শেষের পাতা

শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমা

আমিন

এম.এ হায়দার সরকার, টঙ্গী থেকে

২০ জানুয়ারি ২০২০, সোমবার, ৯:২৭ পূর্বাহ্ন

হে আল্লাহ, আমাদের ইমানী জিন্দেগি নসিব করে দেন। ইমানের সঙ্গে মউত নসিব করে দেন। হে আল্লাহ, সারা জীবন যেন আপনার হাবিবের সুন্নতের উপর চলতে পারি সেই তৌফিক দান করেন। নাফরমানি থেকে আমাদেরকে হেফাজত করেন। হে আল্লাহ, অন্তরের সব খারাবি দূর করে দেন। দাওয়াতের কাজকে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেন। সব ধরনের ফেতনা থেকে আমাদের হেফাজত করেন। দুনিয়া-আখেরাতের কল্যাণ, মুক্তি কামনা ও বিশ্ব শান্তির জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্যে চেয়ে শেষ হলো তাবলীগ জামাতের দুই র্পবের বিশ্ব ইজতেমা। টঙ্গী তুরাগ নদীর তীরের এই জমায়েতে লাখো মুসল্লি মোনাজাতে অংশ নেন। দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাযের মুরব্বি মাওলানা জামশেদ। সকাল সাড়ে আটটার দিকে হেদায়েতি বয়ান শুর করেন মাওলানা জামশেদ। বয়ান শেষে সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে শুরু হয় আখেরি মোনাজাত। মোনাজাত শুরর সঙ্গে সঙ্গেই হঠাৎ নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। যে যেখানে ছিলেন, সেখানেই দাঁড়িয়ে কিংবা বসে হাত তোলেন আল্লাহর দরবারে। কান্নায় বুক ভাসান মুসল্লিরা। মোনাজাতের আগে বিশ্বব্যাপী তাবলীগ জামাতের সাথীদের উদ্দেশ্যে হেদায়েতি বয়ান পেশ করেন তিনি।

মোনাজাতে মাওলানা জামশেদ আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে দ্বীনের ওপর সবাই যেন চলতে পারে সে দোয়া করেন। এছাড়া দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে অশ্রুসিক্ত মুসল্লিরা নিজের গুনাহ মুক্তি চেয়ে মহান আল্লার কাছে ফরিয়াদ করেন। প্রায় ১৭ মিনিটের মোনাজাতে মাওলানা জামশেদ প্রথম পাঁচ মিনিট পবিত্র কোরআনে বর্ণিত দোয়ার আয়াতগুলো উচ্চারণ করেন। শেষের দিকে দোয়া করেন উর্দু ভাষায়। মুঠোফোন ও স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের সুবাদে দেশ-বিদেশের লাখো মানুষ একসঙ্গে হাত তোলেন দোয়ায় শরিক হন। এর আগে ভোর থেকে শুর হয় দিক-নির্দেশনামূলক বয়ান। শীর্ষস্থানীয় অনেক আলেম ইসলামের পথে সঠিকভাবে চলার জন্য মুসল্লিদের উদ্দেশ্য বয়ান দেন। তাবলিগ জামাতের আয়োজনে মুসলমানদের অন্যতম আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে শনিবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেন ধর্মপান মুসল্লিরা। আর গতকাল ভোরে শীতকে উপেক্ষা করে রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকার লোকজন রওনা হয় ইজতেমা ময়দানের দিকে। তবে প্রথম পর্বের তুলনায় দ্বিতীয় পর্বে মসিল্লির উপস্থিতি ছিল অনেক কম। ইজতেমাস্থলে প্যান্ডেলের ভিতরে পর্যাপ্ত খালি জায়গা থাকা সত্যেও মুসল্লিরা ময়দানে না গিয়ে অনেক মুসল্লি আখেরি মোনাজাতের জন্য রাস্তায় খবরের কাগজ, পাটি ও পলিথিন বিছিয়ে ময়দানের আশপাশে সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কোথাও কোথাও অবস্থান নিতে দেখা গেছে। নানা বয়সী বিভিন্ন পেশার মানুষের পাশাপাশি মহিলাদের মোনাজাতে অংশ নিতে দেখা যায়।

বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতে ৪-৫ লাখ মুসল্লি অংশ নেন। এছাড়া বিশ্বের ৫১টি দেশের ২ হাজার ৪১০ জন মেহমানও ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেন।
বিদেশি মেহমান: ইজতেমার দ্বিতীয়পর্বের আয়োজক কমিটির মুরব্বি প্রকৌশলী শাহ মো. মুহিবুল্লাহ জানান, আরবি ভাষাভাষী ৯৯ জন, উর্দু ভাষাভাষী ১ হাজার ৪০ জন, ইংরেজি ভাষাভাষী ১ হাজার ১৭২ জনসহ ৫৯টি দেশের তাবলিগ জামাতের ৩ হাজার ৪২৪ জন বিদেশি মেহমান দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় অংশ নেন। তবে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সোমালিয়া, ইরান, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও অস্ট্রেলিয়া থেকে অধিক পরিমাণ মেহমান এসেছেন বলে তিনি জানিয়েছে।

৯ মুসল্লির মৃত্যু: ইজতেমা ময়দানে শনিবার বিকেল থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত আরও দুই মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে।

তারা হলেন- নোয়াখালী জেলার হাতিয়া থানার আজিমনগর গ্রামের মৃত-মফিজুল ইসলামের ছেলে মনির উদ্দিন (৪০) ও গাইবান্দা জেলার গোবিন্দপুর থানার চাঁদপাড়া গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে শাহ আলম (৫৫) মারা গেছেন। এছাড়াও রংপুর জেলার পীরগঞ্জ থানার উসমানপুর গ্রামের মৃত. হাজী জয়নাল উদ্দিনের ছেলে হুমায়ুন কবির (৬৫), ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কালাহাট গোপালপুর গ্রামের আফম জহুরুল আলম (৬২), ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানার নলভোগ এলাকার ফজলু মিয়ার ছেলে ইলিয়াস মিয়া (৮৫), গাইবান্দা জেলার সাঘাটা থানার কামালেরপাড়া গ্রামের আলহাজ্ব মো. আবুল কাশেমের ছেলে আলহাজ্ব মো. আব্দুস সোবহান (৮০)।

এর আগে সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারা বাজার থানার চানপুর লক্ষ্মীপুর গ্রামের মৃত হযরত আলীর ছেলে কাজী আলাউদ্দিন (৬৫), নরসিংদী জেলার বেলাব থানার বিরবাঘরের চন্দনপুর গ্রামের মৃত: আব্দুর রহমানের ছেলে সুরুজ মিয়া (৬০) ও গাইবান্ধা জেলার ফুলছরি থানার টেংরাকান্দি গ্রামের রমজান আলীর ছেলে গোলজার হোসেন (৪০) মারা যান। এনিয়ে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে ৯ জন মুসল্লির মৃত্যু হলো। ময়দানের জিম্মাদার রফিকুল ইসলাম এতথ্য নিশ্চিত করেন। এনিয়ে ময়দানে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে ৯ জন মুসল্লির মৃত্যু হলো।

সা’দ অনুসারিদের ইজতেমার তারিখ ঘোষণা : আখেরি মোনাজাত শেষে মাওলানা সা’দ কান্ধলভী অনুসারীদের ইজতেমার তারিখও ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির এ অংশের মুরুব্বি হারুন-অর-রশিদ জানান, আমরা আগামীতে দুইপর্বে ইজতেমা পালন করবো। বিশ্ব ইজতেমার প্রথমপর্ব আগামী ২৫, ২৬ ও ২৭ ডিসেম্বর-২০২০ইং মাঝে চারদিন বিরতি দিয়ে ১, ২ ও ৩ জানুয়ারি-২০২১ইং অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে চলতি বছরের ১৩-১৭ নভেম্বর টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানের পাঁচ দিনব্যাপী জোড় অনুষ্ঠিত হবে।

২০২১ সালে ওলামা-মাশায়েকদের দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমার ঘোষণা : আগামী ২০২১ সালে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বিশ্ব ইজতেমা শূরায়ী নেজামের বিশ্ব ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। আখেরি মোনাজাতের পরপরই বয়ান মঞ্চের মাইকে তা ঘোষণা করা হয়। আগামী ৮, ৯, ১০ই জানুয়ারি প্রথমপর্ব মাঝে ৪দিন বিরতি দিয়ে ১৫, ১৬, ১৭ই জানুয়ারি-২০২১ইং দুইধাপে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২৭শে নভেম্বর থেকে ১লা ডিসেম্বর-২০২০ শূরায়ী নেজামের পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status