দেশ বিদেশ
আইসিজের রায় মানতে বাধ্য মিয়ানমার
‘গণহত্যা’র বিচারে স্বতন্ত্র আদালত গঠনের প্রস্তাব জাতিসংঘ দূতের
কূটনৈতিক রিপোর্টার
২৪ জানুয়ারি ২০২০, শুক্রবার, ৮:৫৫ পূর্বাহ্ন
মিয়ানমারের মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ের ইয়াংহি লি রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার জন্য মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বিচারের সুপারিশ করবেন। ওই বিচারের জন্য তিনি জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলে জমা দেয়া প্রতিবেদনে একটি অন্তর্বর্তীকালীন আন্তর্জাতিক আদালত গঠনের প্রস্তাবও দেবেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা সফরের সমাপনী সংবাদ সম্মেলনে লি এ তথ্য জানান। আগামী মার্চে জাতিসংঘের ম্যান্ডেট শেষ হতে যাওয়া লি’র এটাই বাংলাদেশে শেষ সফর। গণহত্যাসহ সব ধরনের নিপীড়নের হাত থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষায় অন্তবর্তী ব্যবস্থার বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) রায় ঘোষণার অল্প আগে অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে লি বলেন, অল্প ক’ঘন্টার মধ্যেই আদালতের আদেশ পাওয়া যাবে। আমি এ নিয়ে আগাম কোন মন্তব্য করতে পারি না। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিয়ানমার সরকারের দীর্ঘ কয়েক দশকের জাতিগত বৈষম্য ও নিপীড়ন এবং ২০১৭ সালের সেনা অভিযানের পটভূমিতে গাম্বিয়া তাদের সুরক্ষার আবেদন করেছে। আইসিজে এ নিয়ে যে আদেশই দিক না কেন তা অবশ্যই সব পক্ষকে মানতে বাধ্য। মিয়ানমার যেনো তার দায় এড়াতে না পারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সে বিষয়ে সজাগ থাকার আহ্বানও জানান তিনি। জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ের হিসেবে লি ছয় বছর ধরে কাজ করছেন। তিনি মিয়ানমার বিষয়ক র্যাপোর্টিয়ার হলেও বর্মী সরকার দেশটিতে তাকে ঢুকতে দেয় না প্রায় দু’বছর ধরে। ফলে তিনি থাইল্যান্ড এবং বাংলাদেশ সফর করে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে মিয়ানমার পরিস্থিতির আপডেট নেয়ার চেষ্টা করেন। সে কারণেই ওই দুই দেশে তিনি বছরে অন্তত একবার কোন কোন বছর দু’বারও সফর করেছেন। ঢাকায় তার এবারের সর্বশেষ সফরে সরকারি, বেসরকারি এবং আন্তর্জাতিক অংশীজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। কক্সবাজারে দুই দিন কাটিয়ে রোহিঙ্গাদের অবস্থা এবং মনোভাব বুঝেছেন। ঢাকা ছাড়ার আগে তিনি গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তার সফরের বিস্তারিত তুলে ধরেন। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর চলানো বর্মী বর্বরতাকে ‘সম্ভাব্য গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করে লি বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার বিচারে একটি অন্তবর্তীকালীন আন্তর্জাতিক আদালত গঠন করা উচিত। এই আদালতের পরিসর ও কাজের পরিধি কেমন হবে সেটি মার্চে মানবাধিকার কাউন্সিলে বিস্তারিত তিনি উল্লেখ করবেন জানিয়ে বলেন, সিয়েরালিওন, রুয়ান্ডা বা বসনিয়া হার্জেগোভিনায় যেভাবে গণহত্যার বিচার হয়েছে, এ ক্ষেত্রেও একই ধরনের সুপারিশ করব আমি। তবে এটি অন্য আদালত যেমন আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) কিংবা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সম্পূরক হিসেবে কাজ করবে না। এটি হতে হবে স্বতন্ত্র। গত ৬ বছরে চার দফা বাংলাদেশ সফরে আসা লি বলেন, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে আমি মিয়ানমার যেতে পারছি না। এর আগে জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ের হিসেবে দু’বার দেশটিতে গিয়েছিলেন। মিয়ানমারে তাকে ঢুকতে না দেয়াকে হতাশাজনক বলে উল্লেখ করেন তিনি। উল্লেখ্য, লি’র বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে মিয়ানমার ২০১৮ সালে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে তাকে বাদ দেয়ার আবেদন করে। যদিও মিয়ানমারের ওই আবেদন আমলে নেয়নি। স্বাভাবিক নিয়মেই মার্চে তার মিশন শেষ হচ্ছে। ইয়াংহি লি বলেন, আমার ৬ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছি মিয়ানমারে সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের ওপর হত্যা, ধর্ষণসহ নানা নৃশংসতার মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যার মত মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটছে। নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেও জেনেছি মিয়ানমারের সেনা সদস্য এবং নিরাপত্তা বাহিনী কীভাবে রোহিঙ্গাদের ওপর ধর্ষণ, নিপীড়ন, নির্যাতন এবং হত্যা চালিয়েছে। এসব নৃশংসতার বিচার পাওয়ার মতো পরিবেশ মিয়ানমারে নেই। মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলা উচিত, এ জন্য আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে উদ্যোগী হতে হবে। ইয়াংহি লি জানান, জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান মিশন যে প্রতিবেদন দিয়েছে তা বাস্তবায়নের জন্য মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রতিবেদনে তিনি জোরালো সুপারিশ করবেন। আগের রিপোর্টে সত্য উঠে এসেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য মিয়ানমারকে জবাবদিহির আওতায় আনতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে উদ্যোগ নিতে বলবো। নিরাপত্তা পরিষদে চীন এবং রাশিয়া মিয়ানমারকে যেভাবে সমর্থন জানাচ্ছে তা লজ্জাজনক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।