দেশ বিদেশ

এবার ঢাবি-রাবি’র ‘না’ কী করবে ইউজিসি?

পিয়াস সরকার

২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, মঙ্গলবার, ৯:১৮ পূর্বাহ্ন

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুদের ভোগান্তি লাঘবে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে বুয়েটসহ চারটি প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় ই পরীক্ষায় নিজেদের না রাখার ঘোষণা দিয়েছে। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাইরে রেখে কীভাবে উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।

দেশে বর্তমানে ৪৬ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এরমধ্যে ৩৯ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৬০ হাজার আসনের বিপরীতে লড়বেন ৮ লাখেরও অধিক শিক্ষার্থী। এই পরীক্ষার আগে দেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সমন্বিত বা গুচ্ছ পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। আর চলতি শিক্ষাবর্ষ (২০২০-২১) থেকে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আগেই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও চট্টগাম বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সিদ্ধান্ত জানায়। আর গতকাল কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষায় ‘না’ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্বকীয়তা ধরে রেখে পূর্বের নিয়মে শিক্ষার্থী বাছাই করবে দেশসেরা বিদ্যাপীঠটি। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা ও সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধের ইস্যুতে গতকাল একাডেমিক কাউন্সিলের বিশেষ সভা ডাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে এ সভায় অধ্যাপক, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও ইনস্টিটিউটের পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানী বলেন, একাডেমিক কাউন্সিল কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষায় না যাওয়ার বিষয়ে মত দিয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা জানান, কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষায় যাচ্ছে না রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যরা রাজি হননি। ফলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তার চলমান নিজস্ব নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় উপস্থিত একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সভায় কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার সব দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাতন্ত্রবোধ অক্ষুন্ন রাখার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে আলোচনায়। এছাড়া সভায় ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা, গুণমান, স্বচ্ছতা ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঝুঁকিসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। সভায় উপস্থিত সদস্যদের কণ্ঠভোটে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

ইউজিসি সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা বাস্তবায়নে ইউজিসি উদ্যোগ নিয়েছে। তবে ইউজিসি এটাকে বাস্তবায়ন করবে না। বাস্তবায়ন করবেন শিক্ষকরাই। ইউজিসি শুধু ফেসিলেটরের দায়িত্ব পালন করবে। ইউজিসি চায় সকল বিশ্ববিদ্যালয় এই পরীক্ষায় আসুক।

আরো জানা যায়, প্রেসিডেন্ট কয়েকবার সম্মুখে তাগিদ দিয়েছেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর আকাঙ্খা রয়েছে এটি বাস্তবায়ন করবার। ২৬ তারিখ পর্যন্ত সময় বেধে দেয়া আছে। এই সময়ের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কেও মত জানাতে হবে। আর ২৬ তারিখেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নিয়ে বৈঠক আছে। সেদিন এটি নিয়ে ফের আলোচনায় বসবেন তারা। এই পরীক্ষাটিকে প্রথমে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা বলা হলেও পরবর্তীতে এই পরীক্ষার নাম দেয়া হয় ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা’। ইংরেজিতে বলা হয় সেন্ট্রাল এডমিশন টেস্ট (সিএটি)।

কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার জন্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির জন্য একটি কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আলাদা আলাদা বিভাগ অনুযায়ী তিন ধাপে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে এই পরীক্ষায় থাকছে না দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেবার সুযোগ। যদিও বিষয়টি এখনো চুড়ান্ত করা হয়নি। পরীক্ষার পর পরীক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর ও মেধাতালিকা প্রকাশ করা হবে। আর তালিকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেছে নেবেন শিক্ষার্থী। কোন বিশ্ববিদ্যালয় যদি মনে করে অধিক নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীদের শুধু ভর্তি করাবেন তবে সে অনুযায়ী তাদের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। পুরো অনলাইন এই প্রক্রিয়ায় থাকবে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলের সিজিপিএ থেকে নম্বর বা পয়েন্ট। এখন পরীক্ষার্থীদের আলাদা আলাদা বিষয় ও আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আবেদন করতে হয়। এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন পছন্দমতো এলাকায়। যার ফলে যাতায়াত, আবাসন, খাবারসহ নানা ভোগান্তি থেকে রেহাই পাবেন। এই পরীক্ষা ৫০ নম্বরের সংক্ষিপ্ত ও ৫০ নম্বরের বহুনির্বাচনী পরীক্ষা হবে বলে জানা যায়। যদিও এখনো চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হবে নভেম্বরের মধ্যে।

ইউজিসি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, চলতি বছরেই কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এই কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষায় কোন বিশ্ববিদ্যালয় না এলে তাকে ছাড়াই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আর এই পরীক্ষা কীভাবে হবে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা হবে পরবর্তীতে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status