শেষের পাতা

করোনা ভাইরাস বেনাপোল কাস্টমস কমিশনারের কাণ্ড

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর থেকে

২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, শুক্রবার, ৯:১৮ পূর্বাহ্ন

ভারত থেকে আসা এক তরুণ অসুস্থবোধ করায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই তাকে ‘করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী’ শনাক্ত করে সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল চৌধুরী। গতকাল দুপুর সোয়া বারোটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা ওই যাত্রীর ছবি ও পাসপোর্টের ছবি তিনি প্রকাশ করেছেন নিজের ফেসবুক পেজে। এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় যশোর স্বাস্থ্য বিভাগে। কমিশনার তার ফেসবুক পেজে যাত্রীর ছবি দিয়ে লিখেন ‘করোনা রোগী শনাক্ত।’ এর নিচে তরুণের পুরো পরিচয়ও তুলে ধরেন তিনি। তবে চিকিৎসকরা তাকে ‘করোনা রোগী’ হিসেবে শনাক্ত না করায় সেই পোস্ট পরে মুছে (ডিলিট) দিয়ে আবারো আরেকটি পোস্টে লিখেন ‘শনাক্ত নয়’। সেখানেও সচেতনভাবে    ভারত থেকে আসা ওই তরুণের নাম, পিতার নাম, পাসপোর্ট নম্বর এবং ছবি পোস্ট করেছেন বেলাল চৌধুরী।
সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে ‘করোনা ভাইরাসের লক্ষণ ও উপসর্গ নিয়ে যারা হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য ভর্তি হচ্ছেন এবং তাদের শনাক্ত করা যায় এমন কিছু প্রকাশ করা যাবে না।’ জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) বলছে, ‘প্রচার-প্রচারণার কারণে কেউ যেন সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন না হয়, সেদিকে অবশ্যই সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি পোস্ট করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কমিশনার বেলাল চৌধুরী বলেন, ‘আমরা অনেক সময় অনেক ছবি দিয়েছি ফেসবুকে। এই ছবিটিও অ্যাওয়ার করার জন্য দিয়েছি।’ আর যদি ওই তরুণ সত্যিই করোনায় আক্রান্ত হতো, তাহলে সেটা ক্রেডিট হতো বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া বারোটায় বেলাল চৌধুরী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে লেখেন, ‘বেনাপোলে ভারত থেকে আসা করোনা রোগী শনাক্ত।’
‘ভারত থেকে আসা বন্ধন এক্সপ্রেস থেকে একজন করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয়েছে। কাস্টমস কর্মকর্তারা রেলের নিয়মিত দায়িত্ব পালনকালে বিশ্বস্ত সূত্রে গোপনে সংবাদ পায় এবং রোগীকে শনাক্ত করেন। তাৎক্ষণিক এসি উত্তম চাকমা ও আকরাম হোসেন বিষয়টি যশোর সিভিল সার্জন অফিস ও উপজেলা স্বাস্থ্য অফিসকে জানান এবং সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরে আনেন।’
এরপর তিনি ‘শনাক্ত’ হওয়া রোগীর নাম, তার পিতার নাম এবং বাড়ির ঠিকানা উল্লেখ করেন।
এরপর বেলাল চৌধুরী লিখেছেন, ‘তিনি (ওই তরুণ) চীন থেকে ভারতে আসেন। ভারতীয়রা বিষয়টি সম্ভবত বুঝতে পেরে তাকে টিকিট ছাড়াই ট্রেনে তুলে দেয়। তিনিও আত্মগোপন করেছিলেন। কাস্টমস টিম চিকিৎসকদের আসা নিশ্চিত করে। বর্তমানে তিনি ( ওই তরুণ) সিভিল সার্জন টিমের হেফাজতে আছেন।’
কাস্টমস কমিশনার বেলাল চৌধুরী পরের প্যারায় করোনা ভাইরাস নিয়ে বেনাপোল কাস্টমস অফিসের সচেতনতার কথা লেখেন। সেখানে তিনি  বলেন, ‘বিস্ময়কর হলেও বেনাপোল কাস্টম হাউজে কর্মকর্তাদের তৎপরতায় এ অঞ্চলে প্রথম করোনা রোগী দেশে ঢোকার আগেই ধরা পড়ে। যে কেউ এমন রোগী দেখলে চিকিৎসক টিমকে জানান। রোগী যথার্থ পরিচর্যায় সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন, ভাইরাস ছড়িয়ে বিপজ্জনক হয়ে ওঠার আগে। অবহেলায় উল্টোটা ঘটে।
প্রথম পোস্টের দুই ঘণ্টা পর তিনি ওই তরুণের ছবি ও নামসহ আবারও একটি পোস্ট দেন। এবার লেখেন, ‘চিকিৎসকের পরীক্ষায় ওই তরুণকে করোনা ভাইরাসমুক্ত বলা হয়েছে। আমরা নিজেদের দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করি।’ এ বিষয়ে কোনও সংশয় তৈরি হলে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত! এতে তিনি বলেন, ‘আমরা সচেতনতার জন্য পোস্ট দেই। সংশয়ের জন্য নয়। দয়া করে কেউ আতঙ্ক ছড়াবেন না।’
এদিকে ভারত থেকে বেনাপোলে আসা তরুণকে “করোনা” সন্দেহে পরীক্ষা করে কোনও আলামত পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন যশোরের সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন। তিনি বলেন, ‘উনাকে পরীক্ষা- নিরীক্ষা করে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কোনও কিছু পাওয়া যায়নি। তাকে তার বাড়িতে চলে যেতে বলা হয়েছে এবং ১৪ দিন বাড়িতে অবস্থানের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে যদি তার শারীরিক অসুস্থতা পরিলক্ষিত হয়, তবে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে সন্দেহভাজন এই যাত্রীর বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বেলাল চৌধুরী দৈনিক মানবজমিনকে বলেন, ‘ওটা যদি শেয়ার হয়ে থাকে, তাহলে এখন আর নেই। মূল পোস্ট ডিলিট হয়ে গেছে।’ কিন্তু সেগুলোর স্ক্রিনশট তো রয়ে গেছে, জানালে তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে একসঙ্গে অনেকগুলো ছবি গিয়েছে, আমি ‘ওইভাবে’ খেয়াল করিনি আসলে, আর আমি গ্রামের বাড়ির ঠিকানা পুরোটা দেইনি। কেবল থানা উল্লেখ করেছি।’
কারও পাসপোর্ট পাবলিকলি (প্রকাশ্যে উপস্থাপন) করতে পারেন কিনা এবং ‘করোনা’ সন্দেহে যাদের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে, তাদের নাম ঠিকানা সরকার প্রকাশ না করার আহ্বান জানানোর পরেও তা করলেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা চাচ্ছিলাম গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইনভলব হয়ে তার সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিক। তাকে যেন আইডেন্টিফাই করতে পারে। তাকে আমরা সন্দেহ করেছি, আমাদের টিম আতঙ্কিত হয়েছে।
টিম আতঙ্কিত হলেই কি তার ছবি ফেসবুকে দিতে হবে, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, যদি তিনি রোগী হতেন তাহলে কিন্তু আমাদের ক্রেডিট থাকতো। যেহেতু রোগী নন, সে কারণেই এত কথা হচ্ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status