রয়েছে। তার প্রশাসনের উচিত ঘৃণার ভয়াবহ উস্কানি বন্ধ করা। তার পরিবর্তে প্রকৃতপক্ষে পুনরেকত্রীকরণের পথ খুঁজে বের করা উচিত।

(লেখিকা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তার লেখার অনুবাদ)
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status