শেষের পাতা

তাবিথের ইশতেহারে ১৯ দফায় ৯৫ প্রতিশ্রুতি

স্টাফ রিপোর্টার

২৮ জানুয়ারি ২০২০, মঙ্গলবার, ৯:১৪ পূর্বাহ্ন

বিশ্বমানের অত্যাধুনিক বাসযোগ্য শহর গড়ে তোলার প্রত্যয়ে ঢাকা উত্তর সিটিতে বিএনপি’র মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল ১৯ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। দূষণরোধ, মশক নিয়ন্ত্রণ, যানজট ব্যবস্থাপনা, পরিচ্ছন্ন ঢাকা, গণপরিবহন, সড়ক নিরাপত্তা, অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা, নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীবান্ধব ঢাকা, নিরাপত্তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ পানি, নিরাপদ খাদ্য, পাবলিক টয়লেট, ক্ষুদ্র ব্যবসা, ইন্টেলিজেন্ট সিটি অপরাধ দমন ও বিনোদন, আবাসন ও নগর প্রশাসনকে গুরুত্ব দিয়ে ইশতেহারে ৯৫টি প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে নির্বাচনী ইশতেহারে। সোমবার সকালে গুলশানে ইমানুয়্যেলস কনভেনশন সেন্টারে ইশতেহার ঘোষণা করেন তাবিথ আউয়াল। তাবিথ বলেন,আমি কথা দিচ্ছি, নগরবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণা আমি কখনো করবো না। আমি কথা দিচ্ছি, পশ্চাদপদতা নয়, সবসময় আমার ভাবনাও পরিকল্পনা থাকবে সম্মুখপ্রসারী ও আধুনিক।

লিখিত ইশতেহারে বলা হয়, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ মশার সংক্রমণ থেকে নগরবাসীকে বাঁচাতে নিয়মিত মশক নিধনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে, মশা নিধনের জন্য সারা বছর কীটনাশক ও লার্ভাসাইডস প্রয়োগ করা হবে, ড্রেন, লেক এবং পানি সংরক্ষণাধার নিয়মিত ভাবে পরিষ্কার করা হবে, মশা নিধন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল নিয়োগ দেয়া হবে, ধুলাবালি দূর করার পাশাপাশি শব্দ ও বায়ুদূষণ প্রতিকারে কার্যকর আধুনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, বায়ু, শব্দ ও পরিবেশ দূষণমুক্ত নগর গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘সোর্স কন্ট্রোল’ দেয়া হবে, নগরীর পশু জবাইখানাগুলো হাইজেনিক ও বিশ্বমানে উন্নীত করা হবে, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ‘স্যানিটারি ল্যান্ডফিল’ গড়ে তোলা হবে, পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়তে রাত ১২ টা থেকে ভোর ৫টার মধ্যে সব আবর্জনা অপসারণ নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, বিশ্বের উন্নত শহরের মত ‘ডোর টু ডোর ওয়েস্ট কালেকশন’ পদ্ধতিতে বর্জ্য সংগ্রহ ও অপসারণ করা হবে, ঢাকা শহরে বিদ্যমান খাল পুনঃখনন ও সংস্কার করে খালের পাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে, বিশেষ বিশেষ স্থানে মহিলা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাসহ পথচারীদের জন্য অধিক সংখ্যক আধুনিক ও পরিচ্ছন্ন টয়লেট নির্মাণ করা হবে, পার্ক ও ব্যায়ামাগারে অত্যাধুনিক ‘প্রাইমারি হেলথ চেকআপ সেন্টার’ স্থাপন করা হবে, ভেজাল তথা বিষ ও ফরমালিনমুক্ত খাদ্য সামগ্রী নিশ্চিত করতে প্রতিটি বাজারে ভেজাল/বিষ পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করা হবে, জনসমাগম স্থলে ‘ফুড কোর্ট’ তৈরি করা হবে, সিটি হেলথ ডাটাবেজ গঠন ও সেবার মান নিশ্চিত করা হবে, জলাবদ্ধতা নিরসনে ওয়াসা এর সাথে সমন্বয় করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে এবং ওয়াসার আওতামুক্ত এলাকাগুলোতে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব উদ্যোগে পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে, নদী দূষণমুক্ত করা, নদীর তীর রক্ষা ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ, সৌন্দর্য্য বর্ধন প্রকল্প গ্রহণ এবং নদীভিত্তিক বিনোদন কেন্দ্র, ওয়াটার ট্যুরিজম/ নৌ পর্যটন গড়ে তোলা হবে, সিটি কর্পোরেশনের অধীনস্থ শিশু পার্কসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রের উন্নয়ন, আধুনিকায়ন ও দুর্নীতিমুক্ত দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে, সিটি কর্পোরেশনের যে সকল উন্মুক্ত উদ্যান, নদী ও খাল বেদখলে আছে সেগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দখলমুক্ত করা হবে, যানজট নিরসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়নে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূূর্ণ সড়ক ও ওয়ার্ডে অলিগলির রাস্তা সংস্কার ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে, রাস্তা পারাপারে প্রয়োজনীয় স্থানে অধিক সংখ্যক আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, সংরক্ষণ ও সুপরিকল্পিত পরিচালনার ব্যবস্থা করা হবে, কর্পোরেশেনের কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে জন্ম-মৃত্যু সনদ, ট্রেড-লাইসেন্স এবং অন্যান্য সব ধরনের সেবা তাৎক্ষণিক প্রদানের লক্ষ্যে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা হবে। ঢাকা ওয়াসাসহ রাজধানীতে সেবা প্রদানকারী সব প্রতিষ্ঠানকে সমন্বয়ের মাধ্যমে সুপেয় পানীয় জলের সরবরাহ, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, পয়ঃনিষ্কাশন আধুনিকায়ন, নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কারসহ ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে, মূল সড়ক, অলিগলি, শাখা সড়ক, সড়ক দ্বীপ, খেলার মাঠ, পার্ক, নদী, খাল-বিল ও জলাশয়সহ মহানগরীর সর্বত্র সার্বক্ষণিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, রাতে নাগরিক সাধারণের চলাচল এবং জননিরাপত্তা বিধান কল্পে সড়কবাতিগুলো সচল রেখে আলোকিত ঢাকা নির্মাণ নিশ্চিত করা হবে, যাতায়াত, স্বাস্থ্যকর পয়ঃব্যবস্থাসহ সার্বিক পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করে নগরীর বাজারগুলোকে আধুনিকায়ন করা হবে, সেই সাথে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করা হবে, কবরস্থান ও শ্মশানের সার্বিক উন্নয়ন এবং সুষ্ঠু, দুর্নীতিমুক্ত ও ব্যবহারকারীবান্ধব ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে, চাহিদার ভিত্তিতে প্রত্যেক ওয়ার্ডে আধুনিক শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে, নগরবাসীকে সস্তা দামে বিষমুক্ত ও ভেজালমুক্ত তাজা খাবারের ব্যবস্থা করতে ‘কৃষক মার্কেট’ ও ‘নাইট মার্কেট’ স্থাপন করা হবে। সকল ধরনের নাগরিক সুবিধা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রতিটি ফুটওভার ব্রিজে পর্যায়ক্রমে এলিভেটর/এস্কেলেটর স্থাপন ও সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা জোরদার করা হবে, নগরীতে ওয়ান স্টপ বাস সার্ভিস চালু, মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক, অন্ধ, প্রতিবন্ধী, নারী, শিশু এবং সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য বিশেষ সেবা নিশ্চিত করা হবে, প্রতিটি সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট সুবিধাসহ টাউটমুক্ত, যাত্রীবান্ধব পরিচ্ছন্ন বাস টার্মিনাল ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে, যেসব এলাকায় রাস্তায় ফুটপাত নেই, প্রয়োজনীয়তার নিরিখে সেখানে ফুটপাত নির্মাণ এবং প্রয়োজনে বিদ্যমান ফুটপাত সংস্কার, আধুনিকায়ন ও প্রশস্তকরণ করা হবে, হকারদের স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে, বার বার রাস্তা খোড়াখুড়ি এবং রোড ডিভাইডার ভাঙ্গার ফলে বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে যে জনদুর্ভোগ ও সমপদের ক্ষতি হয়, সেই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে, পথচারীদের জন্য বিভিন্ন স্থানে ‘স্কাইওয়াক’ এর প্রবর্তন করা হবে, টঙ্গী থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত যাতায়াতের সুবিধার্থে অত্যাধুনিক কমিউটার ট্রেন সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেয়া হবে, ঢাকা শহরের চারদিকে রাজউক কর্তৃক প্রস্তাবিত রিংরোড তৈরীতে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করা হবে, কর্মজীবী নারীদের জন্য ‘নারী কর্মজীবী হোস্টেল’ প্রতিষ্ঠা করা হবে, নগরবাসীর আবাসিক সমস্যা সমাধানে রাজউক, নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় করে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে, নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য মানসম্মত ও স্বল্প ভাড়ায় আবাসন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠন করা হবে, বাড়ির মালিক এবং ভাড়াটিয়ার মধ্যে ভাড়াজনিত বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে প্রতি ওয়ার্ডে একজন করে ভাড়া নিয়ন্ত্রক নিয়োগ দেয়া হবে, সিটি কর্পোরেশনের কমিউনিটি হাসপাতালগুলোতে নারীদের মাতৃত্বকালীন এবং ৫ বছর পর্যন্ত সব শিশুর
বিনা খরচে চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের নিরাপদে চলাচলের জন্য অত্যাধুনিক ‘স্টুডেন্ট বাস সার্ভিস’ চালু করা হবে, দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে ‘নগর শিক্ষাবৃত্তি’ চালু করা হবে, প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে সাইবার সেন্টার স্থাপন করা হবে যেখানে স্বল্প খরচে ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান করা হবে, সিটি কর্পোরেশনের সব সেবা আধুনিকায়ন করে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ চালু করা হবে, বয়স্কদের জন্য ‘সিনিয়র সিটিজেন’ সার্ভিস চালু করা হবে, সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স সংক্রান্ত জটিলতা, দুর্নীতি এবং নাগরিক হয়রানি বন্ধ করার লক্ষ্যে মোবাইল অথবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইনে ট্যাক্স আদায়ের ব্যবস্থা করা হবে, নগরের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের জন্য পুরান ঢাকা পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মত ওয়ার্ড ভিত্তিক নাগরিক কমিটি গঠন করা হবে, অসহায় পথশিশু ও নারীদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হবে, বস্তিবাসীর জীবনমান উন্নয়নে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা হবে, অবৈধভাবে দখলকৃত ভূমি পুনরুদ্ধার করে তাতে বস্তিবাসী ও বাস্তুভিটাহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসিত করা হবে, পর্যায়ক্রমে সব সড়ক, লেন ও বাইলেন সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা হবে এবং জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের সহায়তায় ওয়ার্ডভিত্তিক ‘অপরাধপ্রবণ’ জায়গাগুলো চিহ্নিত করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার মাধ্যমে ‘অপরাধমুক্ত শহর’ গড়ে তোলা হবে।

তাবিথ আউয়ালের নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদের) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্‌বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, আব্দুল আউয়াল মিন্টুসহ ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের নেতারা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status