প্রথম পাতা

সিএএ-বিরোধী ছবি প্রকাশ করায় বাংলাদেশি ছাত্রীকে ভারত ছাড়ার নির্দেশ

মানবজমিন ডেস্ক

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, শুক্রবার, ৯:৩২ পূর্বাহ্ন

নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের (সিএএ) প্রতিবাদ বিক্ষোভের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করার পর ‘সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে’ অংশ নেয়ার অভিযোগে বিশ্ব ভারতীতে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি ছাত্রী অপ্সরা আনিকা মীমকে ভারত ছাড়তে বলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এ জন্য তাকে সময় দেয়া হয়েছে ১৫ দিন। এ বিষয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্র 
মন্ত্রণালয়ের ফরেনার্স রিজিয়নাল রেজিস্ট্রেশন অফিস, কলকাতা থেকে অপ্সরার নামে একটি চিঠি ইস্যু করা হয়েছে ১৪ই ফেব্রুয়ারি। তা বুধবার হাতে পেয়েছেন অপ্সরা। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী অপ্সরা আনিকা মীম এস-১ (ছাত্র) ভিসার অধীনে বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গে বিশ্বভারতীতে ব্যাচেলর অব ডিজাইন কোর্সে অধ্যয়ন করছেন। তাকে সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত দেখা গেছে। এমন কর্মকাণ্ড তার ভিসা দেয়ার শর্তের লঙ্ঘন। এর মধ্যদিয়ে তিনি ভিসায় দেয়া শর্ত লঙ্ঘন করেছেন। এ খবর দিয়েছে প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য টেলিগ্রাফ। এতে বলা হয়েছে, তাকে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেয়ার বিষয়ে অবহিত নয় কলকাতায় বাংলাদেশ হাইকমিশন। এ বিষয়ে তাদের করণীয় খুব সামান্যই বলে জানানো হয়েছে।
চিঠিতে তাকে নোটিশ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে ভারত ছাড়তে বলা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে বিশ্বভারতীর একজন শিক্ষার্থী প্রশ্ন রাখেন, যদি বিদেশি শিক্ষার্থীরা তার কোনো বন্ধুদের সঙ্গে বিক্ষোভ করতে না পারেন, মন্তব্য করতে না পারেন, তাহলে আমার প্রশ্ন- আমরা কি তাহলে একটি গণতান্ত্রিক দেশে বাস করছি?
মীম ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে কলাভবনে প্রথম বর্ষ আন্ডারগ্রাজুয়েটের ছাত্রী। তিনি ফেসবুকে প্রতিবাদ বিক্ষোভের ছবি পোস্ট করার কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ট্রোলের শিকার হন। বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার মেয়ে মীম ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাইন আর্টস বিভাগে ব্যাচেলর অব ডিজাইন ডিগ্রিতে পড়াশোনা করতে ২০১৮ সালের শেষের দিকে ভারতে যান। ডিসেম্বরে নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেশকিছু র‌্যালিতে অংশ নেন শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি অংশ।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০ বছর বয়সী অপ্সরা ‘ভারত ছাড়ার’ ওই নোটিশ হাতে পেয়েছেন বুধবার। এরপরই তার শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় তিনি হতাশা প্রকাশ করেছেন। অপ্সরা বলেছেন, আমি এখনো বুঝতে পারছি না যে, কি অন্যায় আমি করেছি, যার জন্য আমাকে এমন শাস্তি পেতে হচ্ছে। আমার অনেক বন্ধু প্রতিবাদ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল। তারই কয়েকটি ছবি আমি কৌতূহলবশত পোস্ট করেছিলাম। যখন দেখলাম সামাজিক যোগাযোগ মিডিয়ায় একটি বিশেষ গ্রুপের লোকজন আমাকে ট্রোল করছে, তখন তাৎক্ষণিকভাবে আমি ফেসবুকে আমার অ্যাকাউন্টকে বিকল করে দিয়েছি। প্রকৃতপক্ষে আমি নিরপরাধ। ডিপার্টমেন্ট থেকে যখন বুধবার ওই চিঠি হাতে পাই, তখন এক অন্ধকার আমাকে গ্রাস করে নিচ্ছিল। আমি তো একজন আর্টিস্ট হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বভারতীতে পড়াশোনা করতে এসেছিলাম। জানি না এখন আমার কী হবে।
অপ্সরার এক বন্ধু বলেছেন, সিএএ-বিরোধী কোনো র‌্যালিতে অংশ নেননি অপ্সরা। কিন্তু বে-খেয়ালে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কয়েকটি ছবি পোস্ট করেছেন। এসব ছবি ডানপন্থি কিছু মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে এবং তারা তাকে নিয়ে তিরস্কার করেছে। দাবি তুলেছে, তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে। ওই বন্ধুটি আরো বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কমপক্ষে আড়াইশ’ পোস্টে অপ্সরাকে ভারতবিরোধী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অবহিত নয় বলে কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের সূত্রগুলো জানিয়েছেন। একটি সূত্র বলেছেন, তবে আমরা এটা জানি যে, তিনি (অপ্সরা) নজরদারি বা স্ক্যানারের অধীনে আছেন। এ বিষয়ে ঢাকায় ঊর্ধ্বতন মহলকে জানানো হয়েছে। এমন ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় খুব সামান্যই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীদের একটি অংশ সন্দেহ করছে কেউ হয়তো অপ্সরার বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েছে তার ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে। সূত্রগুলো বলেছেন, কেন্দ্র থেকে অপ্সরাকে দুটি ই-মেইল পাঠানো হয়। প্রথম ই- মেইল পাঠানো হয় ১৪ই ফেব্রুয়ারি। এতে তাদের সঙ্গে তাকে ১৯শে ফেব্রুয়ারি সাক্ষাৎ করতে বলা হয়। পরের ই-মেইল পাঠানো হয় ২০শে ফেব্রুয়ারি। এতে ২৪শে ফেব্রুয়ারি তাকে অফিসে রিপোর্ট করতে বলা হয়। এ বিষয়ে অপ্সরা বলেছেন, নিয়মিত আমি ই-মেইল চেক করি না। কিন্তু ওই চিঠি পাওয়ার পর আমি ই-মেইল চেক করেছি।
একজন শিক্ষক বলেছেন, এই মেয়েটির কোনো সাক্ষাৎকার নেয়া হয়নি। এমনকি তাকে কোনো সুযোগও দেয়া হয়নি। ১৪ই ফেব্রুয়ারি যে চিঠি পাঠানো হয়েছে এর অর্থ হলো ওই চিঠিটি প্রস্তুত করাই ছিল। এ সময়েই তাকে কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বলা হয়েছিল।
এখন কিছু বন্ধুর সঙ্গে ফরেনার্স রিজিয়নাল রেজিস্ট্রেশন অফিস, কলকাতার কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা অপ্সরার। তারা গতকাল বৃহস্পতিবারই ওই কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করার অনুরোধ করবেন বলে জানানো হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status