অনলাইন

সর্বনাশা করোনা-

কুনমিংয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সন্তানের জন্য যশোরে মায়ের 'অন্তহীন' অপেক্ষা!

মিজানুর রহমান

৩ এপ্রিল ২০২০, শুক্রবার, ১০:০১ পূর্বাহ্ন

চীনের ইউনান প্রদেশের চেনগং শহরে (কুনমিংয়ের অদূরে) মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় বিদায়ী সপ্তাহে প্রাণ হারিয়েছেন এক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। করোনার ধাক্কা সামলে ওঠা চীনের গুরুত্বপূর্ণ ওই শহরে নিত্যপণ্যের বাজার-সদাই করে মোটর বাইক যোগে ছাত্রাবাসে ফিরছিলেন তিনি। পথে বাইকটির নিয়ন্ত্রণ হারালে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি একটি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার। চীনে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্ট ছাইয়েদুল ইসলাম মানবজমিনকে জানিয়েছেন দু'বছরের বেশি সময় ধরে চীনে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছিলেন 
নিহত মোঃ ময়নুদ্দিন ওরফে মঈন (২২)। ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ২য় বর্ষে (৪র্থ সেমিস্টারে) ছিলেন তিনি। যশোর জেলার চৈাগাছা উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের আব্দুল মালেক ও নাসিমা বেগমের একমাত্র ছেলে মঈন। চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি। সহপাঠি সূত্রে প্রকাশ-
সন্তানের আচমকা এমন মৃত্যুতে বুকে পাথর চাপা অবস্থা মায়ের, বাবা পাগলপ্রায়। তাদের এখন একটাই চাওয়া সন্তানের লাশটা পাওয়া। আদরে মানুষ ছেলেটার মুখখানিতে শেষবারের মত একটা চুমু খেতে চান জনমদুখিনী মা। আদরের ছোট্ট ভাইটির মায়াভরা মুখটি একনজর দেখতে চান বোনত্রয়। ঘনিষ্ঠজন, কাছের-দূরের আত্মীয়রাও অপেক্ষায় তাদের মেধাবী সন্তানকে ছুঁয়ে দেখার, যে অল্পদিনে নানা কাজে, নানানভাবে তার দীপ্তিময় দ্যুতি ছড়িয়েছে যশোরের চৈাগাছার রামকৃষ্ণপুর গ্রাম থেকে কুনমিংয়ের চেনগং অবধি।
কিন্তু না, সেই সূযোগটা খুব সহজে হয়ত পাবেন না তারা।

কারণ প্রাণঘাতি করোনার বিস্তার ঠেকাতে চীনসহ গোটা দুনিয়ার সঙ্গে এই মুহুর্তে বাংলাদেশের বিমান যোগাযোগ বন্ধ। কার্গো ফ্লাইট চালু থাকলেও লাশ পরিবহনের সূযোগ খুব একটা নেই। নিরাশাজনক ওই অবস্থায় কুনমিংয়ের  বাংলাদেশ কনস্যুলেট চেষ্টা করছে। ঢাকায় দফায় দফায় তারা যোগাযোগ করছেন, কথা বলছেন। সন্তানের লাশের জন্য যশোরের প্রত্যন্ত এক পল্লীতে দিবারাত্রী 'অন্তহীন' আপেক্ষায় থাকা মা-বাবাকে একটু আশার বাণী শোনানোর প্রচেষ্টাও  ছিল  কূটনীতিকদের।

ট্যানেলের শেষপ্রান্তে যত সামান্য যেটুকু আশার আলো তারা দেখেছেন  সেটাই হয়ত শোকাহত পরিবারকে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। কনস্যুলেটের তরফে বলা হয়েছে, মঈনের লাশটি মরচুয়ারিতে কিছু দিন রাখা গেলে একটা ব্যবস্থা হতে পারে। চীন থেকে আকাশ পথে বাংলাদেশে মরদেহ পরিবহনকারী থাই এয়ারের ফ্লাইট শিগগির খোলার আশা আছে। তবে গোটা বিষয়টি নির্ভর করবে বাংলাদেশে এখনও সুপ্তপ্রায় করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে বাক নেয়- তার ওপর। তবে মায়ের সেই অপেক্ষার সময় যে ফুরাতে চাইবে না, বাংলাদেশি  কূটনীতিকরা স্বজন-সহপাঠিদের আগাম সেটাও বলে দিয়েছেন। ধারণা দিয়েছেন মাস খানকও অপেক্ষা করতে হতে পারে!

নোট: মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার পরপরই বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মঈনকে উদ্ধার করে চেনগং ফাস্ট অ্যাফিলিয়েট হসপিটাল অফ কুনমিং ইউনিভার্সিটিতে নেয়া হয়। কিন্তু সেখানে চিকিতসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে রাত ১১টায় মৃত্যু কোলে ঢলে পড়ে তিনি। বর্তমানে তার মরদেহ ওই হাসপাতালের মর্গেই রাখা হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status