বাংলারজমিন

‘মেয়েটার আশা ছেড়ে দিয়েছি, ছেলেটাকে বাঁচাতে চাই’

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

২৫ জানুয়ারি ২০২০, শনিবার, ৮:০৮ পূর্বাহ্ন

আল্লাহ আমাকে দু’টি সন্তান দিয়েছিলেন। থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ায় মেয়েটাকে আর বাঁচাতে পারবো না। কষ্টের চেয়ে আল্লাহপাক ওকে তাড়াতাড়ি যেন নিয়ে যায়। কিন্তু ছেলেটাকে বাঁচাতে চাই। সে এখনো চলাফেরা করতে পারছে। কিন্তু মাসে মাসে রক্ত দিতে হয়। ডাক্তার বলেছে, সিঙ্গাপুর নিয়ে অপারেশন করতে পারলে ও ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু সিঙ্গাপুর তো দূরের কথা, ঢাকায় নেয়ার মতো গাড়ি ভাড়াও আমার কাছে নেই। অসুস্থ ছেলে-মেয়ের চিকিৎসা ব্যয় বহনে এমন অসহায়ত্বের কথা জানিয়েছেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের মশিপুর গ্রামের হতদরিদ্র ভ্যানচালক আবদুল লতিফ। সম্প্রতি সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে তাদের ভর্তি করা হলেও চিকিৎসাব্যয় বহন করতে না পারায় বাড়িতে ফেরত নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আব্দুল লতিফ আরও বলেন, দুই শতক জায়গার ছোট্ট বাড়িতে একটি টিনের ঘরে স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে আমাদের সংসার ভালই চলছিল। প্রায় চার বছর আগে মেয়ে বর্ষা (১১) এবং ছেলে ওবায়দুল (৭) দু’জনেই থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। এরপর থেকে সন্তানদের চিকিৎসা করাতে সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেছি। প্রতিমাসে মাসে সন্তানদের রক্ত দিতে হচ্ছে। একবার রক্ত দিতে অনেক টাকা খরচ হয়। ভ্যানগাড়ি চালিয়ে টাকার যোগান দেয়া খুবই কষ্ট। বর্তমানে ঋণগ্রস্ত হয়ে গেছি। কিস্তির টাকা যোগাতে গিয়ে সংসার চালাতে পারছি না। প্রায় দু’বছর ধরে ছেলে-মেয়ের দু’বেলা খাবারও দিতে পারছি না। ভাল খাবারের অভাবে তাদের শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে শিশুদের মা আঞ্জুয়ারা খাতুন বলেন, ‘আমার বেটা-বেটিকে আপনারা বাঁচান। মেয়েটা খালি চাইয়া থাকে, কোনো কথা বলে না, ওর মুখের দিকে তাকাতে পারি না। কেন যে আল্লাহপাক আমাদের মত গরীব মানুষের ঘরে এ রকম কঠিন রোগ দিলো? আমাদের সব শেষ হইয়া গেছে- তাও ছেলে-মেয়ে সুস্থ হইলো না।’ শাহজাদপুরের দি বার্ড সেফটি হাউসের সভাপতি মামুন বিশ্বাস বলেন, দু’টি শিশুর মধ্যে বর্ষার অবস্থা ভালো নয়। চিকিৎসকরা ইতিমধ্যে আশা ছেড়ে দিয়েছেন। ভাল চিকিৎসা পেলে ছেলে ওবাইদুল হয়তো বাঁচবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কিছু টাকা সংগ্রহ করে শিশু দু’টির চিকিৎসার জন্য দিয়েছিলাম। কিন্তু তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। দানশীল ব্যক্তিরা যদি এগিয়ে আসেন হয়তোবা ছেলেটিকে বাঁচানো সম্ভব। স্থানীয় গাড়াদহ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম জানান, আব্দুল লতিফ খুব পরিশ্রমী। দুই সন্তানের চিকিৎসা ব্যয় যোগাতে তিনি এখন নিঃস্ব। চিকিৎসা করানোর মতো সাধ্য নেই। এ কারণে পরিবারটি শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের মেডিক্যাল অফিসার ডা. সুমনা লায়লা জানান, থ্যালাসেমিয়ার একমাত্র চিকিৎসা মাসে মাসে রক্ত দিতে হবে। এ রোগের কারণে লিভার বড় হয়ে যেতে পারে। লিভার বড় হয়ে গেলে সেটা অপারেশনের মাধ্যমে কেটে ফেলতে হয় এবং লিভার ট্রান্সমিশন করাতে হয়। যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কেউ সাহায্য পাঠাতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন। বাবা আব্দুল লতিফ ও মা আঞ্জুয়ারা- ০১৩০৮০৭২১৭৫ (বিকাশ-পার্সোনাল)।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status