ভারত

আতঙ্কে কাঁপছে দিল্লি, দেখামাত্র গুলির নির্দেশ, নিহত ২২

কলকাতা প্রতিনিধি

২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, বুধবার, ১০:০৬ পূর্বাহ্ন

টানা তিন দিন ধরে চলছে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ। ফলে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে  উত্তর-পূর্ব দিল্লির বিভিন্ন  এলাকা। অভিযোগ, একদল মানুষ লাঠি, রড নিয়ে মুসলিমদের উপর সংঘবদ্ধভাবে আক্রমণ চালাচ্ছে। পুড়িয়ে দিচ্ছে মুসলিমদের বাড়িঘর ও দোকান। বহু জায়গাতেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জারি করা হয়েছে কারফিউ। ইতিমধ্যেই সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২। আহত হয়েছে ২৫০-এর বেশি মানুষ। মঙ্গলবার ৬৭ কোম্পানি আধাসামরিক বাহিনীকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিয়োগ করা হয়েছে। সেনাবাহিনীকেও তৈরি রাখা হয়েছে। বুধবার সকালের দিল্লি পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার দাবিতে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাতে জড়ো হয়েছিলেন জামিয়া ও জেএনইউয়ের ছাত্ররা। তারা দিল্লি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি দাবি তোলেন। তার সঙ্গে সাক্ষাত করতে চান।

যারা সহিংসতা উস্কে দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। এ বিক্ষোভে যোগ দেন জেএনইউয়ের শিক্ষার্থীরা, এলামনাই এসোসিয়েশন অব জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া এবং জামিয়া কো-অর্ডিনেশন কমিটির সদস্যরা। রাত সাড়ে তিনটার দিকে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান প্রয়োগ করে। ওদিকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। তাই তিনি সেনা মোতায়েনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখছেন। পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শনে মঙ্গলবার মধ্যরাতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল হিংসা কবলিত এলাকায় গিয়েছিলেন। উত্তর-পূর্ব দিল্লির পুলিশের ডেপুটি কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকও করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। পরিস্থিতির খোঁজখবর নেন তিনি।

সূত্রের খবর, পুলিশকে হিংসা দমনে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। দিল্লির হিংসা নিয়ে খবর সম্প্রচারের উপরে সংবাদমাধ্যমগুলিকে নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। বলা হয়েছে, এমন কোনও খবর প্রকাশ করা যাবে না, যা হিংসায় মদত জোগাতে পারে। এদিকে, পুলিশ দাবি করেছে, হিংসায় যুক্ত থাকার অভিযোগে ২০ জনকে আটক করেছে। উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে ঢোকার ৩টি পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দিল্লি পুলিশের স্পেশাল কমিশনার জানিয়েছেন, জাফরাবাদ ও মৌজপুর চক থেকে বিক্ষোভকারীদের তুলে দেয়া হয়েছে। রবিবার থেকে জাফরাবাদ মেট্রো স্টেশনের সামনে মহিলারা নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসির বিরুদ্ধে অবস্থান শুরু করার পর থেকেই নাগরিকত্ব আইনের পক্ষ নিয়ে একদল আক্রমণ শুরু করে।

এরপর থেকেই শহরের ভজনপুরা ও মৌজপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় নাগরিকত্ব আইনের বিরোধী ও সমর্থকদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়। একে অপরকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি করেছে। তবে জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিয়ে একদল যুবক বেপরোয়াভাবে আগুন লাগানো থেকে শুরু করে আন্দোলনকারীদের উপর আক্রমণ চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন।

সেখানেই আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিল্লি পুলিশের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। মঙ্গলবার রাতে নজিরবিহীনভাবে দিল্লি হাইকোর্ট দিল্লি পুলিশকে এক নির্দেশে উপদ্রুত এলাকা থেকে আহতদের নিরাপদে হাসপাতালে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করতে বলেছেন। জানা গেছে, আজ সুপ্রিম কোর্টেও দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে শুনানি হবে । ওদিকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল বলেছেন, তিনি দিল্লির পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীপরিষদকে অবহিত করেছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status