বাংলারজমিন

করোনার প্রভাবে পাট ও চিংড়ি রপ্তানিতে ধস

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে

৫ এপ্রিল ২০২০, রবিবার, ৫:০৪ পূর্বাহ্ন

করোনার প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলে সরকারি বেসরকারি পাটকল ও চিংড়ি রপ্তানিতে ধস নেমেছে। এরই মধ্যে অঘোষিত লকডাউনে বন্ধ রয়েছে পাটকল ও মাছ কোম্পানিগুলো। উৎপাদিত চিংড়ি বিক্রয় করতে পারছে না খামারিরা। সেই সাথে প্রতিনিয়ত কমছে চিংড়ির বাজার দর। কাঁচাপাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি বন্ধ থাকায় লোকসানের বোঝা বাড়ছে পাটকলগুলোতে।
জানা যায়, গত পাঁচ বছরে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয় জুট মিলে এক হাজার ৪৭৫ কোটি ৫৭ লাখ ১৫ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। বর্তমানেও মজুরি কমিশনসহ সবমিলে আরও প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার মতো বকেয়ার বোঝা মাথায় রয়েছে। করোনার কারণে মিলগুলোতে উৎপাদন ও রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত জুট মিলগুলোর ভবিষ্যৎ এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।

অপরদিকে মৎস্য মান নিয়ন্ত্রণ ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র তথ্য মতে, সর্বশেষ গত ২৫ ও ৩০ মার্চ মংলা বন্দর থেকে দু’টি জাহাজে ইউরোপের বাজারে সাত কন্টেইনার (প্রায় ৭০ মেট্রিক টন) চিংড়ি রপ্তানি হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় দুই জাহাজে চিংড়ি রপ্তানি হতো ৩০ থেকে ৩৫ কন্টেইনার। এছাড়া ২০১৯ সালের মার্চে দক্ষিণাঞ্চল থেকে চিংড়ি রপ্তানি হয়েছিলো ১৩১৫ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য ছিলো ১০৪ কোটি টাকা। সেখানে চলতি বছরের মার্চে চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে ৯৯৫ মেট্রিক টন। যা গত বছরের তুলনায় ৩২০ মেট্রিক টন কম।

জানা যায়, দেশের উপকূলীয় জেলা খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায় প্রতিবছর প্রায় দুই লাখ ৭৬ হাজার হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ হয়। চাষের সঙ্গে জড়িত রয়েছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ। খুলনার কয়রা বাগালি ইউনিয়নের বাগদা চাষি মফিজুল ইসলাম জানান, গরমের কারণে ঘের-পুকুরে চিংড়ি মরতে শুরু করেছে। এছাড়া ঘেরের পানি কমে যাওয়া, পোনা ও খাবার সঙ্কট, কর্মচারীদের বেতন সব মিলিয়ে বড় ধরনের লোকসানে পড়েছেন খামারিরা।

শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর এলাকার চিংড়ি ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির জানান, মার্চ-এপ্রিল মাসে বাগদা চাষিরা আড়ত ও রপ্তানিকারকদের কাছে চিংড়ি বিক্রয় করে। কিন্তু করোনার কারণে আড়ত বন্ধ থাকায় চিংড়ি অবিক্রীত থাকছে। এছাড়া বড় সাইজের যে চিংড়ি কেজি প্রতি ৬০০-৭০০ টাকা দরে বিক্রয় হতো সেই চিংড়ি এখন ৪৫০-৫০০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। ফলে খামারিরা কর্মচারীদের বেতনও দিতে পারছে না।

মৎস্য মান নিয়ন্ত্রণ ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো’র কর্মকর্তা তৌফিক মাহমুদ বলেন, সঙ্কটটা বড় আকার ধারণ করবে আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে। আমদানিকারকদের অনেকে চিংড়ির শিপমেন্ট বাতিল করছেন বা অপেক্ষা করতে বলছেন। ফলে চিংড়ি রপ্তানিতে বড় ধরনের আঘাত মোকাবেলা করতে হবে।

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) সূত্র জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত মাত্র চার বছরে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয় জুট মিলে এক হাজার ৪৭৫ কোটি ৫৭ লাখ ১৫ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুরাদ হোসেন জানান, করোনার কারণে মিলগুলো বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকরা মজুরি না পাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। পাশাপাশি উৎপাদন ও রপ্তানি বন্ধ থাকায় সার্বিক পরিস্থিতি অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status