মত-মতান্তর
সব কিছুতে গোলমাল
প্রতীক ওমর
৩০ এপ্রিল ২০২০, বৃহস্পতিবার, ১০:৪২ পূর্বাহ্ন
সময় যত গড়াচ্ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ততো আশঙ্কজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর বিপরীতে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নাগরিক জটলা। প্রশাসন এখন অনেকটাই নিরব। দ্বিধাহীন ভাবেই ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসছে মানুষ। দেশের শহরগুলোতে মানুষের উপস্থিতি নতুন করে আবারও ভাবিয়ে তুলছে সচেতনদের। আসলে পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে? স্থানীয় প্রশাসনের শিথিলতা প্রদর্শন কি কেন্দ্রীয় ইশারায়? খোদ রাজধানী ঢাকার চিত্র দেখে তাই মনে হচ্ছে। ঢাকার রাস্তাগুলোতে আজো রীতিমত মানুষের মিছিল দেখা গেছে। এছাড়াও হঠাৎ করেই আবারো পোশাক কারখানা খুলে দেয়া নিয়ে জনমনে কৌতুহলের সৃষ্টি করেছে। এই কারখানাগুলো খুলে দেয়ার পেছনের উদ্দেশ্য আসলে কি? যে দিন থেকে পোশাক কারখানাগুলো খোলা হলো ঠিক তার পর থেকেই জেলা উপজেলা শহরগুলোর মার্কেট, ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা শুরু হলো।
তাদের যুক্তি হচ্ছে, পোশাক কারখানায় হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করে তার পরেও যদি করোনা ভয় তাদের না থাকে তাহলে আমাদের মত ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুললে কি আর হবে। আমাদেরতো খেতে হবে। বাঁচতে হবে৷ এমন চিন্তা এসব ছোট মাঝারি ব্যবসায়ীদের হতেই পারে। পোশাক শিল্পের সাথে যারা জড়িত তারা নিশ্চিয় বিগত দশ-বিশ বছরে মধ্যে এমন পরিস্থিতিতে পড়েননি। তাদের ব্যবসা কতটা সফল, কতটা লাভ জনক সেই হিসেব এখন মোটামোটি সবার জানা। তাদের এমন কি ক্ষতি হতো যে, এক দুই মাস তাদের কারখানা বন্ধ থাকলে তারা দেউলিয়া হয়ে যাবে? বাংলাদেশের সস্তা শ্রম কাজে লাগিয়ে অর্থের পাহাড়তো কম গড়েননি? মাত্র এক দুই মাস সেই সস্তা শ্রমিকদের বেতন দিতে আপনাদের এতোই কষ্ট শুরু হয়ে গেল? রাষ্ট্রের ঘোষিত প্রণোদনাও এক সময় আপনাদের একাউন্টেই যাবে। তার পরেও গ্রাম থেকে পায়ে হেঁটে দফায় দফায় শ্রমিকদের কারখানা পর্যন্ত আনলেন? এমন কম দামের মানুষদের নিয়ে আপনারা সমাজের চোখে বেশি দামী হয়ে উঠলেও এদের জীবন নিয়ে খেলার অধিকার আপনাদেরকে কিন্তু কেউ দেয়নি মনে রাখা দরকার। চলমান এই কঠিন পরিস্থিতিতে বারবার বলা হচ্ছে ঘরে থাকুন। খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে আসবেন না। উল্টো আপনারা ঘরের বাইরে নয় শুধু, কারখানায় গাদাগাদি করে কাজে যোগ দেয়ালেন লাখো শ্রমিকদের। সরকারে দৃষ্টি বন্ধ এখানে। এবিষয়ে তেমন কোন কথাও রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলদের মুখে বলতে শোনা গেলো না। তাহলে কি আপনাদের সাথে গোপন কথা আগেই সেরেছেন এসব পোশাক ব্যবসায়ীরা? সাধারণ মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়ার পেছনে কি কারণ আছে আমার বোধে আসে না।
এদিকে চলতি মাসের ২৫ তারিখে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাহেবদের আবিষ্কৃত কিট ঔষধ প্রশাসন হাত দিয়েও ছুঁয়ে দেখলো না। মতগত পার্থক্য বিবেচনায় এনে ঔষধ প্রশাসন জঘন্য মানসিকতার পরিচয় দিল তা ক্ষমার যোগ্য নয়। এই বিপদকালীন সময়ে সরকারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যখন ভঙ্গুর চিত্র দৃশ্যমান সেখানে একজন মানুষ বাংলাদেশকে রক্ষার জন্য নিজে থেকে এগিয়ে আসলেন তাকে আপনারা ফিরিয়ে দিলেন জঘন্য ভাবে। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এ বিষয়গুলো নিয়ে গণমাধ্যমকে জানান, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কার্যালয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের করোনা কিটের উদ্ভাবক ড. বিজন কুমার শীলসহ তিনজন এটি জমা দিতে যান। তবে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর তা গ্রহণ করেনি। এমনকি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তিনজনের একজনকে ঔষধ প্রশাসনের কার্যালয়ে প্রবেশও করতে দেয়া হয়নি। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে পরের দিন ২৬ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এসময় তিনি অভিযোগ করেন, সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ব্যবসায়িক স্বার্থে জাতীয় স্বার্থের বিপক্ষে কাজ করছে। নানা অজুহাত দেখিয়ে গণস্বাস্থ্যের (করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ) কিট গ্রহণ করেনি সরকার। তিনি বলেন, ‘আমরা জনগণের স্বার্থে শুধু সরকারের মাধ্যমে পরীক্ষা করে কিটটি কার্যকর কি-না, তা দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সরকারিভাবে প্রতি পদে পদে পায়ে শিকল দেয়ার চেষ্টা হয়েছে।’ ডা.জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দুর্ভাগ্যবশত, ঔষধ প্রশাসন এমনভাবে নিয়ন্ত্রিত হচেছ, তারা না ফার্মাসিস্ট, না ফার্মাকোলজিস্ট। তার ফলে এই জিনিসগুলোর গুরুত্ব সেভাবে তারা উপলব্ধি করতেই সক্ষম হচ্ছেন না। তারা সম্পূর্ণ ব্যবসায়ী স্বার্থ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছেন।’ সরকার আসলে কার স্বার্থ দেখছেন এখানে? মানুষের জীবন যখন হুমকির মুখে ঠিক তখনো রাজনীতির নোংড়ামো চরিত্র প্রদর্শন করছেন? সাধারণ মানুষদের জীবনের নিরাপত্তা দেয়া কি রাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না?
ডা.জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কিট নেবেন না ভালো কথা। পর্যাপ্ত কিটের ব্যবস্থা অন্য কোথাও থেকেওতো করছেন না। ৬৪ জেলার মধ্যে মাত্র ২১ টি জেলায় করোনা পরীক্ষা হচ্ছে। তাও আবার ধীর গতিতে। এসব জেলায় এখনো দিনে ১০০-২০০ নমূনা পরীক্ষা হচ্ছে। বিপুল জনগোষ্ঠির এই দেশে ভয়াবহ ভাইরাস মোকাবেলা করতে এই গতি কতটা কাজে দেবে সেই অনুমান এখন গ্রামের একজন কৃষকও করতে পারে। চিকিৎসা সেবা নিয়ে নতুন করে আর বলার কিছু নেই। ভাষাও নেই। উপরওয়ালাই এখন বাংলাদেশের মানুষের শেষ ভরসা। এটা মেনে নিয়েই মানুষ স্বান্তনা খুঁজছেন। আর করোনা শনাক্ত হলে হাসপাতালে যাওয়ার ভয়ে বাড়ি থেকে পালাচ্ছেন। কারণ ওই রোগী খুব ভালো করেই ওয়াকিবহাল করোনার জন্য যে সব হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে সেই সব হাসপাতাল কতটা অপ্রস্তুত। সেখানে গেলে ওই রোগী কি ধরণের সেবা পাবে তা ইতিমধ্যেই সে জেনে গেছে। সংগত কারণেই এখন করোনা শনাক্তের খবর পাওয়া মাত্রই অনেকেই পালিয়ে আত্মগোপনে যাওয়ার চেষ্টা করছে। জ্বর সর্দির ওষুধ খেয়েই জীবন-মৃত্যু খেলা খেলছে। মূল প্রসঙ্গে আবারো আসি। মানুষ কিন্তু ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছে।
নিজ নিজ যুক্তি উপস্থাপন করেই তারা ঘর থেকে বের হতে বাধ্য হয়েছে। সম্প্রতি আমরা দেশের উত্তরাঞ্জলের কয়েকটি জেলায় খাবারে জন্য রাস্তায় বিক্ষোভ করতে দেখেছি। দিনাজপুর, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, বগুড়াসহ অনেকগুলো জেলাতেই ক্ষুধা নিবারণের জন্য অনেক মানুষ সমাবেত হয়েছে। তারা সবাই ঘরে থাকতে চায় কিন্তু দীর্ঘ দিন ঘরে বসে থাকলে শ্রমজীবী মানুষদের পরিবার চলবে কি করে? পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার দেবে কে? সরকারি ত্রাণের ভয়াবহ অবস্থা ইতিমধ্যেই বিশ্ববাসী দেখেছে। এবিষয়টিও এখন পুরাতন। মানুষ খাদ্য সংকটে পরেছে। খুব সত্য কথা। এনিয়ে কোন উল্টাপাল্টা কথা শুনতে এখন কেউ প্রস্তুত নয়। সব কিছুতে বড় বড় বুলি দিয়ে কাজ হয় না। বাস্তবতা আলাদা জিনিস। মানতে হয়। মোকাবেলা করতে হয়। কয়েক দিন আগেওতো রাষ্ট্রকর্তাদের মুখে বাংলাদেশের উন্নয়ণের বুলি শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে উঠেছিলো। অফিসিয়াল কাজ বাদ দিয়ে বড়বড় ব্যনার টাঙ্গিয়ে উন্নয়ল প্রচার করতে দেখলো জাতি। মাত্র কয়েক দিন পরেই সেই উন্নয়ণ কোথায় গেলো? মধ্যম আয়ের দেশে প্রবেশ করা দেশের মানুষ এক মাসেই অস্থির হয়ে উঠলো কেন?
কত জন মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিৎ করতে পেরেছে রাষ্ট্র? যে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা কত মানুষ পেয়েছে, তাদের কত দিনইবা কেটে যাবে সেই চালে তার খোঁজ কেউ রেখেছে? না। কেউ রাখেনি সেই খোঁজ। খোঁজ রাখেনি কেউ মধ্যবিত্ত শ্রেণির করুণ পরিস্থিতির। আয়ের সব পথ বন্ধ হলেও পেটের ক্ষুধা কোন পরিস্থিতি মানতে নারাজ। যেখানে ক্ষুধার জ্বালা আগুন হয়ে জ্বলে সেখানে করোনার ভয় দেখিয়ে লাভ কি? করোনায় মারা যাওয়ার আগে যদি ক্ষুধায় মারা যায় তাহলেতো আগে ক্ষুধাকেই নিবারণের প্রয়োজন। সেই ক্ষুধা নিবারণের জন্যই কিন্তু মানুষ হুমড়ি খেয়ে বেরিয়েছে কাজের সন্ধানে, খাবারের সন্ধানে। রাষ্ট্র যদি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতো তাহলে মানুষ ঘরেই নিরাপদে থাকতো। তাহলে কি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারার অপারগতা থেকেই লকডাউন শিথিল হচ্ছে? এমন প্রশ্ন দিকবিদ্বিক থেকে উঁকি মেরে উঠছে। কোথাও কোন হিসেবের মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। গড়মিল সবখানে। এমনকি বিটিভির অংক ক্লাশেও সহজ যোগ অংকে ভুল দেখলো গোটা জাতি। এমন ভুল অংকে শিক্ষার্থী আর অভিভাবকদের মাথা চক্কর দেয়ারই কথা।
(লেখক: কবি ও সাংবাদিক)
[email protected]
তাদের যুক্তি হচ্ছে, পোশাক কারখানায় হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করে তার পরেও যদি করোনা ভয় তাদের না থাকে তাহলে আমাদের মত ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুললে কি আর হবে। আমাদেরতো খেতে হবে। বাঁচতে হবে৷ এমন চিন্তা এসব ছোট মাঝারি ব্যবসায়ীদের হতেই পারে। পোশাক শিল্পের সাথে যারা জড়িত তারা নিশ্চিয় বিগত দশ-বিশ বছরে মধ্যে এমন পরিস্থিতিতে পড়েননি। তাদের ব্যবসা কতটা সফল, কতটা লাভ জনক সেই হিসেব এখন মোটামোটি সবার জানা। তাদের এমন কি ক্ষতি হতো যে, এক দুই মাস তাদের কারখানা বন্ধ থাকলে তারা দেউলিয়া হয়ে যাবে? বাংলাদেশের সস্তা শ্রম কাজে লাগিয়ে অর্থের পাহাড়তো কম গড়েননি? মাত্র এক দুই মাস সেই সস্তা শ্রমিকদের বেতন দিতে আপনাদের এতোই কষ্ট শুরু হয়ে গেল? রাষ্ট্রের ঘোষিত প্রণোদনাও এক সময় আপনাদের একাউন্টেই যাবে। তার পরেও গ্রাম থেকে পায়ে হেঁটে দফায় দফায় শ্রমিকদের কারখানা পর্যন্ত আনলেন? এমন কম দামের মানুষদের নিয়ে আপনারা সমাজের চোখে বেশি দামী হয়ে উঠলেও এদের জীবন নিয়ে খেলার অধিকার আপনাদেরকে কিন্তু কেউ দেয়নি মনে রাখা দরকার। চলমান এই কঠিন পরিস্থিতিতে বারবার বলা হচ্ছে ঘরে থাকুন। খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে আসবেন না। উল্টো আপনারা ঘরের বাইরে নয় শুধু, কারখানায় গাদাগাদি করে কাজে যোগ দেয়ালেন লাখো শ্রমিকদের। সরকারে দৃষ্টি বন্ধ এখানে। এবিষয়ে তেমন কোন কথাও রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলদের মুখে বলতে শোনা গেলো না। তাহলে কি আপনাদের সাথে গোপন কথা আগেই সেরেছেন এসব পোশাক ব্যবসায়ীরা? সাধারণ মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়ার পেছনে কি কারণ আছে আমার বোধে আসে না।
এদিকে চলতি মাসের ২৫ তারিখে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাহেবদের আবিষ্কৃত কিট ঔষধ প্রশাসন হাত দিয়েও ছুঁয়ে দেখলো না। মতগত পার্থক্য বিবেচনায় এনে ঔষধ প্রশাসন জঘন্য মানসিকতার পরিচয় দিল তা ক্ষমার যোগ্য নয়। এই বিপদকালীন সময়ে সরকারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যখন ভঙ্গুর চিত্র দৃশ্যমান সেখানে একজন মানুষ বাংলাদেশকে রক্ষার জন্য নিজে থেকে এগিয়ে আসলেন তাকে আপনারা ফিরিয়ে দিলেন জঘন্য ভাবে। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এ বিষয়গুলো নিয়ে গণমাধ্যমকে জানান, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কার্যালয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের করোনা কিটের উদ্ভাবক ড. বিজন কুমার শীলসহ তিনজন এটি জমা দিতে যান। তবে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর তা গ্রহণ করেনি। এমনকি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তিনজনের একজনকে ঔষধ প্রশাসনের কার্যালয়ে প্রবেশও করতে দেয়া হয়নি। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে পরের দিন ২৬ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এসময় তিনি অভিযোগ করেন, সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ব্যবসায়িক স্বার্থে জাতীয় স্বার্থের বিপক্ষে কাজ করছে। নানা অজুহাত দেখিয়ে গণস্বাস্থ্যের (করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ) কিট গ্রহণ করেনি সরকার। তিনি বলেন, ‘আমরা জনগণের স্বার্থে শুধু সরকারের মাধ্যমে পরীক্ষা করে কিটটি কার্যকর কি-না, তা দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সরকারিভাবে প্রতি পদে পদে পায়ে শিকল দেয়ার চেষ্টা হয়েছে।’ ডা.জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দুর্ভাগ্যবশত, ঔষধ প্রশাসন এমনভাবে নিয়ন্ত্রিত হচেছ, তারা না ফার্মাসিস্ট, না ফার্মাকোলজিস্ট। তার ফলে এই জিনিসগুলোর গুরুত্ব সেভাবে তারা উপলব্ধি করতেই সক্ষম হচ্ছেন না। তারা সম্পূর্ণ ব্যবসায়ী স্বার্থ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছেন।’ সরকার আসলে কার স্বার্থ দেখছেন এখানে? মানুষের জীবন যখন হুমকির মুখে ঠিক তখনো রাজনীতির নোংড়ামো চরিত্র প্রদর্শন করছেন? সাধারণ মানুষদের জীবনের নিরাপত্তা দেয়া কি রাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না?
ডা.জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কিট নেবেন না ভালো কথা। পর্যাপ্ত কিটের ব্যবস্থা অন্য কোথাও থেকেওতো করছেন না। ৬৪ জেলার মধ্যে মাত্র ২১ টি জেলায় করোনা পরীক্ষা হচ্ছে। তাও আবার ধীর গতিতে। এসব জেলায় এখনো দিনে ১০০-২০০ নমূনা পরীক্ষা হচ্ছে। বিপুল জনগোষ্ঠির এই দেশে ভয়াবহ ভাইরাস মোকাবেলা করতে এই গতি কতটা কাজে দেবে সেই অনুমান এখন গ্রামের একজন কৃষকও করতে পারে। চিকিৎসা সেবা নিয়ে নতুন করে আর বলার কিছু নেই। ভাষাও নেই। উপরওয়ালাই এখন বাংলাদেশের মানুষের শেষ ভরসা। এটা মেনে নিয়েই মানুষ স্বান্তনা খুঁজছেন। আর করোনা শনাক্ত হলে হাসপাতালে যাওয়ার ভয়ে বাড়ি থেকে পালাচ্ছেন। কারণ ওই রোগী খুব ভালো করেই ওয়াকিবহাল করোনার জন্য যে সব হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে সেই সব হাসপাতাল কতটা অপ্রস্তুত। সেখানে গেলে ওই রোগী কি ধরণের সেবা পাবে তা ইতিমধ্যেই সে জেনে গেছে। সংগত কারণেই এখন করোনা শনাক্তের খবর পাওয়া মাত্রই অনেকেই পালিয়ে আত্মগোপনে যাওয়ার চেষ্টা করছে। জ্বর সর্দির ওষুধ খেয়েই জীবন-মৃত্যু খেলা খেলছে। মূল প্রসঙ্গে আবারো আসি। মানুষ কিন্তু ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছে।
নিজ নিজ যুক্তি উপস্থাপন করেই তারা ঘর থেকে বের হতে বাধ্য হয়েছে। সম্প্রতি আমরা দেশের উত্তরাঞ্জলের কয়েকটি জেলায় খাবারে জন্য রাস্তায় বিক্ষোভ করতে দেখেছি। দিনাজপুর, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, বগুড়াসহ অনেকগুলো জেলাতেই ক্ষুধা নিবারণের জন্য অনেক মানুষ সমাবেত হয়েছে। তারা সবাই ঘরে থাকতে চায় কিন্তু দীর্ঘ দিন ঘরে বসে থাকলে শ্রমজীবী মানুষদের পরিবার চলবে কি করে? পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার দেবে কে? সরকারি ত্রাণের ভয়াবহ অবস্থা ইতিমধ্যেই বিশ্ববাসী দেখেছে। এবিষয়টিও এখন পুরাতন। মানুষ খাদ্য সংকটে পরেছে। খুব সত্য কথা। এনিয়ে কোন উল্টাপাল্টা কথা শুনতে এখন কেউ প্রস্তুত নয়। সব কিছুতে বড় বড় বুলি দিয়ে কাজ হয় না। বাস্তবতা আলাদা জিনিস। মানতে হয়। মোকাবেলা করতে হয়। কয়েক দিন আগেওতো রাষ্ট্রকর্তাদের মুখে বাংলাদেশের উন্নয়ণের বুলি শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে উঠেছিলো। অফিসিয়াল কাজ বাদ দিয়ে বড়বড় ব্যনার টাঙ্গিয়ে উন্নয়ল প্রচার করতে দেখলো জাতি। মাত্র কয়েক দিন পরেই সেই উন্নয়ণ কোথায় গেলো? মধ্যম আয়ের দেশে প্রবেশ করা দেশের মানুষ এক মাসেই অস্থির হয়ে উঠলো কেন?
কত জন মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিৎ করতে পেরেছে রাষ্ট্র? যে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা কত মানুষ পেয়েছে, তাদের কত দিনইবা কেটে যাবে সেই চালে তার খোঁজ কেউ রেখেছে? না। কেউ রাখেনি সেই খোঁজ। খোঁজ রাখেনি কেউ মধ্যবিত্ত শ্রেণির করুণ পরিস্থিতির। আয়ের সব পথ বন্ধ হলেও পেটের ক্ষুধা কোন পরিস্থিতি মানতে নারাজ। যেখানে ক্ষুধার জ্বালা আগুন হয়ে জ্বলে সেখানে করোনার ভয় দেখিয়ে লাভ কি? করোনায় মারা যাওয়ার আগে যদি ক্ষুধায় মারা যায় তাহলেতো আগে ক্ষুধাকেই নিবারণের প্রয়োজন। সেই ক্ষুধা নিবারণের জন্যই কিন্তু মানুষ হুমড়ি খেয়ে বেরিয়েছে কাজের সন্ধানে, খাবারের সন্ধানে। রাষ্ট্র যদি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতো তাহলে মানুষ ঘরেই নিরাপদে থাকতো। তাহলে কি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারার অপারগতা থেকেই লকডাউন শিথিল হচ্ছে? এমন প্রশ্ন দিকবিদ্বিক থেকে উঁকি মেরে উঠছে। কোথাও কোন হিসেবের মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। গড়মিল সবখানে। এমনকি বিটিভির অংক ক্লাশেও সহজ যোগ অংকে ভুল দেখলো গোটা জাতি। এমন ভুল অংকে শিক্ষার্থী আর অভিভাবকদের মাথা চক্কর দেয়ারই কথা।
(লেখক: কবি ও সাংবাদিক)
[email protected]