প্রথম পাতা

বিয়ের আনন্দ নিমিষেই শেষ

মৌলভীবাজারে আগুনে নিহত ৫

স্টাফ রিপোর্টার ও মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

২৯ জানুয়ারি ২০২০, বুধবার, ৯:২৩ পূর্বাহ্ন

নিমিষেই মিইয়ে গেল বিয়েবাড়ির আনন্দ উৎসব। পরিবার-পরিজন আর আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে শোকের ছায়া। পরিবারে যে সদস্যরা ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন তারা এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার স্মরণে মূর্ছা যাচ্ছেন। কোনো সান্ত্বনাই থামাতে পারছে না তাদের আপনজন হারানোর ব্যথা। শোকে বিহ্বল পুরো শহরের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। ওই ব্যবসায়ী পরিবারের এই মর্মান্তিক ঘটনায় শোকাতুর সবাই। তারা নির্দিষ্ট সময় দোকানপাট বন্ধ রেখে শোক প্রকাশ করেছেন। সহযোগিতার হাতও বাড়িয়ে দিয়েছেন। শহরের মধ্যে এই প্রথম এমন মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শহরজুড়েই স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠা।
 
মৌলভীবাজার শহরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন ৫ জন। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মৌলভীবাজার শহরের ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এম সাইফুর রহমান রোডের পিংকি সু স্টোরে। দোকানের সঙ্গে সংযুক্ত উপরে বাসার গ্যাস লাইনের গ্যাস লিংক অথবা বিদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ঘটনার নেপথ্যের কারণ উদঘাটন ও ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাশ সৎকারের জন্য ১ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে প্রদান করা হয়েছে। উদ্ধারকারী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান মুহূর্তে আগুন বাসার চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে একই পরিবারের ৫ জন নিহত হয়। নিহতরা হলো সুভাষ রায় (৬৩) তার ভাই মনা রায়ের স্ত্রী  দীপ্তি রায় (৪৫), সুভাষ রায়ের মেয়ে পিয়া রায় (১৯), সুভাষ রায়ের শ্যালক সজল রায়ের স্ত্রী দীপা রায় (৪৫) ও মেয়ে বৈশাখী রায় (২ বছর ৮ মাস)। ওই ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন মনা রায় তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সুভাষ রায়ের গ্রামের বাড়ি মোস্তফাপুর ইউনিয়নের গন্ধর্বপুর গ্রামে। তবে তারা দীর্ঘদিন থেকে তাদের মালিকানাধীন ও বাসায় ২য় তলায় বসবাস করে আসছেন ও নিচ তলায় ব্যবসা করছেন।  প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান সকালে মৌলভীবাজার শহরের এম সাইফুর রহমান রোডের পিংকি সু স্টোরে প্রচণ্ড আগুনের ধোঁয়া দেখতে পান। এই সময় ওই দোকানের সার্টার বন্ধ ছিল। ওই দোকানের ভেতর দিয়েই উপর তলায় বসবাস রত পরিবারের যাতায়াতের সিঁড়ি ছিল। ওখানে ২য় তলার টিনশেডের আধাপাকা পুরাতন ঘরে বসবাস ছিল সুভাষ ও মনা রায়ের পরিবারের। হঠাৎ ধোঁয়া দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস বাহিনীর ২টি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে তিন ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। নিহতদের আত্মীয়স্বজনরা জানান, গেল বুধবার সুভাষ রায়ের বড় মেয়ে স্কুল শিক্ষিকা প্রিয়াংকা রায় পিংকির বিবাহ ছিল গেল বুধবার। আর তার বৌভাত ছিল সোমবার। বিবাহের ওই আনন্দঘন অনুষ্ঠানে আত্মীয়স্বজন ও পরিবারের সকল সদস্যরা ওই বাসাতে জড়ো হয়েছিলেন।

ওই অনুষ্ঠানের কারণে অনেকেই দেরি করে ঘুমাতে যান তাই দুই একজন ছাড়া ওই অগ্নিকাণ্ডের সময় সবাই ঘুমন্ত ছিলেন। উদ্ধারকারীরা জানান প্রথমে ঘুমন্ত অবস্থায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আগুনে পুড়ে তারা নিহত হয়। আগুনে পোড়ার কারণে তাদেরকে শনাক্ত করা যাচ্ছিল না। তারা জানান নিচ তলার দোকানের ভেতর দিয়ে উপর তলায় ওঠানামার সিঁড়ি ছিল। ওই সিঁড়ি ও উপর তলা ছিল কাঠ ও টিনের তৈরি। তাছাড়া দোকানে জুতা, খেলনা ও প্লাস্টিক সামগ্রী থাকায় আগুন দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। বিদ্যুতের সংযোগ দ্রুত বন্ধ করা গেলেও গ্যাস লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও পাইপে জমাকৃত গ্যাসের কারণে তা বন্ধ হতে কিছুটা দেরি হয়। পানি ও বালু দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হয়। ততক্ষণে পুড়ে ছাই হয় ওই পরিবারের ৫ জন। ঘটনার সময় বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন মনা রায় (৫৬), সঞ্জয় রায় (২০), শুভ রায় (১৮), মনা রায়ের বড় ভাইয়ের বিধবা স্ত্রী। এ ছাড়া পরিবারে অন্যান্য সদস্যরা প্রিয়াংকা পিংকির জামাইর বাড়িতে থাকায় তারা প্রাণে বেঁচে যান। উদ্ধারকর্মী মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. হাসান মাহদী ও কমল পাল বলেন, ছোট্ট মেয়ে বৈশাখী রায় (২ বছর ৮ মাস) আগুনে পুড়তে দেখে তারা তাকে উদ্ধারের জন্য চিৎকার দিয়ে বলেছিলেন। কিন্তু ধোঁয়ার কারণে অনেকেই বলেছিলেন এটা হয়তো পুতুল হবে। পরে তার আগুনে পোড়া নিথর দেহ পাওয়া গেল। বৈশাখী অগ্নিকাণ্ডের সময় ঘরের বাহিরে চলে আসলেও আবার ঘরে ফিরে গেলে সেও পুড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়।  এ সময় ঘটনাস্থলে এসে দিকনির্দেশনা দিয়ে সার্বিক সহযোগিতা করেন জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, মৌলভীবাজার পৌরসভার ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, বিজনেস ফোরাম, চেম্বার অব কমার্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও নেতৃবৃন্দসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।

জেলা প্রশাসনের প্রেস ব্রিফিং: মৌলভীবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে একই পরিবারে ৫ জন আগুনে পুড়ে মারা যাওয়ার ঘটনায় বিকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রেস ব্রিফিং দেয়া হয়। জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন ওই মর্মান্তিক ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে করণীয় জানতে সকলের সহযোগিতা চান। ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায়  অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তানিয়া সুলতানাকে প্রধান করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিবে। এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সরকারের তরফে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন। প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তানিয়া সুলতানা, পৌর মেয়র ফজলুর রহমান, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল হোসেন, বিজনেস ফোরাম ও চেম্বার অব কমার্সের নেতৃবৃন্দ, পৌর কাউন্সিলর ও গণমাধ্যমকর্মীসহ শহরের নানা শ্রেণি- পেশার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। মৌলভীবাজার পৌর শহরের সৈয়ারপুর মহা শ্মশান ঘাটে নিহতদের মরদেহ দাহ করা হয়। নিহতদের নিকট আত্মীয় পৌর কাউন্সিলর স্বাগত কিশোর দাস চৌধুরী জানান, বিকাল ৫টা থেকে শবদাহের শেষকৃত্যের সকল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।  
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status