শেষের পাতা

চসিক নির্বাচন

বিএনপিতেও চমকের আভাস

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে

২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, সোমবার, ৯:২৫ পূর্বাহ্ন

মেয়র পদে মনোনয়নের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পথ ধরে হাঁটছে বিএনপি। এমন আভাস মিলেছে বিএনপি’র নীতিনির্ধারণী মহল থেকে। খুব বেশি আলোচিত নয় কিন্তু সার্বিক যোগ্যতায় এগিয়ে-এমন কাউকে মনোনয়ন দিয়ে চমক সৃষ্টি করতে চায় দলটি। দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, আগামি ২৪শে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বিএনপির মনোনয়ন বোর্ড থেকে আসতে পারে এই চমক। এ লক্ষ্যে নীতিনির্ধারণী ফোরাম চমক সৃষ্টি কাকে দিয়ে হতে পারে ইতোমধ্যে সেই পর্যালোচনা শুরু করেছে। মেয়র পদে ইতোমধ্যে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, সাধারণ সমপাদক আবুল হাশেম বক্কর, বিএনপি চট্টগ্রাম নগর কমিটির সহ সভাপতি, তিনবারের নির্বাচিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিয়াজ মোহাম্মদ খান, বিএনপির পদত্যাগী নেতা (সমপ্রতি দলে ফেরা) চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সমপাদক এরশাদ উল্লাহ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নার্সিং ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ও জাতীয়তাবাদী ঘরানার চিকিৎসক সংগঠন ড্যাব-এর যুগ্ম সাধারণ সমপাদক ডা. লুসি খান। যাদের নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে বিএনপি নীতি-নির্ধারণী ফোরাম। এদের যোগ্যতা-অযোগ্যতা, একই সঙ্গে জনসমপৃক্ততার পাশাপাশি দলের জন্য ত্যাগ-অবদান, রাজনৈতিক কারণে নির্যাতনের শিকার হওয়া, পারিবারিক ইতিহাস-ঐতিহ্য, অতীতে নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বিষয়গুলো নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের আলোচনা-বিশ্লেষণে উঠে আসছে এমনই তথ্য দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। বিশ্লেষকদের মতে, ডা. শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি থেকে ওয়ার্ড, থানা বিএনপির রাজনীতি করে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সমপাদক ও বর্তমানে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এক-এগারোর সময় মাইনাস টু ফর্মুলা সামনে রেখে অনেক বড় বড় নেতা যখন সংস্কারপন্থির ভূমিকায় অবতীর্ণ কিংবা আত্নগোপনে, তখন মাঝারি সারির নেতা ডা. শাহাদাত হোসেনই রাজপথে সরব থেকে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। সভাপতি হিসেবে নগর বিএনপির হাল ধরার পাশাপাশি কারাবন্দি, নির্যাতিত নেতাকর্মীদের নানাভাবে সহযোগিতা দিয়ে পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন শাহাদাত। অসংখ্যবার কারা নির্যাতিত বিএনপির এ নেতার বিরুদ্ধে অন্তত ৪০টি মামলা চলমান। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের আগে ঢাকা থেকে তিনি গ্রেপ্তার হন। জেলে থেকেই বিএনপির টিকিটে চট্টগ্রাম কোতেয়ালী আসনে নির্বাচন করে পরাজিত হন। অন্যদিকে আবুল হাশেম বক্কর চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের বিভিন্ন পর্যায়ে রাজনীতি করে একসময় যুদবল নগর কমিটির সভাপতি হন। সেখান থেকে বিএনপি চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ সাধারণ সমপাদকে আসীন হন। সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে জেল খাটেন একাধিকবার। তার বিরুদ্ধেও আছে অসংখ্য মামলা। এদিকে রাজনীতিতে খুব বেশি আলোচিত না হলেও বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের মনোনয়ন-আলোচনায় হঠাৎ করেই সামনে চলে এসেছেন ৬৫ বছর বয়সী নিয়াজ মোহাম্মদ খান। ১৯৯৪, ২০০৫ ও ২০১০ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২৩ নং উত্তর পাঠানটুলি ওয়ার্ড থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনবারই বিপুল ভোটে জিতেন তিনি। ১৯৭৯ সালে যুব সমপ্রদায়ের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের গড়া যুব কমপ্লেক্স, ডবলমুরিং থানার সাধারণ সমপাদক হওয়ার মধ্যদিয়ে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হন নিয়াজ মোহাম্মদ খান। বর্তমানে নগর বিএনপির সহ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এছাড়া সিডিএর তিনবারের বোর্ড মেম্বার, একাধিক শিক্ষা, সাংস্কৃতিক, সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমপর্কিত নিয়াজ খানের আরেকটি প্লাস পয়েন্ট তিনি শহরের পাঠানটুলি এলাকার আদি বাসিন্দা এবং বিখ্যাত খান পরিবারের সন্তান। তার পিতা প্রয়াত আকরম খান বনেদী ব্যবসায়ী, কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন শাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রিধারী দাদা মৌলভী মো. আমানত খান ছিলেন ব্রিটিশ-ভারতের আলোচিত রাজনীতিবিদ। ১৯২৬ সালে বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। পারিবারিক ঐতিহ্য, রাজনৈতিক সমপৃক্ততার পাশাপাশি তৃণমূল থেকে উঠে আসা সজ্জন, স্বচ্ছ ভাবমূর্তি নিয়াজ খান মনোনয়ন ইস্যুতে আলোচনার সামনে চলে আসতে পারে ধারণা করছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। আওয়ামী লীগ সরকারের ১৯৯৬ মেয়াদে দুইবার এবং বর্তমানে মেয়াদে দুইবার রাজনৈতিক মামলায় জেলে যেতে হয়েছে তাকে। এগুলোও বিবেচনা হচ্ছে তার আমলনামা হিসেবে। ২০০৮ সালের ২৮শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে তৎকালীন হেভিওয়েট নেতা মোরশেদ খানের মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় প্রার্থীসঙ্কট দেখা দিলে মনোনয়ন পান দলের অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতা এরশাদ উল্লাহ। পরবর্তীতে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিস্কৃত হয়ে দীর্ঘদিন ছিলেন দল-বিচ্ছিন্ন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে বহিস্কৃত অবস্থাতেই দলের মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন। দল মনোনীত প্রার্থী চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি আবু সুফিয়ানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারের আশ্বাসে শেষপর্যায়ে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন এরশাদ উল্লাহ। সেই থেকে দলে ফিরলেও এরশাদ উল্লাহর দীর্ঘ একদশকের রাজনীতি-বিচ্ছিন্নতা মনোনয়ন ইস্যুতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করছেন রাজনীতি-বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে একমাত্র নারী মনোনয়ন-প্রত্যাশী ডা. লুসি খান চট্টগ্রামের রাজনীতিতে খুব বেশি পরিচিত মুখ না হলেও আপাদমস্তক বিএনপি পরিবারে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। চিকিৎসাবিদ্যায় বিদেশে পড়তে গিয়ে ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন মহিলা দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ সুবাদে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিএনপির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে ওঠে তার। ইউএসটিসিতে ডাক্তারি পড়ার সময় মোরশেদ খানের উৎসাহে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া লুসি খান বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়ার পর দেশে ফিরে বিএনপি ঘরানার বিএমএ ও ড্যাব-এর সাথে সমপৃক্ত হন। হন ড্যাবের যুগ্ম সাধারণ সমপাদক। বিএনপির পদত্যাগী নেতা মোরশেদ খান, জহির উদ্দিন খান, একে খান, প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ঘনিষ্ঠ আত্নীয়-এই পরিচয়টিও লুসি খানের মনোনয়ন-বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করতে পারে বলে বিএনপির রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। বিএনপির নীতি-নির্ধারণী মহলের আভাস, চট্টগ্রামের মেয়র মনোনয়নের ক্ষেত্রে গুণগত পরিবর্তন ও চমক এর বিষয়টি এবার জোরেশোরে প্রাধান্য পেতে পারে। যদি তাই হয়, জীবনের কোনো নির্বাচনে না হারা সরল, মাঠপর্যায়ের তিক্ত অভিজ্ঞতা-যোগ্যতা নিয়ে বেড়ে উঠা নিয়াজ মোহাম্মদ খান অথবা মেধাবী চিকিৎসক লুসি খানের কপাল খুলতে পারে। যদি তাই হয়, তবে সেটাই হবে চমক।
সূত্রমতে, ২৪শে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় মনোনয়ন বোর্ডে অনুষ্ঠেয় সাক্ষাৎকারের বিষয়টি মনোনয়ন-প্রত্যাশীদের টেলিফোনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠেয় মনোনয়ন-প্রত্যাশীদের সাথে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলতে পারেন বলে জানা গেছে। এরপরই তিনিই মনোনয়নের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আর সে সিদ্ধান্তটি জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে সোমবার রাত অথবা মঙ্গলবার (২৫শে ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status