বাংলারজমিন

হেমনগর রেলস্টেশন

রাতে মাদকসেবীদের আখড়া দিনে চলে ফসল মাড়াই

ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, শুক্রবার, ৮:০৯ পূর্বাহ্ন

দিনের বেলায় কৃষিপণ্য মাড়াই আর রাতের বেলায় ভ্রাম্যমাণ পতিতা ও মাদকসেবীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতু জামালপুর রেল লাইনের টাঙ্গাইলের হেমনগর রেলস্টেশন। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে স্টেশনটি বন্ধ থাকায় এ ধরনের অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অফিস কক্ষের গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামাদি। চুরি হচ্ছে মালামাল। গত ২৬শে জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ঢাকা-জামালপুর নতুন দু’টি ট্রেন উদ্বোধন করলেও এর সুফল পাচ্ছেন না এলাকাবাসী।
সরজমিন জানা যায়, যমুনা সার সরবরাহসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করার লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালের শেষদিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জামালপুরের এক জনসভায় তারাকান্দী-বঙ্গবন্ধু সেতু-পূর্ব পর্যন্ত মিটার গেজ লিঙ্ক রেলপথ স্থাপনের ঘোষণা দেন। পরে ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে ২০০০ সালে এর কাজ শুরু হয়। ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১১ সালে রেল লাইনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। ২০১২ সালের ৩০শে জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্রেনযাত্রার মাধ্যমে এর উদ্বোধন করেন। ৪২ কিলোমিটার এ রেললাইনে ৫২টি ব্রিজ-কালভার্ট ও ৪টি রেলস্টেশন নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে টাঙ্গাইলের হেমনগর রেলস্টেশনটি অন্যতম। উদ্বোধনের আড়াই থেকে তিন বছর স্টেশনটি চালু থাকলেও বিগত পাঁচ বছর ধরে তা বন্ধ রয়েছে। হাবিবুর রহমান নামে একজন গেটম্যান ছাড়া নেই কোনো জনবল। ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অফিস কক্ষের গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামাদি। চুরি হয়ে যাচ্ছে মালামাল দিনের বেলায় কৃষি পণ্য মাড়াই আর রাতের বেলায় ভ্রাম্যমাণ পতিতা ও মাদকসেবীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। স্টেশনটিতে নেই কোনো যাত্রী ছাউনি। একমাত্র টয়লেট থাকলেও নেই কোনো পানি সরবরাহের ব্যবস্থা। আবাসিক ভবনে ময়লা আবর্জনা-আগাছা বিদ্যমান থাকায় যেখানে সেখানে রাতের বেলায় মলমূত্র ত্যাগ করছে। লাইটিং না থাকায় রাতের বেলা ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। মাদকাসক্ত ও জুয়াড়িরা নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে এ রেলস্টেশনের প্লাটফর্ম ও আশেপাশের এলাকা। পরিত্যক্ত ভবন ও আশেপাশের ঝোপঝাড়েও ভ্রাম্যমাণ পতিতাবৃত্তির অভিযোগ রয়েছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অফিস কক্ষের গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামাদি। চুরি হয়ে যাচ্ছে মালামাল। দুর্বৃত্তরা ভেঙে ফেলছে জানালার কাচ।
এদিকে এ রেললাইন দিয়ে চলাচল করা বাহাদুরাবাদ, ধলেশ্বরী, লোকাল ট্রেনসহ গত ২৬শে জানুয়ারি যোগ হয়েছে জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেন। যা প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন। কিন্তু জনবলের অভাবে পুরো স্টেশন এখন অরক্ষিত, অভিভাবকহীন। টিকিট মাস্টার না থাকায় যাত্রীরা এখান থেকে কোটায় অথবা স্ট্যান্ডিং টিকিট সংগ্রহ করতে পারছে না। কেউ কেউ ১০ কিলো দূরে ভূঞাপুর অথবা ১৫ কিলো দূরের সরিষাবাড়ী স্টেশন থেকে টিকিট সংগ্রহ করেন। কিন্তু জনবল সংকটের অজুহাতে হেমনগর রেলওয়ে স্টেশন পাঁচ বছর ধরে বন্ধ রাখায় হাজার হাজার যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে স্টেশনটি বন্ধ থাকায় বর্তমানে এটি মাদকসেবীদের আড্ডায় পরিণত হয়েছে। যেন দেখার কেউ নেই। টিকিট না পেয়ে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে যাত্রীরা। স্টেশনটি দ্রুত চালু করে যাত্রীদের ভোগান্তি দূর করার দাবি এলাকাবাসীর।
৫ বছর ধরে স্টেশন বন্ধ ও মাদকের কথা স্বীকার করে স্টেশনের একমাত্র কর্মচারী গেটম্যান হাবিবুর রহমান জানান, এলাকার লোকজনই সবকিছু করে। এতে আমার কিছু করার নেই। কিছু বললে আমার ওপর হুমকি আসে। চালু থাকলে এমনটি হতো না। দ্রুত স্টেশনটি চালু হওয়া দরকার। লেখক ও গবেষক মামুন তরফদার জানান, আবাদযোগ্য ভূমি চাষাবাদের অভাবে যেমন পরিত্যক্ত হয়ে যায় এ স্টেশনের অবস্থাও তাই হয়েছে। মাদকসেবী আর ভ্রাম্যমাণ পতিতাদের আড্ডায় রূপান্তর হয়েছে। স্টেশনটি চালু হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। মাদকসেবীদের আঁখড়া ধ্বংস হবে। প্রাণ ফিরে পাবে স্টেশনটি। কমবে ভোগান্তি। নিশ্চিত হবে যাত্রীসেবার মান। টাঙ্গাইল জেলা রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম জানান, জনবল সংকটসহ বেশকিছু ত্রুটির কারণে স্টেশনটি বন্ধ থাকায় নানান ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। স্টেশনটি চালুর চেষ্টা চলছে। চালু হলে সব সমস্যার সমাধান হবে।
মাদকসেবীদের আঁখড়ার কথা স্বীকার করে বঙ্গবন্ধু সেতু-পূর্ব স্টেশনের মাস্টার মাসুম আলী খান জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত স্টেশনটি চালু করা হবে। যাতে যাত্রীদের ভোগান্তি দূর হয়। প্রাণ ফিরে পায় স্টেশনটি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status