এক্সক্লুসিভ

ঢাকা উত্তর: ৫ নং ওয়ার্ড

মুখোমুখি দুই প্রার্থী এলাকায় আতঙ্ক

রুদ্র মিজান

২৬ জানুয়ারি ২০২০, রবিবার, ৮:৩৬ পূর্বাহ্ন

পোস্টার, গণসংযোগ, মিছিলে সরগরম এলাকা। একটি ওয়ার্ড। দুই দিকে দুই কাউন্সিলর প্রার্থী। পুরো ওয়ার্ডই যেনো দুই ভাগে বিভক্ত। আরো কয়েক প্রার্থী থাকলেও আলোচনায় আওয়ামী লীগের এই দুই প্রার্থী। কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নন। একজন আরেকজনকে ঠেকাতে চান। প্রতিনিয়ত উত্তেজনা ছড়াচ্ছেন তাদের কর্মীরা। অভিযোগ উঠেছে, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারেরও। ঘটেছে হামলা, সংঘর্ষের ঘটনা। সব মিলিয়ে এলাকার অবস্থা থমথমে। মানুষ রয়েছেন আতঙ্কে। এই দুই প্রার্থী ছাড়া অন্যান্যদের পোস্টার দেখা গেলেও স্থানীয়রা জানান তাদের তেমন প্রচারণা নেই। এই দৃশ্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের।

মিরপুর-১১ এ ব্লকে যেতেই চোখে পড়ে ঠেলাগাড়ি মার্কার মিছিল। আশপাশে প্রচুর পোস্টার। এই প্রতীকে নির্বাচন করছেন আওয়ামী লীগের পল্লবী থানার  সহ-সভাপতি আব্দুর রউফ নান্নু। ব্লক এ ও বি এলাকায় মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে তার যুবক বয়সের কর্মীরা। স্থানীয়রা জানান,  নির্বাচনে ভোট চাওয়ার চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী যুবলীগের পল্লবী থানার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জুয়েল রানাকে ঠেকাতে ব্যস্ত তারা। মিরপুরের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের এই এলাকায় জুয়েল রানার টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীকের পোস্টার প্রায় নেই। তবে বাউনিয়াবাদ, কালশির দৃশ্য উল্টো। সেখানে ঝুলছে টিফিন ক্যারিয়ারের পোস্টার। পল্লবীর লালমাটিয়া আশপাশের এলাকায় মোড়ে মোড়ে জুয়েল রানার কর্মী-সমর্থকরা। জুয়েল রানাও ব্যস্ত। কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে ভোট চাচ্ছেন জনে জনে। স্থানীয়রা জানান, কদিন আগেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে আওয়ামী লীগের এই দুই প্রার্থীর মধ্যে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ২২শে জানুয়ারি দুপুরে মিল্লাত ক্যাম্প এলাকায়। কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ভোট চাইতে গেলে মুখোমুখি হয় দুই পক্ষ। এসময় নান্নুর কর্মীদের সশস্ত্র হামলায় গুরুতর আহত হন জুয়েল রানার কর্মী রমজান ও ইশারা খাতুন, রেহেনা, সালমাসহ ১০-১২ জন। এ ঘটনায় পল্লবী থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ইশারা খাতুন। হামলার সময় লাঞ্ছিত করা হয় জুয়েল রানাকেও।

জুয়েল রানা অভিযোগ করেন, মিরপুর-১১ এর এ ও বি ব্লক এলাকায় পোস্টার টানালেও ছিঁড়ে ফেলে নান্নুর লোকজন। ওই এলাকায় গণসংযোগ করতে গেলে সশস্ত্র হামলা চালায় তারা। সেদিন নান্নুর ভাই দুলু, লিটনের নেতৃত্বে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয়েছিলো বলে জানান তিনি। জুয়েল রানা বলেন, গত মাদক বিরোধী অভিযানে আত্মগোপনে ছিলেন নান্নু। বিতর্কিত এই প্রার্থীকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ জনগণ প্রত্যাখান করবে বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে, হামলার অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন আব্দুর রউফ নান্নু। তিনি দাবি করেন, জুয়েল রানার ওপর আমার লোকজন  হামলা চালায়নি। বরং জুয়েলের এলাকায় প্রচারণায় গেলে তার লোকজন আমার কর্মীদের ডিস্টার্ব করে। জুয়েলের ওপর হামলাটি তার ব্যক্তিগত শত্রুতার জের ধরে ঘটেছে বলে দাবি করেন তিনি।

তবে এ বিষয়ে জুয়েল বলেছেন, এভারে আর কোনো হামলা হলে এলাকাবাসীই সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করবে। এই ওয়ার্ডে কোনো সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করতে চাইলে সে যেই হোক তাকে ছাড় দেয়া হবে না।

এই ওয়ার্ডের ভোটার প্রায় ৭৫ হাজার। এখানে আছে প্রায় ১০টি বিহারী ক্যাম্প। বিহারী ভোটার প্রায় ২৫ হাজার। বিহারী ভোটে প্রভাব আছে দুই প্রার্থীরই। এখানে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন সাত জন। এরমধ্যে আনোয়ার হোসেন রনি নামে এক প্রার্থী যুবলীগ নেতা জুয়েল রানাকে সমর্থন দিয়ে সরে গেছেন। মাঠে আছেন ছয় জন। এরমধ্যে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আনোয়ার হোসেন। তিনি স্বেচ্ছাসেবক দলের পল্লবী থানার সাধারণ সম্পাদক। হিসেব অনুসারে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর ভোট ভাগাভাগি ও পেশি শক্তির প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকার কথা আনোয়ার হোসেনের। কিন্তু এখানে রয়েছেন বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী দলটির পল্লবী থানার সাধারণ সম্পাদক বুলবুল আহমদ মল্লিক। স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী ছাড়া অন্যদের উল্লেখযোগ্য প্রচারণা নেই। বিভিন্ন মামলায় জর্জরিত বিএনপির প্রার্থী রয়েছেন অর্থ ও কর্মী সঙ্কটে। মামলার কারণে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তার কর্মীরা। তাই সেভাবে প্রচারণাও চালাতে পারছেন না। এই ওয়ার্ডে নির্বাচন করছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী শুক্কুর আলী ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের রুহুল আমিন।

এই ওয়ার্ডে পরপর দুইবার কাউন্সিলর ছিলেন আব্দুর রউফ নান্নু। তিনি আওয়ামী লীগের উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচির ছোট ভাই। অন্যদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বি জুয়েল রানা স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লার আর্শীবাদপুষ্ট। সাধারণ ভোটারা জানান, কখনও সেভাবে ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চাইতেন না নান্নু। তেমন গণসংযোগও করতেন না তিনি। এবার তার ব্যতিক্রম। জুয়ের রানা প্রার্থী হওয়ায় হিসেব পাল্টে গেছে নান্নুর। আলোচনায় আসছে দু’প্রার্থীর পেশি শক্তি, সন্ত্রাস। এই অবস্থায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আতঙ্কে এলাকার বাসিন্দারা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status