বাংলারজমিন

টমেটো চাষে লাখপতি শাহজাহান

আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ থেকে

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, রবিবার, ৮:১০ পূর্বাহ্ন

কিশোরগঞ্জের নিকলীতে চলতি মৌসুমে টমেটো চাষ করে লাখপতি হয়েছেন শাহজাহান মিয়া নামে এক কৃষক। কৃষক শাহ জাহান মিয়ার বাড়ি উপজেলার গুরুই ইউনিয়নের দৌলতপুর পূর্বপাড়ায়।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, শাহ জাহান মিয়ার নিজের কোন জমি নেই। তিনি বাড়ির পাশে ৩০ শতক জমি ছয় হাজার টাকায় বর্গা নিয়ে ২৫ শতক জমিতে টমেটো চাষ করেছিলেন। বাকি ৫ শতক জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। এরই মধ্যে এক লাখ পাঁচ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন। আরো অন্তত ২০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।

শাহ জাহান মিয়া জানান, এবার নিয়ে চার বছর ধরে জমি বর্গা নিয়ে টমেটো চাষ করছেন তিনি। এর মধ্যে গত তিন বছরই তাকে লোকসান গুণতে হয়েছে। এ বছর তিনি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পপি’র রিকল ২০২১ প্রকল্পের মাধ্যমে বীজসহ প্রয়োজনীয় সব উপকরণ সহায়তা পেয়েছেন। এছাড়া কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রযুক্তি সহায়তা পেয়েছেন। বিষমুক্ত সব্জি উৎপাদনের জন্য কৃষি বিভাগের পরামর্শে জমিতে কীটনাশক ব্যবহার না করে ব্যবহার করেছেন সেক্স ফেরোমেন ফাঁদ। ফলে এবার টমেটোর ভালো ফলন হয়েছে। এছাড়া ভালো দামও পেয়েছেন। ফলে মাত্র ২৫ শতক জমি থেকেই এক লাখ টাকার ওপরে টমেটো ইতোমধ্যে বিক্রি করেছেন। আরো অন্তত ২০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান।
শাহ জাহান মিয়া আরো জানান, এই জমি করতে খরচ বলতে তার জমির বর্গা বাবত ৬ হাজার টাকাই খরচ হয়েছে। বাদবাকি বীজ, সার ও সেচসহ সব ধরনের কৃষি উপকরণ খরচ যখন যেটা প্রয়োজন পপি রিকল ২০২১ প্রকল্প থেকে দেয়া হয়েছে। ফলে ইতোমধ্যে তিনি প্রায় লাখ টাকা লাভ করেছেন। এছাড়া জমি থেকে টমেটো তোলার সময় ফাঁকে ফাঁকে শশা চাষ করেছেন। বেগুন এবং শশা চাষের খরচও পপি রিকল ২০২১ প্রকল্প থেকে দেয়া হয়েছে। বেগুন এবং শশা বিক্রির মাধ্যমেও অন্তত আরো ৫০ হাজার টাকা লাভ হবে বলে তিনি আশা করছেন।
শাহ জাহান মিয়ার সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে তার পাঁচ সদস্যের পরিবার। ছেলে-মেয়েরা সবাই লেখাপড়া করছে। এর মধ্যে বড় মেয়ে সাথী দশম শ্রেণিতে, ছোট মেয়ে কবিতা পঞ্চম শ্রেণিতে এবং সবার ছোট একমাত্র ছেলে মোশারফ মাদরাসায় পড়ছে।
শাহ জাহান মিয়া জানান, আয় রোজগার না থাকায় সংসারের খরচ চালাতে তাকে হিমশিম খেতে হতো। স্ত্রী, ছেলে-মেয়ের ছোটখাটো আবদারও মেটাতে পারতেন না। এবার টমেটো চাষে বেশ বড় ধরনের লাভের মুখ দেখায় সংসারে সচ্ছ্বলতা ফিরে এসেছে।

পপি রিকল ২০২১ প্রকল্পের সমন্বয়কারী মো. ফেরদৌস আলম জানান, অসচ্ছল ও হতদরিদ্র কৃষকদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে অক্সফামের সহায়তায় সমন্বিত কৃষি খামার ধারণাটি প্রতিষ্ঠার জন্য তারা কাজ করছেন। সমন্বিত কৃষি খামারে কৃষকেরা একই জমিতে একাধিক ভিন্ন ভিন্ন সবজি ও ফসল উৎপাদন করছেন। এর মাধ্যমে অসচ্ছল ও হতদরিদ্র কৃষকেরা নিজেদের স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছেন। তাদের এই সফলতায় এলাকার অন্য কৃষকরাও এতে উদ্ধুদ্ধ হচ্ছেন।

মো. ফেরদৌস আলম আরো জানান, পপি রিকল ২০২১ প্রকল্পের মাধ্যমে নিকলী উপজেলার ১২ জন এবং মিঠামইন উপজেলার ৮ জন মোট অসচ্ছল ও হতদরিদ্র ২০ জন কৃষক সমন্বিত কৃষি খামার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আয়বর্ধনমূলক কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status