বিশ্বজমিন
কে ওই নিল ফার্গুসন?
মানবজমিন ডেস্ক
২৩ মার্চ ২০২০, সোমবার, ১০:৫৫ পূর্বাহ্ন
গত মঙ্গলবার ইম্পেরিয়াল কলেজের অধ্যাপক নিল ফার্গুসনের ইনবক্সে একটি ইমেল এসেছে। এর প্রেরক লন্ডনের ওই কলেজটির প্রেসিডেন্ট অ্যালিস গ্যাস্ট। অধ্যাপক ফার্গুসনের কাছে মিস এলিসের দুটি কথা বলার ছিল। এলিস জানেন, কে এই নিল? মহামারি বিশেষজ্ঞ হিসেবে কতটা প্রভাবশালী তিনি। আটলান্টিকের উভয় পাশে তার নামটি এখন নীতিনির্ধারকদের মুখে মুখে। কারণ তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য উভয় দেশে করোন ভাইরাস প্রতিরোধের কৌশল পুনঃনির্ধারণে ভূমিকা রেখেছেন। অ্যালিস বলেন, আপনি যা করছেন তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এখন কিছুটা বিশ্রাম নিন। কিন্তু অ্যালিস হয়তো এটাও জানেন যে, নিল ফার্গুসনের কাজ আটলান্টিকের দুই পাড়েই সীমিত নেই। আটলান্টিক পেরিয়ে ভারত মহাসাগর তীরবর্তী দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকেও নাড়া দিয়েছে। ফার্গুসন ও ইম্পেরিয়াল কলেজ হঠাৎ করেই বিখ্যাত হয়নি। ভাইরাসের ওপর গবেষণা ও যথা পূর্বাভাস প্রদানে তাদের উজ্জ্বল রেকর্ড আছে। তাই তারা যখন বলেছে, সামাজিক দূরত্ব ও স্বেচ্ছা আইসোলেশন ব্যবস্থা কার্যকর করা সম্ভব না হলে বৃটেনে আড়াই লাখ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ১২ লাখ লোক মারা যেতে পারে। এর ভিত্তি হলো তার নেতৃত্বাধীন উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ দলের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি সমীক্ষা। তখন আটলান্টিকের দুই তীর কেঁপে উঠেছে। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সরকারের করোনা বিরোধী টিমে যুক্ত আছেন নিল ফার্গুসন । তিনি প্রধানমন্ত্রীর করোনা বিষয়ক মুখ্য উপদেষ্টা।
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে নিল ফার্গুসনকে দেখা গেছে। এতে উপস্থিত থাকতে গিয়ে তিনি নিজেই আক্রান্ত হন। বেশ কয়েকদিন তিনি স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। বৃটিশ মিডিয়া বলেছে, ইংল্যান্ড রাতারাতি লকডাউন এবং সামাজিক দূরত্বের নীতির দিকে শতকরা ১৮০ ডিগ্রি ঝুঁকে পড়তে প্রস্তুত ছিল না। কিন্তু ইম্পেরিয়াল কলেজের অধ্যাপক নিল ফার্গুসনের সমীক্ষার ফলকে অগ্রাহ্য করার উপায় ছিল না। সবথেকে বেশি যিনি এই সমীক্ষার ফলকে গুরুত্ব দেন তিনি প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে তিনি তার সরকারের ধীরে চলো নীতিতে পরিবর্তন আনেন। কোন বয়সের নাগরিক, কে কোথায় কেমন করে থাকবেন, এমন খুঁটিনাটি বিষয়ও প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে ব্যাখ্যা করেন। গত ৪ঠা মার্চ সেই লন্ডন থেকেই দেশে ফিরেছিলেন সিলেটের ৬১ বছরের নারী। আরো অনেকের মতো তিনিও বিনা বাধায় ফটক পেরিয়ে আসেন। দীর্ঘ ১৮ দিন পরে গতকালই তার নমুনা ঢাকায় পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিল সিলেটের প্রশাসন। কিন্তু তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও লন্ডন থেকে যারা ফিরেছেন, তাদের ওপর নজরদারি চলমান আছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে, আতংক ছড়ানো আর বিপদের আশংকায় উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে পারা দুটি ভিন্ন বিষয়। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিলে কি হতে পারে, তার উদাহরণ তৈরি করেছে চীনের উহান রাজ্যের সবথেকে কাছের প্রতিবেশী সিঙ্গাপুর, হংকং, তাইওয়ান এবং দক্ষিণ কোরিয়া। অধ্যাপক নিল ফার্গুসনের হুঁশিয়ারিমুলক সমীক্ষা রিপোর্ট নীতিনির্ধারকরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেয়ার ফল কি হতে পারে, তার সুফল পাচ্ছে বৃটেন। তদুপরি বিশ্ববাসী মনে করে, জনসন সরকার বিলম্ব করেছেন। যা ইতিমধ্যে অপূরণীয় ক্ষতি করেছে।
লন্ডনের ফিন্যান্সিয়াল টাইমস নিল ফার্গুসনের ওপর একটি বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। উল্লিখিত ইমেইল সংক্রান্ত রিপোর্ট তাদেরই। অধ্যাপক আলিসের বর্ণনায় ‘তার (ফার্গুসনের) প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া সাধারণ ছিল। তিনি আমাকে তার পুরো দলের কাছে ফরোওয়ার্ড করতে পারেন, এমন একটি ইমেইল দিতে বলেন। কারণ তিনি খুব কলের্জিয়াল একাডেমিক। একা কৃতিত্ব নিতে চান না। তখন তিনি হতবাক করা তথ্য দিলেন। তিনি আমাকে বলেছেন যে, তার শুকনো কাশি হয়েছে।’
এটি একটি ক্লাসিক করোন ভাইরাস লক্ষণ ছিল। প্রফেসর ফার্গুসন খুব দ্রুত জ্বরে পড়লেন। গত বুধবার সকালে তিনি টুইট করছিলেন যে, তিনি তার কেন্দ্রীয় লন্ডনের ফ্ল্যাটে সাত দিনের বিচ্ছিন্নতা মেনে নিয়েছেন। একটি টেস্ট রিপোটে বলল তিনি যে ভাইরাস বিষয়ক মডেলিং দ্বারা ওই বিপুল লোকের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন, এটা তেমনই একটি ভাইরাস। নিল ফার্গুসন দ্রুত বুঝতে পেরেছিলেন যে, উহানের ভাইরাসটি বিধ্বংসী ক্ষমতা নিয়ে আঘাত হানবে।
আশির দশকের শেষে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন তিনি। তখন মনে করা হতো তিনি একজন পদার্থবিদ হবেন। স্নাতকোত্তরে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছিলেন পদার্থ বিজ্ঞানে। এরপর তিনি কোয়ান্টাম থিওরি অব গ্রাভিটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পিএইচডি করেন। তার ডক্টরাল পিএইচডি সুপারভাইজার জন হুইটার বলেন, আমার দেখা সেরা মেধাবী ছাত্র ফার্গুসন। তিনি অত্যন্ত চৌকস। একদিন সে এসে বলল, জন, আমি ভেবে দেখলাম, তাত্ত্বিক পদার্থবিদ আমি হতে চাই না। কারণ সেটা হওয়ার মতো যথেষ্ট স্মার্ট তিনি নন। তাই বিশ্বের প্রকৃত সমস্যা সমাধানে তার মধ্যে যে মডেলিং স্কিল আছে, তার প্রয়োগ ঘটাতে চান তিনি। সে কারণে তিনি গাণিতিক জীববিদ্যায় মনোযোগ দিতে চান। তখনকার বিখ্যাত সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ রয় অ্যান্ডারসনের সান্নিধ্যে আসেন। তিনি তার টিম নিয়ে অক্সফোর্ড থেকে ইম্পেরিয়ালে আসার সময় ফার্গুসন যুক্ত হন। সেটা ২০০০ সালের শেষাশেষি। এর পরপরই ফুট এন্ড মাউথ ডিজিজ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। এই সময়ে প্রথমবারের মতো ফার্গুসন কম্পিউটার মডেলিং শুরু করেছিলেন। আর তাতে সফল হন। তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে।
তিনি ইতিমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্ব ব্যাংক এবং বিভিন্ন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন।
ফিন্যানসিয়াল টাইমস লিখেছে, বিশ্ব এখন ফার্গুসন ও তার টিমের উদ্ভাবিত কম্পিউটার মডেলের ওপর নির্ভরশীল, যা বিশ্ব এর আগে কখনো দেখেনি। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন প্রফেসর হুইটার। তার কথায়, আমি ফার্গুসনের সমীক্ষার ফলাফলকে সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিই। কারণ তার প্রতিটি কাজ নিখুঁত, যত্নে ও দায়িত্বশীলতার ছাপ স্পষ্ট।
আগামীকাল পড়ুন: কি আছে ফার্গুসনের সমীক্ষায়?
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে নিল ফার্গুসনকে দেখা গেছে। এতে উপস্থিত থাকতে গিয়ে তিনি নিজেই আক্রান্ত হন। বেশ কয়েকদিন তিনি স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। বৃটিশ মিডিয়া বলেছে, ইংল্যান্ড রাতারাতি লকডাউন এবং সামাজিক দূরত্বের নীতির দিকে শতকরা ১৮০ ডিগ্রি ঝুঁকে পড়তে প্রস্তুত ছিল না। কিন্তু ইম্পেরিয়াল কলেজের অধ্যাপক নিল ফার্গুসনের সমীক্ষার ফলকে অগ্রাহ্য করার উপায় ছিল না। সবথেকে বেশি যিনি এই সমীক্ষার ফলকে গুরুত্ব দেন তিনি প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে তিনি তার সরকারের ধীরে চলো নীতিতে পরিবর্তন আনেন। কোন বয়সের নাগরিক, কে কোথায় কেমন করে থাকবেন, এমন খুঁটিনাটি বিষয়ও প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে ব্যাখ্যা করেন। গত ৪ঠা মার্চ সেই লন্ডন থেকেই দেশে ফিরেছিলেন সিলেটের ৬১ বছরের নারী। আরো অনেকের মতো তিনিও বিনা বাধায় ফটক পেরিয়ে আসেন। দীর্ঘ ১৮ দিন পরে গতকালই তার নমুনা ঢাকায় পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিল সিলেটের প্রশাসন। কিন্তু তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও লন্ডন থেকে যারা ফিরেছেন, তাদের ওপর নজরদারি চলমান আছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে, আতংক ছড়ানো আর বিপদের আশংকায় উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে পারা দুটি ভিন্ন বিষয়। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিলে কি হতে পারে, তার উদাহরণ তৈরি করেছে চীনের উহান রাজ্যের সবথেকে কাছের প্রতিবেশী সিঙ্গাপুর, হংকং, তাইওয়ান এবং দক্ষিণ কোরিয়া। অধ্যাপক নিল ফার্গুসনের হুঁশিয়ারিমুলক সমীক্ষা রিপোর্ট নীতিনির্ধারকরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেয়ার ফল কি হতে পারে, তার সুফল পাচ্ছে বৃটেন। তদুপরি বিশ্ববাসী মনে করে, জনসন সরকার বিলম্ব করেছেন। যা ইতিমধ্যে অপূরণীয় ক্ষতি করেছে।
লন্ডনের ফিন্যান্সিয়াল টাইমস নিল ফার্গুসনের ওপর একটি বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। উল্লিখিত ইমেইল সংক্রান্ত রিপোর্ট তাদেরই। অধ্যাপক আলিসের বর্ণনায় ‘তার (ফার্গুসনের) প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া সাধারণ ছিল। তিনি আমাকে তার পুরো দলের কাছে ফরোওয়ার্ড করতে পারেন, এমন একটি ইমেইল দিতে বলেন। কারণ তিনি খুব কলের্জিয়াল একাডেমিক। একা কৃতিত্ব নিতে চান না। তখন তিনি হতবাক করা তথ্য দিলেন। তিনি আমাকে বলেছেন যে, তার শুকনো কাশি হয়েছে।’
এটি একটি ক্লাসিক করোন ভাইরাস লক্ষণ ছিল। প্রফেসর ফার্গুসন খুব দ্রুত জ্বরে পড়লেন। গত বুধবার সকালে তিনি টুইট করছিলেন যে, তিনি তার কেন্দ্রীয় লন্ডনের ফ্ল্যাটে সাত দিনের বিচ্ছিন্নতা মেনে নিয়েছেন। একটি টেস্ট রিপোটে বলল তিনি যে ভাইরাস বিষয়ক মডেলিং দ্বারা ওই বিপুল লোকের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন, এটা তেমনই একটি ভাইরাস। নিল ফার্গুসন দ্রুত বুঝতে পেরেছিলেন যে, উহানের ভাইরাসটি বিধ্বংসী ক্ষমতা নিয়ে আঘাত হানবে।
আশির দশকের শেষে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন তিনি। তখন মনে করা হতো তিনি একজন পদার্থবিদ হবেন। স্নাতকোত্তরে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছিলেন পদার্থ বিজ্ঞানে। এরপর তিনি কোয়ান্টাম থিওরি অব গ্রাভিটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পিএইচডি করেন। তার ডক্টরাল পিএইচডি সুপারভাইজার জন হুইটার বলেন, আমার দেখা সেরা মেধাবী ছাত্র ফার্গুসন। তিনি অত্যন্ত চৌকস। একদিন সে এসে বলল, জন, আমি ভেবে দেখলাম, তাত্ত্বিক পদার্থবিদ আমি হতে চাই না। কারণ সেটা হওয়ার মতো যথেষ্ট স্মার্ট তিনি নন। তাই বিশ্বের প্রকৃত সমস্যা সমাধানে তার মধ্যে যে মডেলিং স্কিল আছে, তার প্রয়োগ ঘটাতে চান তিনি। সে কারণে তিনি গাণিতিক জীববিদ্যায় মনোযোগ দিতে চান। তখনকার বিখ্যাত সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ রয় অ্যান্ডারসনের সান্নিধ্যে আসেন। তিনি তার টিম নিয়ে অক্সফোর্ড থেকে ইম্পেরিয়ালে আসার সময় ফার্গুসন যুক্ত হন। সেটা ২০০০ সালের শেষাশেষি। এর পরপরই ফুট এন্ড মাউথ ডিজিজ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। এই সময়ে প্রথমবারের মতো ফার্গুসন কম্পিউটার মডেলিং শুরু করেছিলেন। আর তাতে সফল হন। তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে।
তিনি ইতিমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্ব ব্যাংক এবং বিভিন্ন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন।
ফিন্যানসিয়াল টাইমস লিখেছে, বিশ্ব এখন ফার্গুসন ও তার টিমের উদ্ভাবিত কম্পিউটার মডেলের ওপর নির্ভরশীল, যা বিশ্ব এর আগে কখনো দেখেনি। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন প্রফেসর হুইটার। তার কথায়, আমি ফার্গুসনের সমীক্ষার ফলাফলকে সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিই। কারণ তার প্রতিটি কাজ নিখুঁত, যত্নে ও দায়িত্বশীলতার ছাপ স্পষ্ট।
আগামীকাল পড়ুন: কি আছে ফার্গুসনের সমীক্ষায়?