বাংলারজমিন

ঘাটাইলে বিদ্যালয়ের মাঠে পশুর হাট

এবিএম আতিকুর রহমান, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) থেকে

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, রবিবার, ৮:৪৮ পূর্বাহ্ন

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার কদমতলী হাসান পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে ৩৫ বছর ধরে বসছে গবাদি পশুর হাট। সপ্তাহের প্রতি  রোববার গবাদিপশুর হাট বসে এখানে। ঈদ এলে সপ্তাহজুড়ে বসে গবাদি পশুর হাট। এক দিকে ক্লাস চলে, আরেক দিকে চলে গবাদিপশু বেচাকেনা। পশুর হাট বসার কারণে শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। এতে করে বিদ্যালয়ের প্রায় সাত-শতাধিক শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বর্ষা মৌসুম এলে বিদ্যালয়ের পরিবেশ নর্দমায় পরিণত হয়। গবাদিপশুর বর্জ্য আর কাদাপানি একাকার হয়ে পুরো বিদ্যালয়ের ক্লাসরুম ও ক্যাম্পাস ডাস্টবিনে পরিণত হয়। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের কোনো ভূমিকা গত ৩৫ বছরেও লক্ষ্য করা যায়নি। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও এটি বন্ধে কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ। সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কঘেঁষে ঘাটাইলের কদমতলী এলাকায় ১৯৭২ সালে কদমতলী হাসান পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়টিতে প্রায় সাত শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ১৯৮৫ সাল থেকে বিদ্যালয়ের মাঠে সপ্তাহের প্রতি রোববার গবাদিপশুর হাট বসে। ঈদের সময় সপ্তাহজুড়ে চলে গবাদিপশু বেচাকেনা। প্রতি রোববার যে হাটটি বসে এই একদিনের জের থাকে সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতেও। সারা মাঠজুড়েই গরু, ছাগলের বর্জ্য ও রকমারি গর্ত, নালা-নর্দমার সৃষ্টি হয়েছে।  শ্রেণিকক্ষের আশেপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে পশুর মল ও খড়কুটোর স্তূপ। ফলে হাটের পরদিন  সোমবার স্কুল খুললেই শিক্ষার্থীদের জন্য রীতিমতো কষ্টকর হয়ে উঠছে স্কুলে আসা। অনেক শিক্ষার্থী হাটের পরের দিন ক্লাসে উপস্থিত হয় না। খেলাধুলা তো দূরের কথা, মাঠ পার হয়ে স্কুলের বারান্দাতেও স্বাভাবিকভাবে হাঁটা-চলাই দুষ্কর হয়ে পড়েছে তাদের জন্য। ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চরম ব্যাহত হচ্ছে। এলাকাবাসী জানায়, এই এলাকার সবচেয়ে বড় পশুরহাট ওই কদমতলি স্কুল মাঠ। যে কারণে অনেক গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া ওই হাটে বেচাকেনা হয়। এ কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশেও বাধার সৃষ্টি হচ্ছে।
কদমতলী হাসান পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম  শ্রেণির ছাত্র মিয়াদ জানায়, মাঠের মধ্যে কাদা থাকায় তারা খেলাধুলা করতে পারছে না। ১০ম  শ্রেণির ছাত্র সানোয়ার হোসেন সানি জানায়, কাদা ও পশুর মলের দুর্গন্ধে ক্লাসে থাকা খুব কঠিন। নবম শ্রেণির ছাত্র মাহাবুব বলেন বর্ষার সময় আমাদের স্কুলে আসতে কষ্ট হয়। নোংরা পানি ও ময়লার কারণে শরীরে নানা ধরনের চর্ম রোগ দেখা  দেয়। এ বিষয়ে কদমতলী হাসান পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জানান, বিগত ১৯৮৫ সালে কদমতলী হাটটি স্কুলের মাঠে প্রতিষ্ঠিত হয়। হাট প্রতিষ্ঠার পর  থেকেই নিয়মিত বিদ্যালয় মাঠে পশুর হাট বসছে। এলাকাবাসী সম্মিলিতভাবে হাট পরিচালনা করে। বিগত ২০১৫ সালের ৪ঠা মার্চ হাট স্থানান্তরের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছিলাম। কিন্তু বিষয়টির অগ্রগতি এখনো হয়নি। এ বিষয়ে ঘাটাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম লেবু বলেন, প্রায় ৩৫ বছর ধরে ওই বিদ্যালয় মাঠে পশুরহাট বসছে। সামনে বাংলা সনের ইজারা দেয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়াও হয়েছে। হাটের কারণে বিদ্যালয়ের কোনো অসুবিধা হয়- এমন অভিযোগ কেউ করেননি। তবে ওই বিদ্যালয়ের অদূরে একটি খাসজমি হাটের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু তা অন্যদের দখলে রয়েছে। তাই সেখানে হাট স্থানান্তর করা যায়নি। এ ব্যাপারে ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, স্কুলের মাঠে গরুর হাটটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি। যে পর্যন্ত সরিয়ে  নেয়া সম্ভব না হবে সে পর্যন্ত সাপ্তাহিক বন্ধের দিনে হাট বসানোর চেষ্টা করছি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status