শেষের পাতা

প্রভিশন ঘাটতিতে ১২ ব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, শুক্রবার, ৯:১৭ পূর্বাহ্ন

এত কিছুর পরেও খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) করতে ব্যর্থ ১২টি ব্যাংক। ২ শতাংশে পুন:তফসিল সুবিধায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমানোর পরেও প্রভিশন ঘাটতিতে ব্যাংকগুলো। তথ্যমতে, মন্দ ঋণ বাড়ায় এক বছরের ব্যবধানে প্রভিশন ঘাটতি আবারো বেড়েছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোতে ঋণের ঝুঁকি বিবেচনায় প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৬১ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। কিন্তু এর বিপরীতে প্রভিশন রেখেছে ৫৪ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। এতে ঘাটতি দেখা দিয়েছে ৬ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা।
সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় ১ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতি কমেছে ডিসেম্বরে। তবে বছরের ব্যবধানে ঘাটতি বেড়েছে ৪০ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর ১৯ প্রান্তিকে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ১২৯ কোটি টাকা এবং ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে ছিল ৬ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ব্যাংকগুলোতে জনগণের আমানত সুরক্ষা দেয়ার 
 জন্য খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখার নিয়ম রয়েছে। প্রভিশন রাখার অর্থ হচ্ছে, যে অর্থ খেলাপিদের পকেটে চলে গেল-তার সমপরিমাণ অর্থ ব্যাংক আলাদা হিসেবে রেখেছে। যেসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেশি, তারা ওই নিয়ম মানতে ব্যর্থ হচ্ছে। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসাবে ১০ হাজার ৫০১ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ হয়েছে ১২টি ব্যাংক।
এর মধ্যে বেসিক ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি সবচেয়ে বেশি, ৩ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া সোনালী ব্যাংকের ২ হাজার ১৫৬ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকের ১ হাজার ৪৪৩ কোটি, রূপালী ব্যাংকের ৮৭৮ কোটি, এবি ব্যাংকের ৬৭৩ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৫৩৮ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৪৮৭ কোটি, ঢাকা ব্যাংকের ৪২৫ কোটি, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্টের ২৭৫ কোটি, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ২৯৬ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ১৬২ কোটি ও ট্রাস্ট ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ১৬৪ কোটি টাকা।
খাতা-কলমে লাভ দেখাতে খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি পুনঃতফসিল করেছে সরকারি খাতের ব্যাংকগুলো। এর পরও খেলাপি ঋণের শীর্ষে রয়েছে এ খাতের ব্যাংকগুলোই। খেলাপি ঋণের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে অ্যাননটেক্স ও ক্রিসেন্ট গ্রুপ জালিয়াতির অকুস্থল জনতা ব্যাংক। গত ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। আগের বছরে যা ছিল ১৭ হাজার ২২৫ কোটি টাকা। তবে সেপ্টেম্বরে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিলো ২১ হাজার কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে তার বেশির ভাগই আমানতকারীদের অর্থ। আমানতের অর্থ যেন কোনো প্রকার ঝুঁকির মুখে না পড়ে সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে।
এর একটি হলো প্রভিশন সংরক্ষণ। নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে ০.২৫ থেকে ৫ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কুঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংকের আয় খাত থেকে অর্থ এনে এ প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়। খেলাপি ঋণ বাড়লে, আর সে অনুযায়ী ব্যাংকের আয় না হলে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শেয়ারহোল্ডাদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status