ফেসবুক ডায়েরি

‘আরিফ আজাদ ইসলামিক ধাঁচের লেখা লেখে এটাই মূল বাধা?’

মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, রবিবার, ১১:৪৪ পূর্বাহ্ন

বই মেলাতে নাকি সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় উনার বই। যতোদূর শুনেছি উনি ইসলামিক ধাচের বই লেখেন। এই লেখকের নাম শুনেছি আমি জেল থেকে। এর আগে কখনোই তার নাম আমি শুনিনি। আবার এখনো পর্যন্ত তার কোন বই পড়ার সুযোগও আমার হয়নি। সুতরাং উনার লেখা বই নিয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না।

তবে আমাকে নিয়ে উনি একটি ছোট লেখা লিখেছিলেন। এই লেখায় উনি জাফর ইকবাল স্যারকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, মহামতি স্যার, কোটা আন্দোলনের রাশেদ কেন আপনার বন্ধু নয়? কোটা সংস্কার আন্দোলনে আমাদের পরে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো (রাতুল, সুহেল), তারা জেলে গিয়ে আরিফ আজাদের বিষয়ে আমাকে সর্বপ্রথম বলে যে, আরিফ আজাদ নামক একজন লেখক আপনাকে নিয়ে লিখেছে এবং এই লেখাটি বেশ ভাইরাল হয়েছে।

স্বাভাবিক কারণেই তার নামটি আমার মনে থাকে। এরপর জেল থেকে বের হয়ে লেখাটি খুঁজে পাই। লেখাটিতে উনি যেটা বুঝিয়েছেন তা হলো কিশোর মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ ( আমার বন্ধু রাশেদ) জাফর স্যারের বন্ধু হলে কোটা আন্দোলনের রাশেদ কেন জাফর স্যারের বন্ধু নয়? কেন জাফর স্যার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিষয়ে হড়হড় করে বমি করার কথা বলেছেন?

যাইহোক, আরিফ আজাদকে নিয়ে কেন কথা বলছি? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থেকে জানতে পারি যে, উনার বই বিক্রিতে নাকি নানা বাধা আসছে! চট্রগ্রামের বইমেলাতে কোন স্টলে উনার বই রাখা হয়নি (বর্তমান অবস্থা কেউ জানলে জানাবেন)। আবার বাংলা একাডেমির স্টলগুলোতেও নাকি তার বই বিক্রিতে বাধা আসে।
কেন এই বাধা? কেন স্টলগুলো তার বই রাখতে চায় না? স্বভাবত উনার বই বেশি বিক্রি হওয়ার কারণে সকল স্টল আগ্রহের সাথে উনার বই রাখার কথা? তাহলে বাধা আসে কোন অদৃশ্য শক্তি থেকে? উনি ইসলামিক ধাঁচের লেখা লেখে এটাই কি মূল বাধা?

কেন, উনি কি জঙ্গি হওয়ার জন্য শিক্ষার্থী অনুপ্রাণিত করে? উনি কি ধর্মের নামে অধর্মের কোন কথা বলে? উনি কি কোরআন হাদিসের অপব্যাখ্যা করে? উনি কি ধর্মীয় বিদ্বেষ প্রচার করে? যদি না বলে/ করে তাহলে কেন এই বাধা?

সংবিধানে সকল ধর্মের সমান স্বাধীনতার কথা বলা আছে। তাহলে কেউ যদি ইসলামিক ধাচের লেখা লেখে তাহলে সুশীলদের এতো চুলকানি কেন হয়? নাকি উনার বই বেশি বিক্রি হওয়ার কারণে সুশীলদের ভাত মরেছে, তাদের এটা সহ্য হয় না? আর উনার লেখা তো কোন মিডিয়া বা পোর্টাল প্রচার করে না। উনাকে নিয়ে পত্রিকাকে ফিচার লেখা হয় না, বিজ্ঞাপন হয় না, টেলিভিশনে লাইভ হয় না, উনি নিজেও অন্যদের মতো ফেসবুকে লাইভ করে না, তাহলে উনার বই বেশি বিক্রি হওয়ার মূল রহস্য কি? এটিও আসলে ভেবে দেখা দরকার।

বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। এখানে হিন্দু ভাইদের অধিকার আছে তাদের ধর্মীয় সংস্কৃতি তুলে ধরার। তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ নিয়ে লেখালেখি ও বইয়ের মাধ্যমে প্রচার করার। তেমনি বৌদ্ধ, খ্রিস্টানদেরও রয়েছে। তাদের ধর্মীয় সংস্কৃতি প্রচারে যেমন বাধা আসা কাম্য নয়, তেমনি ইসলামি মূল্যবোধ নিয়ে লিখলে, সেক্ষেত্রেও বাধা আসা ঠিক না। কোন ধর্মই সন্ত্রাস, দুর্নীতি, অন্যায়, জবরদখলের কথা বলে না। যে যার ধর্ম চর্চা করবে, ধর্মীয় সংস্কৃতির চর্চা করার স্বাধীনতা পাবে, এটাই তো সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি। যারা মনে করে ইসলামিক সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার হলে দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হবে, শিক্ষার্থীরা ভুল পথে যাবে, তারা আসলে অন্ধকারের মধ্যে আছে। বরং নিজ নিজ ধর্ম চর্চা ও ধর্মের বাণী নিজেদের ধর্মীয় গোষ্ঠীর মাঝে পৌঁছে দেয়া সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে। কারণ সকল ধর্মই শান্তির কথা বলে। শান্তি প্রতিষ্ঠায় যারা বাধা দেয়, তারা আসলে কি চায়?

(লেখক: কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা ।লেখাটি তার ফেসবুক ওয়াল থেকে নেয়া।)
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status