শেষের পাতা

সিলেটে ছেলের ছবি বুকে নিয়ে কাঁদলেন দ্বীপের পিতামাতা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, শনিবার, ৯:১১ পূর্বাহ্ন

ছেলের ছবি বুকে ধরে শহীদ মিনারে বসে কাঁদলেন দ্বীপের মা-বাবা। চাইলেন ছেলে হত্যার বিচার। বললেন- সবাই আছে আমাদের দ্বীপ নেই। আমাদের সব আনন্দ ফিকে করে দিলো ঘাতকেরা। অভিষেক দে দ্বীপ। নগরীর টিলাগড়ের ছাত্রলীগকর্মী। দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। ৬ই ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের অপর অংশের নেতাদের হাতে খুন হয়েছেন তিনি। খুনের ঘটনায় একমাত্র সৈকত ছাড়া কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ কারণে দুঃখের অন্ত নেই পরিবারে। ছেলে হত্যার বিচার চাইতে মহান একুশের দিনে ছুটে আসেন শহীদ মিনারে। শহীদ বেদিতেই ছেলের ছবি বুকে ধরে অঝোরে কাঁদেন পিতা দ্বীপের বাবা দিপক দে ও অনিতা দে। এমন ঘটনায় বাকরুদ্ধ তারা। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে তারা পাগলপ্রায়। সকাল ৭ টায় যতক্ষণ তারা সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছিলেন ততক্ষণ যারাই তাদের দেখেছেন চোখের জল ছেড়েছেন। আদরের ছেলেকে ‘বাবু’ বলে ডাকতেন দীপক দে ও অনিতা দে। তাই বারবার বাবু বাবু বলে চিৎকার করে কাঁদছিলেন আর বলছিলেন, ‘আমার বাবু কোনো রাজনীতি করতো না।

মাত্র এসএসসি পাস করিয়া কলেজে ভর্তি হইছিল। রাতে খেলা দেখতে গেছিল টিলাগড় মাঠে। এরপর আর প্রাণ নিয়া ফিরে নাই আমার বাবু।’ অভিষেকের মা অনিতা দে অভিযোগ করে বলেন, দ্বীপকে যখন হাসপাতালে নেয়া হয় তখন  সৈকতও হাসপাতালে ছিল। তাকে পুলিশ আটক করেনি। সে নিজেই ধরা দিয়েছে। এটা তাদের একটা চালাকি। তা না হলে আমার ছেলে হত্যার আজ ১৫ দিন পার হলেও পুলিশ আর কোনো আসামিকে ধরছে না কেন? তিনি আরো বলেন- ঘটনার দিন রাতে অভিষেকের শিক্ষক পূজন তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। রাত ১০টার দিকে আমাদেরকে বলা হয় দ্বীপ এক্সিডেন্ট করেছে। এরপর শুনি ওরে ছুরি দিয়ে খুন করা হয়েছে। শিক্ষক হয়ে কীভাবে পূজন আমার ছেলেটাকে হত্যা করলো। এই বলে কাঁদতে থাকেন অভিষেকের মা। অভিষেকের বাবা দীপক দে জানান- খুন হওয়ার পর জানতে পারি সরস্বতী পূজার কোনো ঘটনা নিয়ে নাকি আমার ছেলেকে হত্যা করছে ওরা। আমার ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই আমি। পুলিশ কিছুই করছে না। আজ ১৫ দিন পার  হলেও সৈকত ছাড়া একটি আসামিও ধরতে পারেনি পুলিশ।

পুলিশের এত শক্তি এত সোর্স থাকতেও তারা আমার ছেলের হত্যাকারীদের ধরছে না। কেন, কোন কারণে পুলিশ নীরব হয়ে আছে। এদিকে- সিলেটের শাহ্‌পরাণ থানার ওসি আবদুুল কাইয়ুম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- এ মামলার আসামিরা পলাতক আছেন। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি তাদের ধরার। কিন্তু আসামিদের সব ফোন বন্ধ। তারা সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে। তাই তাদের ধরতে দেরি হচ্ছে। আসামিদের ব্যাপারে যদি অভিষেকে পরিবারের কাছে কোনো তথ্য থাকে তাহলে সেটা আমাদেরকে জানালে আমরা ওদের তাড়াতাড়ি ধরতে পারবো। তিনি বলেন, সৈকতকে পুলিশই আটক করেছে। সে অসুস্থ ছিল তাই তাকে রিমান্ডে নেয়া যায়নি। হাসপাতাল থেকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সৈকত সুস্থ হলে তাকে রিমান্ডে নেয়ার পরিকল্পনা আছে আমাদের। গত ৬ই ফেব্রুয়ারি রাতে বিবাদে জড়িয়ে ছাত্রলীগ কর্মী সৈকত রায় সমুদ্রের নেতৃত্বে একদল যুবকের হামলায় সিলেট নগরীর টিলাগড় এলাকায় অভিষেক দে দ্বীপ নামের ছাত্রলীগ কর্মী নিহত হন। নিহত দ্বীপ গ্রীনহিল স্টেট কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। এদিকে হামলায় নেতৃত্বদানকারী সৈকত রায় সমুদ্র সিলেট সরকারি কলেজের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী। এছাড়া নিহত দ্বীপ ও অভিযুক্ত সমুদ্র দুইজনই আওয়ামী লীগ নেতা রণজিৎ সরকার গ্রুপের অনুসারী। পুলিশ জানিয়েছে, সদ্য সমাপ্ত সরস্বতী পূজায় কথাকাটাকাটির জের ধরে এই হত্যার ঘটনা ঘটেছে। পরে অভিষেক দে দ্বীপ হত্যায় ছাত্রলীগ কর্মী সৈকতকে প্রধান আসামি করে পূজন, সাগর ও সৌরভ এ চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও তিন-চারজনকে আসামি মোট আটজনের বিরুদ্ধে ৮ই ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় নিহতের বাবা দীপক দে বাদী হয়ে শাহ্‌পরাণ থানায় মামলা দায়ের করেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status