প্রথম পাতা

ঢাকা, হবিগঞ্জ বরগুনায় চীন ফেরত তিনজন হাসপাতালে

স্টাফ রিপোর্টার

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, মঙ্গলবার, ৯:৪২ পূর্বাহ্ন

করোনা ভাইরাস (কভিড-১৯) সন্দেহে চীন ফেরত যাত্রীদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত দুইদিনে নতুন করে আরো তিন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে ঢাকায় একটি হাসপাতালে গত দু’দিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন  
একজন। তাকে স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে বিমান বন্দরে সন্দেহজনক রোগী হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বাকিরা হবিগঞ্জ ও বরগুনায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হবিগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এক রোগী রহস্যজনক আচরণ করে হাসপাতালে থেকে দু’দফা পালিয়ে যান। এদিকে এর আগে করোনা সন্দেহে চীনা এক নাগরিক রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন রোববার। চীনা ওই নাগরিক সুস্থ আছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. দেবেন্দ্রনাথ সরকার।

রাশেদ আহমদ খান, হবিগঞ্জ থেকে জানান, করোনা ভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে (মো. রায়হান আহমেদ) চীন ফেরত এক মেডিকেল শিক্ষার্থীকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দু’দফায় তিনি হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে গেলেও  গতকাল পুলিশের মাধ্যমে খুঁজে এনে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে আটকে রাখা হয়েছে। নির্ধারিত চিকিৎসক-নার্স ছাড়া অন্য কেউ রোগীর পাশে যাওয়ার বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। (রায়হান আহমেদ) হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর এলাকার আব্দুন নূরের ছেলে।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, রায়হান চীনের জিয়াংজিং রাজ্যের একটি মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করতেন। গত ৮ই ফেব্রুয়ারি তিনি দেশে আসেন। ১৪ই ফেব্রুয়ারি তিনি জ্বর, কাশি ও ঘাড় ব্যথা অনুভব করেন। তাকে পরিবারের সদস্যরা সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে ভর্তির পরামর্শ দেন। এতে আতঙ্কিত হয়ে তিনি বাড়ি চলে যান। গত রোববার পরিবারের সদস্যদের বুঝিয়ে তাকে আবার হাসপাতালে নিয়ে আসে স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু ভর্তির কিছুক্ষণ পরই তিনি আবারো পালিয়ে যান। পরবর্তীতে পুলিশের মাধ্যমে তাকে খুঁজে এনে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার কাছ থেকে ঢাকায় যাওয়ার একটি বাসের টিকিট উদ্ধার করা হয়েছে।

এরপর থেকে তাকে সদর আধুনিক হাসপাতালের নতুন ভবনের ৫ম তলায় করোনা ভাইরাস আইসোলেশন ওয়ার্ডে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. একেএম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, চিকিৎসাধীন রায়হান আহমেদের করোনা ভাইরাস থাকার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। আমরা তার রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি। রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কিছুই নিশ্চিত করে বলা যাবে না।

মিজানুর রহমান,বরগুনা থেকে জানান, বরগুনায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে মো. ইমরান হোসাইন (২২) নামে চীন ফেরত এক শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত রোববার রাতে তাকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। তার গায়ে জ্বর থাকায় তাকে বরগুনা জেলা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে আলাদাভাবে রাখা হয়েছে। তবে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই জানিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। ইমরানের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের নিমতলী গ্রামে। তার বাবার নাম মো. মোখলেসুর রহমান।

ইমরানের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে বৃত্তি পেয়ে তিন মাস আগে পড়াশোনার জন্য চীন গিয়েছিল ইমরান। তিনি স্যানডং প্রদেশের রিজাউ শানডং ইউনিভার্সিটিতে পড়ছিলেন। চীনের গুয়াংজু এয়ারপোর্ট হয়ে গত শনিবার ঢাকায় ফিরে আসেন ইমরান। রোববার দুপুরে ঢাকা থেকে বাড়িতে ফেরেন। এরপর তার জ্বর আসে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তাকে বরগুনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

চীন ফেরত অসুস্থ শিক্ষার্থী ইমরান বলেন, তিনি চীনের স্যানডং প্রদেশের রিজাউ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী। গত শনিবার ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। এ সময় বিমানবন্দরে তাকে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। শনিবার তিনি ঢাকা থেকে যাত্রা করে রোববার সকালে তিনি বরগুনায় তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছান। এরপর সন্ধ্যায় পুলিশ তাকে বাড়ি থেকে এনে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন বলেও দাবি করেন।

বরগুনা সদর থানার ওসি আবীর মোহাম্মদ হোসেন বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দেয়া তথ্য ও তার নির্দেশে সদ্য চীন ফেরত ওই শিক্ষার্থীকে বাড়ি থেকে এনে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. হুমায়ুন শাহীন খান বলেন, চীন ফেরত অসুস্থ শিক্ষার্থী ইমরানের পাসপোর্টে আমি যাচাই করে দেখেছি। চীন থেকে তিনি গত শনিবার ঢাকায় পৌঁছেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, রোগী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কি না পরীক্ষার কোনো যন্ত্রপাতি বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নেই, তবে প্রয়োজনে ঢাকা থেকে ইমরানকে পরীক্ষার জন্য টিম আসবে।

আইইডিসিআর’র আবেদন: পুলিশ এবং জনপ্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আবেদন জানিয়েছেন রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট( আইইডিসিআর)-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা । তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস বা কভিড-১৯ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ সকল দায়িত্ব পালন করছে। বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের তথ্য আমাদের কাছে আছে। প্রশাসনের কেউ কেউ স্ব উদ্যোগে বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের বাড়ি যাচ্ছেন। এধরনের তৎপরতা গ্রহণযোগ্য নয়। অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, সিভিল সার্জন বা স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ব্যতিরেকে নিজ উদ্যোগে জনস্বাস্থ্য বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থাকুন।  
 এদিকে গতকাল পর্যন্ত এক লাখ ৯১ হাজার ৩৯২ জন যাত্রীকে বিমান, নৌ ও স্থলবন্দও স্েক্িরনিং করা হয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে একটি ট্রেনও। ৭২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। কারো শরীরে করোনা ভাইরাস ধরে পড়েনি। স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে বিমান বন্দরে শনাক্তকৃত সন্দেহজনক এক রোগী রয়েছেন।

ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্তে স্ক্যানার দেবে কোরিয়া: যে কোনো ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে পারে, বাংলাদেশকে বিনামূল্যে এমন স্ক্যানার মেশিন দেবে দক্ষিণ কোরিয়া। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন। করোনা ভাইরাস নিয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না-জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা নিয়ে আমরা রেগুলার আলাপ-আলোচনা করছি। আজকে এটা নিয়ে স্পেসিফিক আলোচনা হয়নি।  তিনি বলেন, রিসেন্টলি কোরিয়া থেকে একটা স্ক্যানিং সিস্টেম অ্যাওয়ার্ড করা হচ্ছে। গত বুধবার দিন এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদেও হোম মিনিস্টার (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) সাহেব এটা বলেছেন। ওনার কাছে একটা অফার এসেছে। এটা আরও মোডিফাইড জিনিস, যে কোনো ভাইরাস থাকলে ওটার মধ্য দিয়ে গেলেই ধরা পড়বে। আমাদেও যে সিস্টেম আছে সেটাও থাকবে, ওটা থাকবে ইন ইডিশন। এটা আরও সিকিউরড। আমার কাছে চিঠিটি আসতেছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তারা এমনিতেই এটা (স্ক্যানার মেশিন) আমাদেও দেবে। টেস্ট কেস হিসেবে আমাদের দিচ্ছে। আমাদের সবগুলো এয়ারপোর্টেই তারা দেবে। খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, এটা কোরিয়ান টেকনোলজি, তারা এটা আবিষ্কার করেছে। তারা বলছে, এটা দিয়ে যে কোনো ভাইরাসসহ কেউ আসলেই ধরা পড়বেন।

গত ৩১শে ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথমবারের মতো ধরা পড়ে নোভেল করোনা ভাইরাস। এখন পর্যন্ত এটি বিশ্বের অন্তত ২৮টির বেশি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। করোনা ভাইরাসে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা ১৭শ’ ছাড়িয়ে গেছে। আক্রান্ত রোগীর ৭১ হাজারের বেশি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status