শেষের পাতা

কলকাতার ডায়েরি

কলকাতায় চলবে লন্ডনের মতো ছাদ খোলা দোতলা বাস

পরিতোষ পাল, কলকাতা থেকে

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, রবিবার, ৯:২৯ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশে এখনো চলে লাল দোতলা বাস। কলকাতাতেও এক সময়  খুব জনপ্রিয় ছিল এই দোতলা বাস। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কলকাতার পথ থেকে তুলে দেয়া হয় তা। তবে ফের সেই দোতলা বাস কলকাতার পথে ফিরে আসতে চলেছে এ শহরে তা চালু হওয়ার ঠিক একশ’ বছরের মাথায়। কলকাতায় বৃটিশ আমলে প্রথম ১৯২০ সালে চালু হয়েছিল দোতলা বাস। তবে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হতে আরো কয়েক বছর লেগে যায়। ১৯২৬ সালে দোতলা বাসের বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়েছিল। গত শতাব্দীর আশির দশকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল দোতলা বাস ধাপে ধাপে তুলে নেয়া হবে। নব্বুইয়ের দশকে পাকাপাকিভাবে একটি একটি করে প্রায় সব দোতলা বাস তুলে নেয়া হয়েছিল। শেষ বাসটিও অকেজো করে দেয়া  হয়েছিল ২০০৫ সালে। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১১ সালে ক্ষমতায় এসেই দোতলা বাস ফিরিয়ে আনা যায় কিনা তা নিয়ে পরিবহন দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এতদিনে সেই নির্দেশ কার্যকর হতে চলেছে। রাজ্যের পরিবহন দপ্তর সূত্রে খবর, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী মার্চ মাসের মধ্যেই কলকাতার রাস্তায় নামানো হতে পারে নতুন লুকের এই দোতলা বাস। জানা গেছে, আগের মতো লাল রঙের দোতলা বাস হবে না এগুলো। বরং হালকা আকাশি এবং সাদা রঙ মেশানো নতুন লুকে শহর কলকাতায় ঘুরবে এই বাস। জামশেদপুর থেকে তৈরি হয়ে আসতে চলেছে আপাতত দুটি বাস। বাসের উপরটা  খোলা থাকবে। ঠিক যেরকম লন্ডনে দেখা যায়। পর্যটকদের ঘোরার জন্য ওই বাস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ইতিমধ্যেই দু’টি বাস তৈরি হয়ে গেছে। ফিটনেস সার্টিফিকেটের জন্য অপেক্ষা। পরিবহন দপ্তরের আশা,  মার্চ মাসের মধ্যেই নামবে। তবে এখনই সাধারণ যাত্রীরা টিকিট  কেটে উঠতে পারবেন না। পর্যটকদের শহর ভ্রমণের জন্য এই বাস দুটি ব্যবহার করা হবে। পশ্চিমবঙ্গ পরিবহন সচিব এনএস নিগম সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, পরিবহন দপ্তরের তত্ত্বাবধানে এই দোতলা বাসের কাঠামো অভ্যন্তরীণভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। তিনি বলেন, এগুলো হুডখোলা গাড়ির মতোই ছাদ খোলা বাস হবে। প্রাথমিকভাবে দুটি বাস রাস্তায় নামানো হবে। যদি এগুলো ঠিকভাবে পরিষেবা দিতে পারে তবে আরো  বেশি বাস তৈরির কথা ভাবা হবে।

কলকাতা পুলিশের বিশেষ সারমেয় বাহিনীতে যুক্ত হবে মালিনয়েজ প্রজাতির কুকুর
মার্কিন  প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা বাহিনীতে যে বিশেষ প্রশিক্ষিত কুকুর বাহিনী রয়েছে, সেই একই প্রজাতির কুকুরকে এবার দেখা যাবে কলকাতার সারমেয় বাহিনীতে। গোটা পৃথিবীতে বেলজিয়ান মালিনয়েজ ওরফে মালিনওয়াঁ প্রজাতির কুকুরকে যেকোনো নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য হিসেবে সবচেয়ে যোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়। কারণ, মালিনওয়াঁর কর্মক্ষমতা ও বুদ্ধি অন্য  যেকোনো প্রজাতির কুকুরের থেকে অনেক গুণ বেশি। পাকিস্তানে ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে বের করার ক্ষেত্রেও মার্কিন সিল বাহিনীর সদস্য হিসেবে এই প্রজাতির কুকুরের বিশেষ ভূমিকা ছিল। ভারতেও নকশাল-বিরোধী অপারেশনে সিআরপিএফ এবং আইটিবিপি এই প্রজাতির কুকুর ব্যবহার করে। গোটা বিশ্বে এই প্রজাতির কুকুরকে যেকোনো নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য হিসেবে সবচেয়ে যোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়। কারণ, মালিনওয়াঁর কর্মক্ষমতা ও বুদ্ধি অন্য যেকোনো প্রজাতির কুকুরের থেকে অনেক বেশি। এবার সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হানার মোকাবিলার জন্যই এই বিশেষ প্রজাতির কুকুরকে আনা হচ্ছে কলকাতা পুলিশের আলাদা সারমেয় বাহিনীর সদস্য করে। কলকাতা পুলিশ তাদের নিজস্ব ডগ স্কোয়াড থাকা সত্ত্বেও সন্ত্রাস মোকাবিলায় বিশেষ সারমেয় বাহিনী তৈরি করছে। কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, শহরে যেকোনো জঙ্গি হানার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য যে বিশেষ সারমেয় বাহিনী তৈরি করা হচ্ছে, তাতে শামিল করা হবে বেলজিয়ান প্রজাতির কুকুরকে। অবশ্য এই বিশেষ সারমেয় বাহিনীর জন্য ইতিমধ্যেই হায়দরাবাদের একটি কেনেল থেকে কেনা হয়েছে ১২টি কুকুর। তার মধ্যে ১০টি জার্মান শেফার্ড ডগ এবং দু’টি ল্যাব্রাডর। ওই কুকুরদের প্রাথমিক প্রশিক্ষণও শুরু হয়ে গিয়েছে কলকাতার পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে। এবার খোঁজ শুরু হয়েছে বেলজিয়ান মালিনয়েজ-এর।  

কলকাতা পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, জঙ্গি দমন বা সন্ত্রাস-বিরোধী লড়াইয়ে সারা বিশ্বের প্রথম সারির বিশেষ প্রশিক্ষিত বাহিনীর প্রথম পছন্দ বেলজিয়ান মালিনয়েজ। তাই আমরাও এই কুকুর আমাদের বাহিনীতে নিতে চাই। জানা গেছে, আপাতত ১২টি মালিনয়েজ প্রজাতির কুকুরকে বিশেষ বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কলকাতা পুলিশের ডগ স্কোয়াডের সঙ্গে যুক্ত কর্তাদের মতে, আমাদের দেশের আবহাওয়ায় অপরাধী খোঁজার কাজে জার্মান শেফার্ড ও ল্যাব্রাডর জাতীয় কুকুর সহজেই হাঁপিয়ে পড়ে। সেখানে মালিনয়েজ প্রজাতির কুকুর আমাদের আবহাওয়ায় খুবই কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে। জানা গেছে, এই প্রজাতির কুকুরকে প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজটি হবে রাজ্যের বাইরে। তাছাড়া এদের যারা হ্যান্ডলার হবেন তাদেরও প্রশিক্ষণের দরকার হবে। ফলে বিশেষ সারমেয় বাহিনীতে বেলজিয়ান মালিনয়েজকে কার্যকর ভূমিকায় নিয়ে যেতে কিছুদিন সময় লাগবে।

আর্ট কলেজের মডেলদের জন্য পেনশন
ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কখনওবা বিভিন্ন ভঙ্গিতে। নগ্ন হয়েই এই কাজ করতে হয়। হাত-পা টনটন করলেও একই ভাবে থাকাটাই দস্তুর। অথচ সমাজে এদের মূল্য নেই। এরা হলেন- শিল্পীর মডেল। দারিদ্র্য আর ক্ষুধাকে সঙ্গী করে গোপনে এরা আসেন আর্ট কলেজে বা শিল্পীর স্টুডিওতে। এক সময় চিত্রকলা শিল্পের সঙ্গে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেন। তাই তো এরা সহজেই বলতে পারেন, আমরা না থাকলে ন্যুড স্টাডি শিখবে কী করে? আর কাজটাকে ভালোবাসি বলেই রোজ চলে আসি শহরতলীর বাসস্থান থেকে আর্ট কলেজে। আসলে চিত্রকলায় ‘ফিগার’ শিখতে হয় ‘মডেল’ বসিয়ে। শুধু ন্যুড স্টাডি তো নয়, পোর্ট্রেট ছবি আঁকা শিখতেও মডেলদের প্রয়োজন হয়। কত শিল্পীর প্রেরণা হয়ে যে কত মডেল চিত্রকলায় স্থায়ী আসন পেয়েছেন তার খবর রাখে না কেউ। সমাজে এদের ঠাঁই হয় অনাদর আর উপেক্ষার সারণীতে। আর্ট কলেজে যে সব মডেল কাজ করেন এরা কেউ স্থায়ী নয়। দিন মজুরিতেই তাদের কাজ করতে হয়। তাও আবার সব দিন নয়। ফলে দারিদ্র্য এদের জীবন থেকে মুছে যায় না। এক প্রবীণা মডেলের কথায়, কখনও কখনও প্রদর্শনীতে যখন নিজেকে দেখি, দেখি ছবি অথবা মূর্তিতে তখন মন ভরে যায়। তবে বিদেশে মডেলদের কদর অনেক বেশি। এখানে সেই সম্মানটা জোটে না। বয়স যত বাড়তে থাকে ততই কাজের অনিশ্চয়তায় ভুগতে হয়।  তবে মনোভাবের যে পরিবর্তন হচ্ছে তা বোঝা গেল কিছুদিন আগে। শিল্পী অর্জুন মুখোপাধ্যায় ও তার স্ত্রী রীতা রায়ের ছবির উদ্বোধন করিয়েছিলেন একজন প্রবীণা মডেলকে দিয়েই। তারা বলেছেন, মডেলদের সম্পর্কে সামাজিক জড়তা রয়েছে। সেটা ভাঙতেই ফুলদি’কে দিয়ে উদ্বোধন করাচ্ছি।’ এদের কথা ভেবে শিল্পীদের মনও যে কাঁদে তা স্পষ্ট হয়েছে সম্প্রতি এক চিত্র প্রদর্শনীতে আসা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে শিল্পীদের সমন্বিত আরজিতে। আরজিটা ছিল আর্ট কলেজের মডেলদের জন্য কিছু একটা করুন। বয়স ফুরিয়ে গেলেও এদের আর যে কোনো দাম নেই। তাই পেনশনের ব্যবস্থা চালু হোক। বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে মুখ্যমন্ত্রী ভাষা দিবসের মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেছেন আর্ট কলেজের প্রবীণ মডেলদের জন্য পেনশনের। এদিনই ১৫ জনের হাতে মাসিক দেড় হাজার রুপির চেক তুলে দিয়েছেন। এদের মধ্যে ১৪ জনই নারী। একজন পুরুষ মডেল। শিল্পীরা যেমন এই ঘোষণায় খুশি তেমনি খুশি মডেলরাও।

রক্তদানের লক্ষ্যে অবিচল
রক্তদান করে জীবনে অনেক পুরস্কারই পেয়েছেন। তবে তার এখনকার লক্ষ্য ভারতের অসামরিক সম্মান পদ্মশ্রী পাওয়া। আর সেই লক্ষ্যেই এখনো ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনি রক্ত দিতে। সম্প্রতি কলকাতার ইডেন উদ্যানে ফ্রাঙ্ক ওরেল দিবসের রক্তদান অনুষ্ঠানে রক্ত দিয়ে জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ১১৭ বার রক্ত দিয়ে নজির গড়েছেন। চন্দননগর খলিসানি সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির ম্যানেজার প্রশান্ত দাস (৪৮) রক্ত দিতে ভালোবাসেন। তিনি মনে করেন তার রক্তে যদি কারও উপকার হয়, তার থেকে আনন্দের কিইবা হতে পারে। তবে এখন প্রশান্ত বাবুর লক্ষ্য, দেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’ পাওয়ার। তাই রক্তদান চলছে। চলবে। ইতিমধ্যে ২ বার রাজ্যপালের হাত থেকে সেবা পদক পেয়েছেন তিনি। পেয়েছেন ইন্দিরা গান্ধী এক্সেলেন্সি অ্যাওয়ার্ডও। পশ্চিমবঙ্গ ব্লাড ডোনার্স এসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংস্থার দেয়া প্রশংসাপত্র ও স্মারক  তো রয়েছেই। ২০০২ সালে ৫৮ বার রক্তদান করার পর সেন্ট জন এম্বুলেন্স সেবা পদক হিসেবে প্রশান্তবাবুকে প্রশংসাপত্র ও ব্রোঞ্জের একটি গান্ধীমূর্তি দিয়েছে। প্রশান্তবাবু নিজেই জানিয়েছেন, ২০০৫ সালে ৬৪ বার রক্তদানের পর দিল্লি থেকে গডফ্রে ফিলিপ্স ব্রেভেরি অ্যাওয়ার্ডসের জন্য নির্বাচিত হই। সেবার স্বর্ণপদক ও প্রশংসাপত্র দেন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী। ২০১৩ সালে ৯২ বার রক্তদানের পর ইন্দিরা গান্ধী এক্সেলেন্সি অ্যাওয়ার্ড পাই। তবে এখন রক্তদানের নেশার পাশাপাশি লক্ষ্যে তিনি অবিচল।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status