বাংলারজমিন

আদালতে স্বীকারোক্তি

‘গৃহবধূকে স্বামীসহ তিনজন মিলে গণধর্ষণের পর হত্যা’

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, মঙ্গলবার, ৯:২৪ পূর্বাহ্ন

সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট রেলওয়ের পরিত্যক্ত কলোনি থেকে উদ্ধারকৃত লাশটি প্রকৃতপক্ষে একজন স্বামী পরিত্যক্ত গৃহবধূর। তাকে সেখানে নিয়ে স্বামীসহ তিন দুর্ধর্ষ খুনি পরিকল্পিতভাবে গণধর্ষণ শেষে হত্যা করেছিলো। গতকাল চট্টগ্রামের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় প্রদানকৃত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য জানিয়েছে ঐ ঘটনায় জড়িত তিন খুনি। এর আগে গত শনিবার হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি মাহমুদুল্লাহ প্রকাশ মামুনকে ভোলা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় ঘটনায় জড়িত অন্য দুই আসামিকেও। আর এর মধ্য দিয়ে অনেকটা ক্লুবিহীন একটি হত্যা রহস্য উন্মোচিত হলো।
সীতাকুণ্ড থানা সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার শিলকনটওয়াইটিলা গ্রামের মো. আমির হামজার মেয়ে রিমা বেগম (২৫) এর সাথে কুমিল্লা ব্রাহ্মণপাড়া থানার সাহেবাবাদ গ্রামের সাদন মিয়ার ছেলে মো. রাসেল (৩৫) এর বিয়ে হয়েছিলো। দীর্ঘ ৭ বছর সংসার করার পর তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এ বিচ্ছেদ নিয়ে রিমার উপর ক্ষুব্ধ ছিলো রাসেল। এদিকে রাসেলের সাথে বিচ্ছেদের পর রিমা চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানাধীন আমিন কলোনির বেলতলায় বসবাস করে একটি গার্মেন্টে কাজ নেয়। এখানে নুর হোসেন নামক আরেকজনকে বিয়ে করেন তিনি। এই সূত্রে নুর হোসেনের পরিচিত ভোলা সদর থানার ধনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের কানাইনগর গ্রামের ইউনুস মাতব্বরের ছেলে মাহমুদুল্লাহ প্রকাশ ভাগনা প্রকাশ মামুন (৩৪) এর সাথে সখ্য গড়ে উঠে রিমার। তাদের গভীর সখ্যতার কারণে রীমা গত ঈদে ভোলায় অবস্থিত মামুনের বাড়িতেও বেড়াতে যায়। এদিকে রীমার সাথে বিচ্ছেদ হলেও সাবেক স্বামী রাসেল রীমার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। সে মামুনের সাথে রীমার বন্ধুত্বের কথা জেনে তাকে টাকাসহ বিভিন্ন নেশাদ্রব্য দিয়ে রীমাকে এক রাতে তার কাছে নিয়ে আসার জন্য রাজি করায়। এ লক্ষ পূরণ করতে তারা পূর্ব থেকে সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট রেলওয়ের কলোনির একটি পরিত্যক্ত কক্ষকে দেখা করার জন্য বেছে নেয়। গত ৫ই জানুয়ারি রাতে মামুন কৌশলে রীমাকে ওই কলোনিতে নিয়ে যায়। সেখানে পূর্ব থেকেই অপেক্ষা করছিলো তার সাবেক স্বামী রাসেল ও রাসেলের বন্ধু নোয়াখালী সদর থানার বুদ্ধিনগর চৌরাস্তা আন্ডারচর গ্রামের মো. রফিকের ছেলে মো. জামাল (৩০)। এখানে রাসেলসহ তিনজনই তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে তারা তিনজন রীমাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়ে রাসেল তাকে মাটিতে শুইয়ে পা চেপে ধরে, মামুন তার মাথা এবং জামাল গলা চেপে ধরে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশটি ডোবায় ফেলে দেয়। এদিকে পরদিন ৬ই জানুয়ারি ডোবাতে একটি অজ্ঞাত লাশের খবর পেয়ে পুলিশ সেটি উদ্ধার করে  এ ঘটনায় মামলা দায়ের করেন। কিন্তু মেয়েটিকে শনাক্ত করতে না পারায় কোন ক্লু পাওয়া যাচ্ছিল না। তিনি থানার এডিশনাল এসপি শম্পা রানী সাহা ও ওসি মো. ফিরোজ হোসেন মোল্লার সার্বক্ষণিক পরামর্শ অনুযায়ী আসামিদের সনাক্ত করতে ব্যাপক পরিশ্রম করেন। রীমার পূর্ব জীবন ও মৃত্যুর আগের অবস্থান জানতে ছদ্মবেশে চট্টগ্রামের আমিন কলোনিতে বারবার অবস্থান করেন পুলিশ। সেখানে মামুনের সাথে রীমার সর্বশেষ ভালো সম্পর্কের বিষয়ে অবগত হন। পরে তার বিষয়ে তথ্য অনুসন্ধান করে এ ঘটনায় তার জড়িত থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হলে তাকে গ্রেপ্তারে গত শুক্রবার ভোলায় অভিযান চালান। সেখান থেকে মামুনকে গ্রেপ্তার করে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ ও তার কাছে থাকা বিভিন্ন প্রমাণ উপস্থাপন করলে মামুন ঘটনার কথা স্বীকার করে। এ ঘটনায় জড়িত রাসেল ও জামালের তথ্য দিয়ে বিস্তারিত খুলে বলে। শনিবার রাতে চট্টগ্রামে অভিযান চালিয়ে তাদেরকেও গ্রেপ্তার করেন সুমন বণিক।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status