খেলা

যেদিন রাকিবুলের পরামর্শ মেনে ‘শাপ’ কাটিয়েছিলেন মিয়াঁদাদ

স্পোর্টস ডেস্ক

৩১ মার্চ ২০২০, মঙ্গলবার, ৫:০৭ পূর্বাহ্ন

অপার সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি বাংলাদেশের জন্ম এক গৌরবময় আখ্যানে। ১৯৭১-এ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পাকিস্তানকে পরাজিত করে বিশ্ব মানচিত্রে নাম খোদাই করে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের দেশটি। তবে ক্রিকেটপাগল বাংলাদেশের জন্ম আরো পরে। আজ থেকে ৩৪ বছর আগে শ্রীলঙ্কার মাটিতে। প্রতিপক্ষ সেই পাকিস্তান। ১৯৮৬ সালের ৩১শে মার্চ ইমরান খানের দলের বিপক্ষে এশিয়া কাপের ম্যাচে দেশের প্রথম অধিনায়ক হিসেবে টস করতে নামেন গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। এরপর অনেক অঘটন, চমক উপহার দিয়ে আজকের এই পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। কেমন ছিল প্রথম ওয়ানডে তথা প্রথম অফিসিয়াল ম্যাচের স্মৃতি? বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছিল।
১৯৮৬’র এশিয়া কাপে বাংলাদেশ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর। ভারত ততদিনে একটা বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছে। পাকিস্তান বিশ্বকাপ জিততে না পারলেও পরাশক্তি। আর শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট অনেকটাই এগিয়ে গেছে। উল্লেখ্য, ৮৬’র ওই আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারাই।
সেদিন কেমন খেলেছিল বাংলাদেশ, সেটি পরে আসছে। আগে টসের সময়কার ঘটনা উল্লেখ করা প্রয়োজন। ম্যাচের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ টস। ওই ম্যাচে কোনো টস হয়নি বলে দাবি করে থাকেন অনেকে। এমনটাও বলা হয়ে থাকে, লিপু আগে ব্যাট করতে চাইলে ইমরান খান বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ের সুযোগ দেন। তবে টস হয়েছিল।
ভারতীয় ক্রিকেটপোর্টাল ক্রিকবাজকে টসের স্মৃতি নিয়ে লিপু বলেছেন, ‘ইমরান খান যখন টস করতে এলেন আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না তিনি প্রস্তুত কি না। কারণ তার গায়ে ছিল প্র্যাকটিস গেয়ার আর আমার গায়ে ম্যাচ জার্সি। তিনি জানালেন, টসের জন্য আমাদের পিচে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। এটা আমরা বাউন্ডারি লাইনেই করতে পারি। তখনকার সময়ে টসের সময় আম্পায়ারের উপস্থিতি নিয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। অধিনায়করা প্রায়ই টস সেরে আম্পায়ারকে জানাতো।
টিভি ব্রডকাস্টার খুব কম ছিল ওই এশিয়া কাপে। টস টিভিতে দেখানো হয়নি। এখনকার দিনের তুলনায় অত আনুষ্ঠানিকতাও হয়নি। আগের রাতে বৃষ্টি হওয়ায় উইকেটে প্রচুর ময়েশ্চার ছিল। আর তখনকার দিনে উইকেট ভালোভাবে ঢেকে রাখা হতো না। আমরা আগে বোলিং চেয়েছিলাম। কিন্তু টসে হেরে ব্যাটিং করতে হলো। শক্তিশালি পেস অ্যাটাকের সামনে ওটা ছিল অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। টস হারার পর ড্রেসিংরুমে সবার মাঝে কিছুটা হতাশা নেমে আসে। তবে কেউ ভীত ছিলাম না। লড়াই করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাস্তবতা হলো স্কিল ও অভিজ্ঞতায় ওদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে ছিলাম আমরা।’
ওই সময় বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের সবার চেস্ট গার্ড কিংবা হেলমেট ছিল না। পাকিস্তানি পেসারদের মোকাবিলা করতে হবে বলে লিপু শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডের সহায়তায় একটি চেস্ট গার্ড কিনে আনেন। ওই ম্যাচে প্রথমবারের মতো অনেকেই চেস্টগার্ড পরে খেলতে নামেন। ৪৫ ওভারের ম্যাচে ওয়াসিম আকরাম, ইমরান খান, আব্দুল কাদিরদের নিয়ে গড়া পাকিস্তানের বিশ্বমানের বোলিং লাইনআপের সামনে ৩৫.৩ ওভার টিকতে পেরেছিল টাইগাররা। স্কোরবোর্ডে জমা হয় মোটে ৯৪ রান। এর মধ্যে ৩৭ রানই চারে নামা শহীদুর রহমানের। ছয়ে নামা রফিকুল আলম ও সাতে নামা গোলাম ফারুক প্রত্যেকে করেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪ রান। ওপেনার রাকিবুল হাসান ৫ ও নুরুল আবেদীন আউট হন ০ রানে। অধিনায়ক লিপুও রানের খাতা খুলতে পারেননি। বর্তমান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর ব্যাট থেকে আসে ৬ রান।
বাঁহাতি ওয়াসিম ৯ ওভারে ২ মেডেন দিয়ে ১৯ রানে তুলে নেন ৪ উইকেট। অধিনায়ক ইমরান খানের শিকার ১১ রানে ২ উইকেট। লেগস্পিনার আব্দুল কাদির ১৫ রানে ৩ উইকেট আর একটি উইকেট নেন জাকির খান।
জবাব দিতে নেমে ওপেনার মুদাসসার নজরের অপরাজিত ৪৭ রানের সুবাদে ৩২.১ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় পাকিস্তান। বাংলাদেশের হয়ে ২ উইকেট নেন জাহাঙ্গীর শাহ। একটি উইকেট অধিনায়ক লিপুর।
পাকিস্তানের ব্যাটিং ইনিংসের সময় আরেকটি স্মরণীয় ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশের তখনকার দলের সেরা ওপেনার রাকিবুল হাসানের জবানিতে উঠে এসেছে সেটি। রাকিবুল বলেন, ‘‘এশিয়া কাপের আগে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার সঙ্গে টেস্ট সিরিজ খেলে। ওই সিরিজে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু একটা বলেছিলেন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান জাভেদ মিয়াঁদাদ। এ নিয়ে স্বাগতিক দর্শকদের সঙ্গেও বেঁধে যায় তার। মিয়াঁদাদ ক্ষেপে ব্যাট নিয়ে দর্শকদের মারতে গ্যালারিতে ছুটে যান। এ ঘটনা বেশ বড় করে ছাপা হয় সংবাদপত্রে। আর লঙ্কান সমর্থকদের চক্ষুশূল হয়ে পড়েন মিয়াঁদাদ। হোটেল থেকে মার্কেট যেখানেই যেতেন ওটা নিয়ে কথা শুনতে হতো তাকে। ইমরান খান আমাকে এটা বলেছেন।
এমনকি আমাদের ম্যাচেও দৃশ্যটা পাল্টায়নি। ম্যাচে হাজার চারেক দর্শক ছিল। যাদের সিংহভাগ ছিল আমাদেরই সমর্থক। মিয়াঁদাদ ব্যাটিং করার সময় দশর্করা তাকে বিরক্ত করতে থাকে। আমি তার নিকটেই ফিল্ডিং করছিলাম। এক পর্যায়ে সে আমাকে বলে বসে, দেখো, পাবলিক যদি এসব করতে থাকে আমি কীভাবে ব্যাটিং করবো? কল্পনাও করিনি পরিস্থিতি এতটা খারাপ হবে।
তখন আমি মিয়াঁদাদকে বললাম, ‘কান ধরে ক্ষমা চাও’। হয়ত এটা কাজে আসতে পারে। মিয়াঁদাদ দ্রুত তার ব্যাটটা মাটিতে রাখলো এবং কানে ধরে দর্শকদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলো। এটা ম্যাজিকের মতো কাজে দিয়েছিল। দর্শকটা তখন দুয়োর বদলে হাততালি দেয়। পরিশেষে স্ট্যান্ডিং ওভেশন।’’   
 
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status