এক্সক্লুসিভ

ব্যাঙ্গালুরুতে ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ থাকার অভিযোগে শতাধিক বাড়ি ধ্বংস করলো পুলিশ

মানবজমিন ডেস্ক

২১ জানুয়ারি ২০২০, মঙ্গলবার, ৮:১৭ পূর্বাহ্ন

ভারতের ব্যাঙ্গালুরুর বেলান্দুর শহরতলীর শতাধিক অস্থায়ী বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে শতাধিক পরিবারকে। রোববার করিয়াম্মা আগ্রাহারা হাউজিংয়ে অবস্থিত ছাউনিগুলো পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ গুঁড়িয়ে দিয়েছে। পুলিশের দাবি সেখানে ‘অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী’রা থাকতো। জমির মালিককে আগেভাগেই জায়গাটুকু খালি করার নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। তবে অধিকারকর্মীরা বলছেন, ওই অস্থায়ী বাড়িগুলোতে বসবাসরত মানুষেরা কর্ণাটকের বিভিন্ন অংশ এবং দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে আগত। তারা এলাকায় গৃহকর্মী, নির্মাণ শ্রমিক ও প্রহরী হিসেবে কাজ করতো। ব্যাঙ্গালুরুতে অবকাঠামোগত সংস্কারের দায়িত্বে থাকা প্রশাসনিক বিভাগ ব্রুহাট ব্যাঙ্গালুরু মহানগর পালিক (বিবিএমপি) এই অভিযানের নির্দেশ দেয়। অভিযানটির তীব্র নিন্দা জানিয়ে অ্যাডভোকেট ও অধিকারকর্মী বিনয় শ্রীনিবাস বলেন, রোববার করিয়াম্মা আগ্রাহারায় দুই শতাধিক বাড়ি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। সাদা পোশাকের লোকজন এসে বাড়িঘর ভাঙার কাজ করেছে। তারা নিজেদের মারাঠাহালি পুলিশ বিভাগের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়েছে। দাবি করেছে, বিবিএমপি কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার খাতিরে তারা সেখানে গেছে। যদিও, সেখানকার আশেপাশেও কোনো বিবিএমপি কর্মকর্তা উপস্থিত ছিল না। শ্রীনিবাস বলেন, এই পদক্ষেপের পেছনে কারণ জানতে চাইলে তারা জানায় যে, সেখানে অবৈধ বাংলাদেশিরা বাস করে তাই এমনটি করা হচ্ছে। তাদের এ কাজের জন্য পরোয়ানা নিয়ে আসার কথা বলার পরে তারা কাজ থামায়। যদি সেখানে অবৈধ বাংলাদেশিরা থাকে তাহলে পুলিশের আগে তাদের চিহ্নিত করতে হবে ও পরে অ্যাকশন নিতে হবে। এজন্য এতগুলো বাড়ি কেন ধ্বংস করার প্রয়োজন পড়লো। এদিকে, এ বিষয়ে বিবিএমপি ও পুলিশের পৃষ্ঠা ১৭ কলাম ৪
কাছে যোগাযোগ করা হলে তারা মন্তব্য করতে অস্বীকৃতী জানায়।
প্রসঙ্গত, গত ১১ই জানুয়ারি মারাঠাহালি পুলিশ থানা থেকে করিয়াম্মা আগ্রাহারা থেকে লোকজন সরাতে হাউজিংয়ের মালিক চেতন বাবুকে নোটিশ পাঠান। তাতে পুলিশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন পোস্ট ও ভিডিওর উদ্ধৃতি টানে। সেগুলোতে দাবি করা হয়েছিল যে, ওই জায়গায় অবৈধ বাংলাদেশিরা বসতি গড়েছে। চেতন বাবুকে পাঠানো নোটিশে, সেখান থেকে লোকজনকে সরিয়ে অস্থায়ী ঘরগুলো ধ্বংস করার নির্দেশ দেয় পুলিশ।
চেতন বলেন, এই ছাউনিতে কেবল দেশি মানুষরাই থাকেন। এরা কর্ণাটকের উত্তরাঞ্চল, ভারতের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে এসেছে। তাদের সবার কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আছে। কিন্তু যেহেতু পুলিশ নোটিশ দিয়েছে, আমরা তাদের সরিয়ে দিয়েছি।
এদিকে, উচ্ছেদ হওয়া বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন যে, তাদের কোনো কিছু না জানিয়েই, জোর করে ঘর থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এমন একজন বাসিন্দা কুমার দাস বলেন, আমরা ভারতীয়, আমাদের কাছে কাগজপত্র আছে। পুলিশ আগেভাগে কোনো নোটিশ ছাড়াই এসে আমাদের ঘর গুঁড়িয়ে দিল। এখানে আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও উত্তর কর্ণাটকের অনেক মানুষ থাকে।
উল্লেখ্য, ১২ই জানুয়ারি মহাদেবপুরের ক্ষমতাসীন বিজেপি এমএলএ অরবিন্দ লিম্বাভালি এক টুইটে লিখেন, অবৈধ বাংলাদেশিরা এলাকায় এসে বসতি গড়েছে। তিনি লিখেন, করিমিয়া আগ্রাহারায় অবৈধভাবে নির্মিত ছাউনিতে কয়েকজন আশ্রয় নিয়েছে। এটা আমাদের আসনের আওতায় পড়ে। এসব ছাউনিতে অবৈধ কার্যক্রম চলে। অপরিচ্ছন্নতার কারণে সেখানকার পরিবেশ নোংরা হচ্ছে, তাই ওই এলাকা অবৈধ কার্যক্রমের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। তিনি আরো লিখেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবাদে এটা আমার নজরে এসেছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। কর্মকর্তারা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন ও পদক্ষেপ নিচ্ছেন। অন্যান্য এলাকার মানুষেরা এখানে বসতি গড়েছে। এদের মধ্যে কয়েকন অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status