শেষের পাতা

সিলেটে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প নিয়ে যে প্রশ্ন

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৯:১৭ পূর্বাহ্ন

সিলেট সিটি করপোরেশনের সৌন্দর্যবর্ধন কাজ নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। নগরীর ৬ পয়েন্টে সৌন্দর্য স্মারক ফলক নির্মাণ করছে একটি ডিজাইন কোম্পানি। ওই কোম্পানি স্মারক ফলক নির্মাণের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে গ্রহণ করছে টাকা। অথচ সিটি করপোরেশন এই টাকা গ্রহণ সম্পর্কে অবগত নয়। সম্প্রতি নগরীর সুবহানীঘাট পয়েন্টে ইব্‌নে সিনার টাকায় একটি স্মারক ফলক নির্মাণ করা হয়েছিলো। হঠাৎ করে ওই ফলকে ইব্‌নে সিনার সাইনবোর্ড বসালে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। পরে ইব্‌নে সিনা তাদের ফলক তুলে নিয়ে টাকা ফেরত চায়। আর এ ঘটনার পর সিলেটের সৌন্দর্যবর্ধন কাজ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টকে সংরক্ষণ ও নামকরণের উদ্যোগ হিসেবে স্মারক ফলক নির্মাণ করছেন। এতে মেয়র নিজেও প্রশংসিত হচ্ছেন। কিন্তু এই স্মারক ফলক নির্মাণ সিটি করপোরেশনের টাকায় হচ্ছে না। ডিজাইন আর্টিস্ট নামের একটি কোম্পানি নগরীর ৬ পয়েন্টে ফলক নির্মাণের জন্য সিটি করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। চুক্তিতে রয়েছে ফলক নির্মাণের কারণে ডিজাইন আর্টিস্ট সিটি করপোরেশনকে কোনো টাকা দেবে না, কিংবা সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে ডিজাইন আর্টিস্টও কোনো টাকা গ্রহণ করবে না। তবে- টাকা আসবে কোথা থেকে।

এখন পর্যন্ত সিলেটের মেন্দিবাগ পয়েন্টে একটি স্মারক ফলক নির্মাণ করেছে ওই কোম্পানি। খাদিম সিরামিক নামের একটি ব্যবসায়ীক কোম্পানির কাছে তারা ওই পয়েন্টের স্মারক ফলকটি ভাড়া দিয়েছে। এরপর ওই কোম্পানি স্মারক ফলকে তাদের নাম ফলক বসিয়ে দিয়েছে। একইভাবে সুবহানীঘাট পয়েন্টেও তারা স্মারক ফলক নির্মাণ করতে ইব্‌নে সিনার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। ইব্‌নে সিনার কাছ থেকে টাকাও নেয় তারা। স্থাপনাটি নির্মাণ হলে ইব্‌নে সিনা হাসপাতালের নাম লাগিয়ে দেয়া হয়। এ নিয়ে সোবহানীঘাটের স্থানীয় লোকজন শহীদ মিনারের স্থানে ইব্‌নে সিনার নামে স্থাপনা নির্মাণে প্রতিবাদ জানান। বিষয়টি নিয়ে তারা মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর দ্বারস্থ হন। শেষে আরিফুল হক চৌধুরীর নির্দেশে ইব্‌নে সিনা তাদের নামফলক সরিয়ে ফেলে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন ইব্‌নে সিনা কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে ডিজাইন আর্টিস্ট’র কাছ থেকে টাকা ফেরত চায় ইব্‌নে সিনা। ডিজাইন আর্টিস্ট কর্তৃপক্ষ ইব্‌নে সিনাকে ৭ লাখ টাকার একটি চেক দিলেও এখনো টাকা উঠাতে পারেনি দাতা প্রতিষ্ঠানটি। এ নিয়ে ইব্‌নে সিনা হাসপতালের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন- ‘নির্মিত স্থাপনাতে আমাদের প্রতিষ্ঠানের নাম দেয়া নিয়ে বিতর্ক দেখা দিলে তা তুলে নেয়া হয়। আমরা আমাদের টাকা ফেরত পাওয়ার দাবি করছি। তবে আমরা খুশি ইব্‌নে সিনার টাকায় সোবহানীঘাটে একটি সুন্দর স্থাপনা নির্মিত হয়েছে।’ সুবহানীঘাট এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন- সিলেটের প্রথম শহীদ মিনার স্থাপিত হয়েছিলো সুবহানীঘাট পয়েন্টে। এই পয়েন্টে সৌন্দর্যবর্ধন স্মারকে হঠাৎ করে ইব্‌নে সিনার নাম বসানো হয়।

এতে ক্ষুব্ধ হন এলাকার মানুষ। মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরপরই সেটি সরিয়ে নেয়া হয়। এতে করে আপাতত ক্ষোভ প্রশমিত হয়েছে। সুবহানীঘাটের বাসিন্দা এডভোকেট মো. ইব্রাহিম আলী জানিয়েছেন- স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে সোবহানীঘাটে বর্তমান ট্রাফিক পয়েন্টে নির্মাণ করা হয় একটি শহীদ মিনার। এটি সিলেটের প্রথম শহীদ মিনার। পাকা খুঁটিতে নির্মিত সেই মিনারে মাতৃভাষা দিবসে স্থানীয়রা পুষ্পস্তবক অর্পণ করতেন। ১৯৮৪ সালে জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে শহীদ মিনার অক্ষত রেখে সোবহানীঘাট হতে উপশহর শাহ্‌জালাল ব্রিজের সঙ্গে নতুন হাইওয়ে নির্মাণ করা হয়। এরপর সরকারি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে শহীদ মিনারটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেখানে ট্রাফিক পয়েন্ট নির্মাণ করা হয়।

বর্তমানে সেই ট্রাফিক পয়েন্টেই নতুন এ স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। এ স্থাপনা ভাষাসৈনিক বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামে হতে হবে। শহীদ মিনারের স্মৃতি চিহ্নিত পয়েন্টে নির্মিত স্থাপনায় কোনো ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের নাম মেনে নেয়া যাবে না। সোবহানীঘাট শহীদ মিনার স্থাপনকালীন সময়ের কনিষ্ঠ উদ্যোক্তা ও জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি আবুল কাহ্‌হের শামীম বলেন, ‘সিলেটের প্রথম শহীদ মিনার স্থাপন করা হয় সোবহানীঘাটে। সেখানে নির্মিত স্থাপনায় ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান ইব্‌নে সিনার নাম দেয়াতেই আমাদের আপত্তির কারণ। সোবহানীঘাটে হতে হবে মাতৃভাষার স্মৃতি চিহ্নিত ফলক।’ এদিকে- সিসিক সূত্রে জানা যায়, সিলেটের মেন্দিবাগ, সোবহানীঘাট, সিটি পয়েন্ট, শেখঘাট, আম্বরখানা, নাইওরপুল পয়েন্টের সৌন্দর্যবর্ধনের নামে সিটি করপোরেশনের সাথে চুক্তি করে ডিজাইন আর্টিস্ট। চুক্তিমতে ট্রাফিক পয়েন্ট স্থাপনা নির্মাণে সিসিক তাদের কোনো টাকা দেবে না। ডিজাইন আর্টিস্টও সিসিককে কোনো টাকা দিতে হবে না।

এমন চুক্তি করে ডিজাইন আর্টিস্ট সৌন্দর্যবর্ধনের নামে ব্যবসা করছে বলে অভিযোগ করেন অনেকেই। তবে- ডিজাইন আর্টিস্টর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাওছার আহমেদ জানিয়েছেন- ‘সিলেটের সৌন্দর্যবর্ধনের নামে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা করার উদ্যোগ নেই। আমাদের প্রতিষ্ঠানের প্রচারের লক্ষ্যেই এ উদ্যোগ নিয়েছি। ব্যবসা করছি কথাটি ঠিক নয়।’ তিনি জানান, ‘সোবহানীঘাট পয়েন্টে স্থাপনা নির্মাণের নামে ইব্‌নে সিনা হাসপাতালের কাছ থেকে টাকা নেই। কিন্তু এতে রাজনৈতিক বিতর্ক দেখা দিলে সেই স্থাপনা থেকে ইব্‌নে সিনার নাম মুছে ফেলি।’ এ বিষয়ে সিসিক’র নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর মানবজমিনকে জানিয়েছেন- সিলেটের দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাগুলো ডিজাইন আর্টিস্ট ও সিটি করপোরেশনের সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে হচ্ছে। তবে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে সাথে ডিজাইন আর্টিস্ট, ব্যবসায়ী চুক্তি সম্পর্কে সিটি করপোরেশনের কোনো দায়-দায়িত্ব নেই। তবে সিটি করপোরেশন সাইনবোর্ডের স্ট্যান্ডার্ড রাজস্ব নিচ্ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status