মত-মতান্তর

করোনায় টালমাটাল বিশ্ব অর্থনীতি

তাহিন আক্তার

৮ এপ্রিল ২০২০, বুধবার, ১:০৮ পূর্বাহ্ন

গোটা বিশ্বকে এক মহাদুর্যোগের মুখে ঠেলে দিয়েছে করোনা ভাইরাস। মহামারি এই ভাইরাসে বিশ্ব আজ স্থবির। যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। বাংলাদেশেও এই বিপর্যয়কারী ঢেউয়ের আঘাত লাগতে শুরু করেছে। বাংলাদেশে প্রায় প্রতিটি খাত ক্ষতির মুখে পড়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অর্থনীতি সংস্থা করোনার কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনীতির দেশ চীন ইতিমধ্যে প্রথমবারের মতো প্রান্তিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি সংকোচনে পড়েছে। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা মহাদেশের শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলোও করোনার প্রভাবে ভোক্তা চাহিদায় পতন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সবমিলিয়ে বিশ্ব অর্থনীতির সার্বিক বিকাশে লাগাম টেনে ধরার হুমকি তৈরি হয়েছে। তবে চলতি মাসেই কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে চীন। কলকারখানাগুলোও খুলতে শুরু করেছে। করোনা ভাইরাসের ধাক্কা মোকাবেলা করা ও সেখান থেকে আসার সামর্থ্য রয়েছে তাদের।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক খাতের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেন ও ইতালিতে করোনার সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি। এই পরিস্থিতিতে তারা পোশাক নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে পোশাকপণ্যের অর্ডার তারা স্থগিত ও বাতিল করেছে।  সামনে এই সব দেশের অর্থনীতিতেও মন্দা দেখা দেবে। এতে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে সরাসরি প্রভাব পড়বে। যেসব দেশ থেকে আমদানি-রপ্তানি করা হয় সব দেশই করোনায় আক্রান্ত। ফলে সামগ্রিকভাবে বহির্খাতে যে পারফরম্যান্স, সামনের দিকে তার নেতিবাচক প্রভাব দৃশ্যমান হয়েছে। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার হিসাব মতে, ২০২০ সালে সারা বিশ্বে করোনার প্রভাবে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ শতাংশ কমতে পারে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মতে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বে আনুমানিক ২ দশমিক ৫ কোটি লোক তাদের চাকরি হারাতে পারে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে করোনা ভাইরাসের আঘাত কত বড় হবে, তা নির্ভর করবে কতদিন এ ভাইরাসের প্রকোপ থাকে, তার ওপর। পুরো বিশ্বই বিভিন্নভাবে চীনের ওপর নির্ভরশীল। চীননির্ভর পণ্যের মূল্য বেড়ে গিয়ে তা দেশের মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দেবে। একইসঙ্গে দেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারায় আঘাত হানতে পারে। করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে পোশাকশিল্প। এ শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বন্ধ রয়েছে। নতুন করে আমদানি করা না গেলে কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হবেন অনেকেই।

ইতিমধ্যে ইউরোপ মহাদেশের সেবাখাত পুরোপুরি ধসে পড়েছে। এতদিন পর্যন্ত আর্থিক শ্লথতা ও উৎপাদনে ধসের মতো ধাক্কা সামলানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে মহাদেশটির সেবাখাতের সমৃদ্ধি। প্রকৃতপক্ষে, এতদিন ইউরোপীয় অর্থনীতির শেষ প্রতিরক্ষা লাইনের দায়িত্ব পালন করেছে সেবাখাত। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে পড়া থেকে শুরু করে দেশের পর দেশ লকডাউনে চলে যাওয়ার কারণে সেবাখাতও ইউরোপের বিপর্যয় ঠেকানোর সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।

ফ্রান্স এরই মধ্যে জনগণকে টিকিয়ে রাখার জন্য অপরিহার্যগুলো ছাড়া আর সব ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে। স্পেন এরই মধ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। সেখানে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। জার্মানি এখন পর্যন্ত জাতীয় পর্যায়ে লকডাউনের ঘোষণা দেয়নি। তবে সীমান্ত আংশিক বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া দেশটির রাজধানী বার্লিনেও এখন বেশকিছু কঠোর নিয়মকানুনের প্রয়োগ করা হচ্ছে। এখন মহামন্দা ইউরোপে অবশ্যম্ভাবী। বিশে^র এমন টালমাটাল অবস্থায় বাংলাদেশের অর্থনীতিও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। ইতিমধ্যে মুখ থুবড়ে পড়েছে পর্যটন ও ভ্রমণ খাতের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। সারা বিশ্বে বন্ধ হয়েছে এয়ারলাইন্স। তার প্রভাবে বন্ধ হয়ে গেছে হোটেল, রিসোর্ট, ক্রুজলাইন, রেস্টুরেন্ট ও ক্ষুদ্রব্যবসায়ী ট্যুর অপারেটর ও ট্রাভেল এজেন্সি। এছাড়া চীনের অর্থায়নে বাস্তবায়নের পথে আছে বাংলাদেশের অনেক মেগা প্রকল্প। যেমন- পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ, ঢাকা-আশুলিয়া ফ্লাইওভার, পটুয়াখালী পায়রা তাপ বিদ্যুকেন্দ্রসহ ২৭টি প্রকল্প। এগুলো করোনার কারণে নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন না হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। ব্যাংকিং খাতেও করোনার প্রভাব বিরাজমান। কারণ, বৈদেশিক লেনদেন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকে ঋণপত্র খুলতে হয়। ঋণপত্র ব্যাংকের আয়ের অন্যতম একটি উৎস। চীনের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ এবং অনেক কারখানা বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা এলসি/ঋণপত্র খুলতে আগ্রহী নয়। ফলে ব্যাংক মুনাফা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।  করোনাভাইরাস যদি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে বাংলাদেশও চরম ক্ষতির মুখে পড়বে।   
(লেখক: শিক্ষার্থী, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।)
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status